শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
জন্মের পরপরই অনেক শিশুর জন্ডিসের লক্ষণ দেখা দেয়। সদ্যোজাতের জন্ডিস ধরা পড়লে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে বাবা-মা। শিশু বিশেষজ্ঞদের মতে, নবজাতকের শরীরে বিলিরুবিনের মাত্রা বেশি হয়ে জন্ডিসের লক্ষণ দেখা দেয়। এই সমস্যা হলে শিশুর শরীর ও চোখ হলুদ হয়ে যায়। অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দুর্বল হয়ে পড়ে। এসময় শিশুকে নীল আলোর নিচে রাখেন চিকিৎসকরা।
নবজাতকদের জন্ডিস হয় কেন?
সদ্যোজাতের জন্ডিস হওয়ার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। চিকিৎসকদের মতে, শিশু যত দিন মায়ের গর্ভে থাকে তত দিন মায়ের ধমনী থেকেই অক্সিজেন পায়। মায়ের শরীর থেকে গর্ভজাত শিশুর শরীরে অক্সিজেন বয়ে নিয়ে যায় লোহিত রক্তকণিকা।
শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরে তার নিজের ফুসফুস কাজ করা শুরু করে দেয়। তখন অতিরিক্ত লোহিত কণিকগুলো ভাঙতে শুরু করে। আর লোহিত কণিকা ভাঙলে তার থেকে বিলিরুবিন নামের হলুদ রঙের এক রঞ্জক বের হয়। এই উপাদানের মাত্রা বেশি হলেই তখন বলা হয় জন্ডিস হয়েছে।
সাধারণত লোহিত রক্তকণিকা ভেঙে যে বিলিরুবিন বের হয় তা যকৃতের মধ্যে দিয়ে যায়। যকৃৎ অতিরিক্ত বিলিরুবিন ছেঁকে নেয়, বাকিটা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু সদ্যোজাত শিশুর যকৃৎ পরিণত হয় না। তাই বাড়তি বিলিরুবিন ছাঁকতে পারে না। এতেই শিশুর জন্ডিসের লক্ষণ দেখা দেয়।
কাদের ঝুঁকি বেশি?
মা আর সন্তানের রক্তের গ্রুপ আলাদা হলে জন্ডিসের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ধরুন, মায়ের রক্তের গ্রুপ ‘ও’ আর শিশুর ‘এ’ বা ‘বি’। এমনটা হলে জন্মের পর শিশুর জন্ডিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। আবার মায়ের যদি আরএইচ নেগেটিভ রক্ত হয় আর সন্তান যদি আরএইচ পজিটিভ হয়, তখনও শিশুর জন্ডিস ধরা পড়তে পারে।
জন্ডিস হলে শিশুর শরীরে কী কী লক্ষণ দেখা দেয়?
১) শিশুর ত্বক, চোখ হলদেটে হয়ে যাবে।
২) সাধারণত জন্মের ৩ থেকে ৭ দিনের মধ্যে বিলিরুবিনের মাত্রা সবচেয়ে বেশি হয়, তখনই এই সমস্যা দেখা যায়।
৩) শিশুর ত্বকের কোনো জায়গায় হালকা চাপ দিলেই যদি সেই জায়গায় হলদেটে ছাপ পড়ে, তাহলে বুঝতে হবে শিশু জন্ডিসে আক্রান্ত।
৪) হাতের তালু ও পায়েও হলদেটে ছাপ পড়বে।
৫) শিশুর প্রস্রাবের রং খেয়াল রাখতে হবে। যদি তা গাঢ় হলুদ রঙের হয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
চিকিৎসকদের মতে, প্রসবের পরপরই জন্ডিস ধরা পড়লে চিকিৎসকরা দ্রুত চিকিৎসা শুরু করে। কিন্তু বাড়ি ফিরে আসার পর লক্ষণ ধরা পড়লে অনেক মা-বাবাই অনেক সময় বুঝতে পারেন না। এতে চিকিৎসা শুরু হতেও দেরি হয়।
জন্মের সাত দিনের মাথায় জন্ডিস ধরা পড়লে ততটা ভয় থাকে না। কিন্তু এর বেশি দেরি হলে শিশুর মস্তিষ্কে তার প্রভাব পড়তে পারে। শরীরের ভিতরে রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে যায়। তখন তা ভয়ের কারণ হতে পারে।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)