শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে করা মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পহেলা জানুয়ারি এই রায় প্রদান করেন আদালত। নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদের রায়ের বিষয়ে মন্তব্য করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
বুধবার নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এ বিষয়ে কথা বলেন মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।
ড. ইউনূসের রায় নিয়ে মন্তব্য জানতে চাওয়া হলে মিলার বলেন, মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার এবং অন্যান্য অনেক আন্তর্জাতিক সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। আমরা তার বিরুদ্ধে মামলাটি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র বলেন, আমরা রায়ের ব্যাপক আন্তর্জাতিক সমালোচনা লক্ষ্য করেছি। আমাদের পক্ষ থেকে, আমরা বাংলাদেশ সরকারকে একটি ন্যায্য ও স্বচ্ছ আইনি প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার জন্য উৎসাহিত করেছি। এ বিষয়ের বিভিন্ন উন্নয়ন ঘনিষ্ঠভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে।
আরেক প্রশ্নে বলা হয়- এই সপ্তাহান্তে বাংলাদেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে অনেক ডামি প্রার্থী রয়েছে। মার্কিন সরকার কি এমন ডামি নির্বাচনকে বৈধতা দেবে? যদি না হয়, বাইডেন প্রশাসন এর বিরুদ্ধে কী কোনো ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা বিবেচনা করছে? এক শিরোনামে বিবিসি জানিয়েছে, 'বাংলাদেশ: নির্বাচন এক নারীর শোতে পরিণত হয়েছে'।
এই প্রশ্নের জবাবে মিলার বলেন, আমি মনে করি আমি আগে এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। কিন্তু এটি একটি নতুন বছর তাই আমি আবার উত্তর দেব। আমরা বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে সমর্থন করি। আমরা এটি বেশ কয়েকবার পরিষ্কার করেছি। আমরা নির্বাচনকে খুব কাছ থেকে দেখব। তবে পরবর্তীতে কোন ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হবে সে বিষয়ে এখন অনুমান করব না।
পহেলা জানুয়ারি ড. ইউনূসের রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, আসামিপক্ষ এক নম্বর আসামির বিষয়ে প্রশংসাসূচক বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। যেখানে তাকে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই করা নোবেলজয়ী আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব বলা হয়েছে। কিন্তু আদালতে নোবেলজয়ী ইউনূসের বিচার হচ্ছে না, গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান হিসেবে বিচার হচ্ছে। ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে রায় ঘোষণার সময় বলেন আদালত।
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদফতরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন। যেখানে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে নির্দিষ্ট লভ্যাংশ জমা না দেওয়া, শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী না করা, গণছুটি নগদায়ন না করায় শ্রম আইনের ৪-এর ৭, ৮, ১১৭ ও ২৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়।
মামলার অপর আসামিরা হলেন- গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান এবং দুই পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহান।
গত ২৪ ডিসেম্বর শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে করা মামলাটিতে ড. ইউনূসসহ চারজনের পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। একইসঙ্গে এই মামলায় রায় ঘোষণার জন্য ১ জানুয়ারি দিন ধার্য করা হয়। সেদিন রাত ৮টা ২০ মিনিটে ঢাকার শ্রম আদালতের বিচারক শেখ মেরিনা সুলতানার রায় ঘোষণার জন্য এ দিন ধার্য করেন।
আদালতে ড. ইউনূসের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান ও মো. হায়দার আলী। সেদিন টানা ৮ ঘণ্টা পক্ষে-বিপক্ষে শুনানি হয়। শুনানিতে আদালতে ড. ইউনূসসহ আসামিদের খালাসের আর্জি জানিয়েছেন তার আইনজীবী। অন্যদিকে ড. ইউনূসসহ আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আর্জি জানান কলকারখানা অধিদফতরের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)