রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ভারতের মণিপুর। সেখানে সাতজন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য আহত হয়েছেন। দেশটির এ রাজ্যটি বছরের শুরুতে আবারও অশান্ত হয়ে উঠেছে।
মোরেহ জেলায় ব্যারাকে ঢুকে পুলিশ বাহিনীকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় এক সশস্ত্র দুষ্কৃতী। এ সময় আহত হয়েছেন সাতজন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য। তাদের মধ্যে চারজন মণিপুরের পুলিশ কর্মী, একজন বিএসএফ জওয়ান। ওই বিএসএফ জওয়ানের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহতদের কপ্টারে করে মণিপুরের রাজধানী ইম্ফলে চিকিৎসার জন্য আনা হয়েছে। আরআইএমএস (রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্স) হাসপাতালে ভর্তি আছে তারা।
মণিপুর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহ জানিয়েছেন, বিদেশ থেকে আসা আততায়ীরাই এসব করেছে। তাদের ধরতে চিরুনি তল্লাশি চলছে। তার কথায়, ‘‘আমাদের সন্দেহ মায়ানমার থেকে আসা ভাড়াটে আততায়ীরা এসব করেছে। আমরা কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার করব না। রাজ্য এবং দেশবাসীর কাছে আমরা এ বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’’জঙ্গিদের দমন করতে সব রকম পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বছরের প্রথম দিনেই থৌবল জেলার লিলং এলাকায় তিনজনকে গুলি করে খুন করা হয়েছে। আহত হয়েছেন পাঁচজন। নিরাপত্তা কর্মকর্তারা সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে এ খবর জানিয়েছেন। অভিযুক্তেরা ফৌজির পোশাকে ছিলেন। তারা লিলংয়ে সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে গুলি চালাতে শুরু করেন। তাতেই তাদের মৃত্যু হয়। তারপরেই মণিপুরের ইম্ফল পূর্ব, ইম্ফল থৌবল, কাকচিং, বিষ্ণুপুর জেলায় কারফিউ জারি করা হয়। এই পরিস্থিতিতে মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহ নাগরিকদের সংযত হওয়ার আবেদন জানান। মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডেকেছেন তিনি। ভিডিও বার্তায় বীরেন জানান, এই ঘটনাকে হালকাভাবে নেওয়া হচ্ছে না। দোষীদের ধরতে উদ্যোগী হয়েছে মণিপুর পুলিশ। আইন মেনে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। লিলংবাসীদের হিংসা থেকে দূরে থাকারও আর্জি জানিয়েছেন তিনি।
২০২২ সালের ৩ মে ছাত্র সংগঠন ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ মণিপুর’ (এটিএসইউএম)-এর কর্মসূচি ঘিরে অশান্তির সূত্রপাত হয়েছিল মণিপুরে। মণিপুর হাইকোর্ট মেইতেইদের তফসিলি জনজাতির মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারকে বিবেচনা করার নির্দেশ দেয়। এরপরেই জনজাতি সংগঠনগুলো তার বিরোধিতায় পথে নামে। আর সেই ঘটনা থেকেই মণিপুরের আদি বাসিন্দা হিন্দু ধর্মাবলম্বী মেইতেই জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কুকি জো-সহ কয়েকটি তফসিলি জনজাতি সম্প্রদায়ের (যাদের অধিকাংশই খ্রিস্টান) সংঘাতের সূচনা হয়েছিল। অশান্তি ঠেকাতে গত ৬ মে মণিপুরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব কাধে তুলে নিয়েছিল নরেন্দ্র মোদি সরকার। নামানো হয় সেনা এবং আসম রাইফেলসকে। তারপরেও হিংসা থামেনি। এখনও পর্যন্ত সে রাজ্যে নিহত হয়েছে অন্তত ১৭০ জন। আহত হয়েছে হাজারেরও বেশি। ঘরছাড়া হয়েছেন ৬০ হাজারের বেশি মানুষ।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)