রবিবার, ৯ মার্চ ২০২৫, ২৫ ফাল্গুন ১৪৩১


সরকারি নির্মাণ কাজে ২০ শতাংশও ব্লক ব্যবহার হচ্ছে না: মালিক সমিতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত:৮ মার্চ ২০২৫, ১৬:৩৩

ছবিঃ মামুন রশিদ

ছবিঃ মামুন রশিদ

সরকারি নির্মাণ ও সংস্কার কাজে ইটের বদলে ব্লকের শতভাগ ব্যবহারের ঘোষণা থাকলেও তা মোটেও মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ কংক্রিট ব্লক প্রস্তুতকারক মালিক সমিতি। সংগঠনটির ভাষ্য, ভ্যাট নিয়ে অসামঞ্জস্যতার কারণেও শিল্পটির বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

শনিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে এ বক্তব্য তুলে ধরেন মালিক সমিতির সভাপতি শাখাওয়াত হোসেন।

তিনি বলেন, “সরকারের অধিকাংশ প্রকৌশল সংস্থা এখনও নির্মাণকাজে ইট ব্যবহার করছে। যথাযথ উদ্যোগ, সংশ্লিষ্টদের অবহেলা এবং বিভিন্ন জটিলতায় তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এছাড়া সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় বলা আছে, ২০২৫ সালের পর সরকারি কোনো কাজে আর মাটির পোড়ানো ইট ব্যবহার করা হবে না।

“সরকারের নীতির বাস্তবায়নে এমন অবহেলায় সম্ভাবনাময় ব্লক উৎপাদন শিল্পে আজ চরম স্থবিরতা বিরাজ করছে। কারখানাগুলো উৎপাদিত ব্লক বিক্রি করতে না পেরে লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছে অনেক ব্লক কারখানা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এমন হতাশাজনক অবস্থায় নতুন ব্লক কারখানার উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসতে সাহস পাচ্ছে না।”

সরকারি সব কাজে কেবল ব্লক ব্যবহারের সিদ্ধান্ত থাকলেও তার বাস্তবায়ন নেই মন্তব্য করে শাখাওয়াত বলেন, “সরকারের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে শতভাগ ব্লক ব্যবহার করার নির্দেশনা রয়েছে। অর্থাৎ চলতি ২০২৫ সালের মধ্যে সকল সরকারি উন্নয়ন ও সংস্কার কাজে শতভাগ ব্লক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে পোড়া ইটের ব্যবহার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে।

“কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হয়, শতভাগ দূরের কথা, এখন পর্যন্ত ২০ শতাংশ ব্লক ব্যবহারও কার্যকর হয়নি।”


ইটের তুলনায় ব্লকের ভ্যাট প্রায় ২৩ গুণ বেশি দাবি করে কংক্রিট ব্লক প্রস্তুতকারক মালিক সমিতির সভাপতি বলেন, “ইটের ন্যায় ব্লকের কোনো সঠিক ভ্যাটনীতি না থাকায় বর্তমানে ইটের বিকল্প পরিবেশবান্ধব ব্লকের ভ্যাট অব্যাহতিতে শুধুমাত্র ছিদ্রযুক্ত ব্লকে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আপনারা জেনে অবাক হবেন যে, পোড়া মাটির বিকল্প পরিবেশবান্ধব ব্লকের ভ্যাট ইটের তুলনায় প্রায় ২৩ গুণ বেশি।

“যেখানে একটি পোড়া মাটির ইটের মাত্র ভ্যাট .০৮ টাকা, সেখানে পরিবেশবান্ধব ব্লকের ভ্যাট ১.৮০ টাকা। এই ভ্যাট সংক্রান্ত অসামঞ্জস্যতার কারণে কোনো ইট ভাটার মালিক এখন পর্যন্ত ব্লক ফ্যাক্টরি স্থাপনে উৎসাহী হচ্ছেন না। আমরা যারা উদ্যোক্তা, তারাও ভ্যাট জটিলতায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। অনেক ইট ভাটার মালিক আমাদের জানিয়েছেন যে, ভ্যাট সংক্রান্ত জটিলতার কারণে তারা এই সেক্টরে আসতে আগ্রহী নয়।”

শাখাওয়াত হোসেন বলেন, “ইটের পরিবর্তে ব্লক দিয়ে বাড়ি তৈরিতে প্রায় ৩০ শতাংশ খরচ কমানো সম্ভব। বাড়ির স্থায়িত্ব বেশি হয়, দেখতেও হয় সুন্দর। এছাড়া ব্লকে তৈরি বাড়ি গ্রীষ্মকালে ঠান্ডা এবং শীতকালে গরম থাকে।

“পরিবেশের কোনো ক্ষতিও হয় না ব্লক তৈরিতে। ইটের বিকল্প পরিবেশবান্ধব ব্লক, সাশ্রয়ী ও তুলনামূলক ভূমিকম্প সহনীয় হওয়ায় দেশের নির্মাণ খাতে বাড়ছে ব্লকের চাহিদা।”

তিনি বলেন, “পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ইটের বিপরীতে পরিবেশবান্ধব ব্লক কারখানা এখন পর্যন্ত কোনো ভর্তুকি বা আর্থিক প্রণোদনা পাচ্ছে না। কংক্রিট ব্লক কারখানার উৎপাদনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মেশিনের অংশ প্যালেট আমদানিতে উচ্চ শুল্ক আরোপ করা আছে। এতে বিনিয়োগ খরচ অনেক বেড়ে যায়। অথচ এই পণ্যে শুল্ক আরোপের যৌক্তিক কারণ নেই।

“যেখানে পরিবেশবান্ধব সেক্টর হিসেবে প্রণোদনা পাওয়া প্রাপ্য, সেখানে ব্লক ফ্যাক্টরি মালিকগণ পাচ্ছেন হয়রানি, আর অতিরিক্ত ভ্যাট ও করের বোঝা। আমরা এ সম্ভাবনাময় খাতকে সম্পূর্ণভাবে আগামী ৫ বছরের জন্যে সম্পূর্ণভাবে কর ও ভ্যাটমুক্ত ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি। আমরা মনে করি, যথাযথ কর ছাড় এই শিল্পের প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করবে।”

ব্লক প্রস্তুতকারক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুস্তাফিজুর রহমানসহ সংগঠনের নেতারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত বিষয়:

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)
আরো পড়ুন

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

নামাজের সময়সূচি

ওয়াক্ত সময়সূচি
ফজর ০৪:৫৮ ভোর
যোহর ১২:১০ দুপুর
আছর ০৪:২৬ বিকেল
মাগরিব ০৬:০৬ সন্ধ্যা
এশা ০৭:২০ রাত

রবিবার ৯ মার্চ ২০২৫