শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
গাজা উপত্যকায় সামরিক অভিযান বন্ধে ইসরায়েলকে চাপ দিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের চেয়ারম্যান ও রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়া।
বর্তমানে এক সরকারি সফরে মধ্যপ্রাচ্যে রয়েছেন ব্লিনকেন। শুক্রবার তুরস্কে পৌঁছেছেন তিনি। সেখান থেকে ইসরায়েল, পশ্চিম তীর এবং মধ্যপ্রাচ্যের উপসাগরীয় অঞ্চলের কয়েকটি দেশ সফরের কথা রয়েছে তার।
হানিয়ার মতে, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনী গত তিন মাস ধরে যে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে, তা বন্ধে বর্তমান এই সফরকে কাজে লাগাতে পারেন ব্লিনকেন। শুক্রবার এক ভিডিওবার্তায় হামাসপ্রধান বলেন, ‘গত তিন মাস ধরে ইসরায়েল যেভাবে গাজা উপত্যকায় বোমা বর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে, আমাদের ধারণা, ইসরায়েলের মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্ট ধারণা পেয়ে গেছে।’
‘এবং গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী যে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ এবং প্রাণহানি ঘটিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ব্যতীত তা সম্ভব হতো না।’
‘আমরা আশা করছি, গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান বন্ধ হওয়া এবং ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড থেকে দখলমুক্ত করা— চলতি সফরে এ ইস্যুতে তিনি (ব্লিনকেন) মনোযোগ দেবেন। আমরা আরও আশা করছি, মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক নেতারা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে এ ব্যাপারটি বোঝাতে সমর্থ হবেন যে, মধ্যপ্রাচ্যের জন্য ফিলিস্তিন কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা নির্ভর করছে ফিলিস্তিন ইস্যুর ওপর।’
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্তে হামাস যোদ্ধারা অতর্কিত হামলা চালানোর পর ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী। ২৮ অক্টোবর থেকে অভিযানে যোগ দেয় স্থলবাহিনীও।
ইসরায়েলি বাহিনীর টানা দেড় মাসের অভিযানে কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা উপত্যকা, নিহত হয়েছেন ২২ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। এই নিহতদের ৭০ শতাংশই নারী, শিশু, অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোর-কিশোরী এবং বয়স্ক লোকজন। তার মধ্যে গত শনিবার নিহত হয়েছেন ১২০ জন।
আহত হয়েছেন আরও ৫৪ হাজার ৯৬৮ জন এবং এখনও নিখোঁজ রয়েছেন ৭ হাজার জন। এছাড়া হাজার হাজার পরিবার বাড়িঘর-সহায় সম্বল হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন বিভিন্ন স্কুল, সরকারি প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল প্রাঙ্গণে। জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী ইসরায়েলি বাহিনীর গত ৩ মাসের অভিযানে নিহত বাস্তুহারা হয়েছেন অন্তত ২৩ লাখ ফিলিস্তিনি।
অন্যদিকে, হামাসের গত ৭ অক্টোবরের হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছিলেন ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিক। পাশাপাশি, ইসরায়েলের ভূখণ্ড থেকে ২৪২ জন ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিককে সেদিন জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যান হামাস যোদ্ধারা। তাদের মধ্যে এখনও মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছেন ১২৯ জন জিম্মি।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাসকে সম্পূর্ণ ধ্বংস এবং গাজাকে পরিপূর্নভাবে নিরস্ত্রীকরণ করার আগ পর্যন্ত এই যুদ্ধ চলবে।
এই যুদ্ধের শুরু থেকেই ইসরায়েলকে সামরিক, রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও গোয়েন্দা সহায়তা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)