শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল মনে করেন, নির্বাচন অধিকতর সর্বজনীন হলে ভালো হতো৷ তবে ভোটের হার নিয়ে যে প্রশ্ন উঠছে তা কোনো ‘ইস্যু নয়' বলেও জানান তিনি৷
সোমবার (৮ জানুয়ারি) জার্মানভিত্তিক গণমাধ্যম ডয়চে ভেলে বাংলা বিভাগের প্রধান খালেদ মুহিউদ্দীনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার৷
নির্বাচন কতটা সফল হয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘কমিশন সার্বিকভাবে চেষ্টা করেছে নির্বাচন সফল করতে৷ এটাও কিন্তু একটা আপেক্ষিক বিষয়। কারণ একটা বড় দল নির্বাচনে অংশহগ্রহণ করেনি৷ এটা অনস্বীকার্য৷’
নির্বাচনে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে৷ মুন্সিগঞ্জে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মৃণাল কান্তি দাসের এক সমর্থককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে৷ সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রাম, পটুয়াখালী ও নরসিংদীতে৷ তবে সার্বিকভাবে নির্বাচন যথেষ্ট সহিংসতামুক্ত হয়েছে বলে মনে করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার৷ তিনি বলেন, ‘নির্বাচন অনেকটাই সহিংসতামুক্ত হয়েছে এবং ভোটার উপস্থিতিও ছিল সব মিলিয়ে৷ আমাদের জন্য যেটা স্বস্তিদায়ক হয়েছে যেকোনো ধরনের সহিংসতা বড় ধরনের হয়নি, মৃত্যু ঘটেনি, যেটা আমরা সব সময় প্রত্যাশা করি যে মানুষ আহত না হয়, নিহত না হয়৷ সেদিক থেকে আপেক্ষিক অর্থে নির্বাচনটা শান্তিপূর্ণ হয়েছে৷'
নির্বাচনে বিএনপিসহ বেশ কিছু সরকারবিরোধী দল অংশ নেয়নি৷ তা নিয়ে আক্ষেপ আছি কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে সিইসি জানান, বিএনপি না আসায় তার মধ্যে ‘অসন্তোষ' আছে, কারণ, আহ্বান জানানো হলেও তারা সাড়া দেয়নি৷ তিনি বলেন, ‘যদি ওরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতেন কোনো-না-কোনোভাবে, তাহলে নির্বাচন অনেক বেশি সর্বজনীন হতো৷ যদি রাজনীতির কথা বলি একটা দেশের নির্বাচন অধিকতর সর্বজনীন হওয়া প্রয়োজন৷ সেটা হলে ভালো হতো৷ সেটা হয়নি৷'
নির্বাচনের সময় ডয়চে ভেলের সংবাদকর্মীরা ঢাকার বিভিন্ন কেন্দ্রে খুব একটা ভোটার উপস্থিতি দেখতে পাননি৷ এই বিষয়ে খালেদ মুহিউদ্দীনের প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, নগরের চিত্র দিয়ে সামগ্রিকভাবে ভোট পড়ার হার বোঝা যাবে না৷ নগর ও গ্রামে ভোটের চিত্র আলাদা বলে জানান তিনি৷
ভোটের দিন বিকেল ৩টা পর্যন্ত সারাদেশে ২৭ দশমিক ১৫ ভাগ ভোট পড়েছে বলে জানান নির্বাচন কমিশনের সচিব৷ এর এক ঘণ্টা পর বিকেল ৪টায় ভোট গ্রহণ শেষ হয়৷ কিন্তু ভোট শেষ হওয়ার পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাবিবুল আউয়াল সংবাদ সম্মেলনে জানান, সারাদেশে ভোটের হার ৪০ শতাংশ৷ এ সময় তিনি সাংবাদিকদের শুরুতে ২৮ শতাংশ ভোট পড়ার কথা বলে পরে তা সংশোধন করেন৷ এ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়৷ এর জবাবে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘এই বিষয়টি নিয়ে আমার মনে হয় বিতর্কের তেমন অবকাশ নেই৷ এখনো যদি কেউ মনে করেন ভোটের হার আসলে অনেক কম, আমাদের ভোটের হার সবশেষে হয়েছে ৪১ দশমিক আট শতাংশ৷ আমি যখন ৪০ শতাংশ বলেছিলাম, প্রথমে বলে ফেলেছিলাম ২৮ পার্সেন্ট৷ দুইটা বা তার আগে আমি একটু ঘুমিয়ে ছিলাম, পরে যখন সাড়ে চারটার দিকে ইন্টারভিউ হয়, তখন পর্যন্ত ড্যাশবোর্ডে যে তথ্যগুলো পুরোটা আসেনি৷ আংশিক যেটা এসেছে তাতে মনে হয়েছে ৪০ শতাংশ৷ চূড়ান্ত হার তখনই নিরূপণ করা যায় যখন সকল আসনের ফলাফল পাওয়া যায়৷ এবং সকল প্রার্থীর ভোট যোগ করা হয়৷’
এ বিষয়ে সন্দেহের কিছু নেই বলে জোর দিয়ে উল্লেখ করেন তিনি৷ বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ চিত্র এখন আছে৷ কারো যদি মনে দ্বিধাদ্বন্দ্ব থেকে থাকে সেটা এখনো পরীক্ষা করে দেখা যেতে পারে, এটা কি আসলে ৪১ দশমিক আট শতাংশ নাকি বেশি, নাকি কম৷ এটা আমার মনে হয় কোনো ইস্যু নয়৷'
তারপরও ভোট পড়ার এই হার কম বলে উল্লেখ করেন তিনি৷ এজন্য বিএনপির ভোটে অংশ না নেওয়াকেই কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি৷ ‘ওরা (বিএনপি) যদি অংশগ্রহণ করতেন তাহলে ভোট টা আরো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতো এবং ভোটাররা অধিকতর হারে ভোটকেন্দ্রে আসতেন৷...বিদ্যমান ব্যবস্থায় আমার কাছে মনে হচ্ছে ৪২ শতাংশ ভালোই,’ বলেন সিইসি৷
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)