বুধবার, ১৩ আগস্ট ২০২৫, ২৯ শ্রাবণ ১৪৩২
ছবি সংগৃহীত
বয়স ও উচ্চতার চেয়ে শারীরিক ওজন যখন বেশি হয় তখন তাকে স্থূলতা বলে। বর্তমানে শৈশবেই শিশুরা স্থূলতার শিকার হচ্ছে। যার হার ক্রমবর্ধমান। প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে কয়েক লক্ষ শিশুর মধ্যে স্থূলতা দেখা যাচ্ছে। যা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ এর জেরেই পরবর্তীতে নানা শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়।
ছোটবেলার অতিরিক্ত ওজন পরবর্তীতে টাইপ ২ ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এমনকি কোলোরেক্টাল ক্যানসার (কোলন ক্যানসার) হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, শৈশবের স্থূলতা শরীরে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে প্রদাহ ও অন্ত্রের স্বাস্থ্যের পরিবর্তন।
শৈশবের স্থূলতা কী?
শৈশবের স্থূলতা বলতে মোটা দেখতে শিশুদের কথা বোঝানো হয়েছে ব্যাপারটা এমন নয়। এটি এমন একটি চিকিৎসাগত অবস্থা যেখানে শিশুর ওজন তার বয়স, উচ্চতা এবং লিঙ্গভিত্তিক পরিচয়ের জন্য স্বাস্থ্যকর ওজনের তুলনায় অনেক বেশি। শিশুদের BMI নির্ধারণ করা হয় বয়স এবং লিঙ্গ বিবেচনা করে বৃদ্ধির চার্টের সঙ্গে তুলনা করে।
দ্বিতীয় শ্রেণির স্থূলতা:
যখন একটি শিশুর BMI ৯৫ শতাংশের ১২০% থেকে ১৪০% এর মধ্যে থাকে, অথবা ৩৫ থেকে ৪০ কেজি/বর্গমিটারের মধ্যে থাকে তখন তাকে দ্বিতীয় শ্রেণির স্থূলতা ধরা হয়। সহজ কথায়, এসব শিশুর ওজন তাদের উচ্চতা ও বয়সের জন্য স্বাস্থ্যকর ওজনের চেয়ে অনেক বেশি।
তৃতীয় শ্রেণির স্থূলতা:
এটি সবচেয়ে গুরুতর স্তর, যেখানে BMI ৯৫ শতাংশের ১৪০% এর বেশি বা ৪০ কেজি/বর্গমিটারের বেশি। শৈশব ও প্রাপ্তবয়স্ক উভয় ক্ষেত্রেই এই শ্রেণির স্থূলতা গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ায়।
অতিরিক্ত ওজন ও শারীরিক জটিলতার সম্পর্ক:
শৈশবের অতিরিক্ত ওজন হৃদযন্ত্র, ফুসফুস থেকে শুরু করে লিভার, হাড় প্রায় প্রতিটি অঙ্গকে প্রভাবিত করে। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা না পড়লে এটি আজীবন স্বাস্থ্য সমস্যার ক্ষেত্র তৈরি করতে পারে।
শৈশবের স্থূলতার সঙ্গে কোলন ক্যানসারের সম্পর্ক:
আগে সাধারণত ৫০ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে কোলন ক্যানসার বেশি দেখা যেত। তবে বর্তমানে তরুণরাও এই ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন। সম্প্রতি এক মার্কিন গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব ছেলেরা জীবনের প্রথম দিকে স্থূলকায় ছিল তাদের প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে কোলন ক্যানসার ৩৯% বেশি। এর সঙ্গে পরবর্তীতে মলদ্বারের ক্যানসার হওয়ার আরও জোরালো সম্পর্ক ছিল। নারীদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি বেশি ১৯%। ৪৭ লক্ষেরও বেশি অংশগ্রহণকারীর ওপর এই গবেষণা চালানো হয়।
গবেষকদের মতে, স্থূলতার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবের কারণে দীর্ঘস্থায়ী নিম্ন-গ্রেড প্রদাহ, উচ্চ ইনসুলিনের মাত্রা এবং অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার পরিবর্তন হতে পারে। যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্যানসারের বৃদ্ধিকে উস্কে দিতে পারে।
অভিভাবকদের করণীয়:
যেহেতু স্থূলতার সঙ্গে কোলন ক্যানসারের যোগসূত্র রয়েছে, তাই দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে অভিভাবকদের উচিত ছোটবেলা থেকেই পদক্ষেপ নেওয়া। শিশুর স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন। ফাস্ট ফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার, রেড মিটের পরিমাণ কমান। খাদ্যতালিকায় যোগ করুন শাকসবজি, ফল ও ফাইবারযুক্ত খাবার। সেসঙ্গে ছোটবেলা থেকেই শিশুর শারীরিক ক্রিয়াকলাপ বা ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। স্ক্রিন টাইম কমিয়ে আনুন। হাঁটাচলা, দৌড়ানো, ফুটবল, ভলিবল, দড়ি লাফের মতো খেলাধুলায় উৎসাহ দিন।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)