শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
২০২৩ সালের এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদেশ সফরে ছিলেন। সেসময় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের অফিসিয়াল ইমেইল [email protected]এ [email protected] নামের আইডি থেকে ইংরেজিতে একটি হুমকি বার্তা সম্বলিত ইমেইল আসে।
হুমকির বার্তায় বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ২৭ এপ্রিল ভোর ৪টায় গুলি করা হবে। তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি ডিএমপি ও পুলিশ সদর দপ্তরের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে জানানো হয়। ফলে বিদেশ সফরকালেই প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বাড়ানো হয়।
এ ঘটনা সৌদি আরবে অবস্থানরত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত ও সাবেক আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারীর মাধ্যমে সৌদি সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবগত করা হয়। এরপর চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি দুজনকে শনাক্ত করে বাংলাদেশে পাঠানো হলে তাদের গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি।
গ্রেপ্তাররা হলেন, সৌদি যুবদলের সভাপতি কবির হোসেন ও সহযোগী দীন ইসলাম।
সিটিটিসি বলছে, রাষ্ট্রীয় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারার অংশ হিসেবে খোদ প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল।
রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান, সিটিটিসি প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান।
সিটিটিসি জানায়, ইমেইলের সাবজেক্ট লাইনে লেখা ছিল- “Prime Minister Sheikh Hasina will be shot at 4 am on April 27. Bangladesh police do not have the power to prevent this attack” (২৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভোর ৪টায় গুলি করা হবে। বাংলাদেশ পুলিশের ক্ষমতা নেই এই হামলা ঠেকানোর)। ইমেইলের বডিতেও একই হুমকি বার্তা লেখা ছিল।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, বিষয়টি অবহিত হওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে হুমকি বার্তার ভয়াবহতা, জাতীয় নিরাপত্তা ও শান্তি-শৃংখলার স্বার্থে বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি বার্তামূলক ইমেইল প্রেরণকারীকে দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য সিটিটিসি সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
গোপনীয় অনুসন্ধান এবং প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ শেষে ইমেইল বার্তা পাঠানো ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয় সিটিটিসি। হুমকি বার্তা পাঠানো ব্যক্তির নাম নাম দীন ইসলাম বাদল বলে নিশ্চিত হয় পুলিশ। হুমকি বার্তা প্রদানকারীর ইন্টারনেট (IP) অ্যাকটিভিটি পর্যালোচনা করে তার অবস্থান সৌদি আরব বলে তদন্তে নিশ্চিত হয় তদন্ত টিম।
এ ঘটনায় ২০ এপ্রিল ডিএমপি মিডিয়া পাবলিক রিলেশন সেন্টারের ইমেইলে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকিদাতাসহ অজ্ঞাতনামা সহযোগীদের বিরুদ্ধে রমনা মডেল থানায় মামলা করে সিটিটিসি। যার মামলা নং ১৫।
একই তারিখে মামলার আসামি এবং সহযোগীদের সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স-ইন্টারপোলের মাধ্যমে ডিপ্লোমেটিক চ্যানেল ব্যবহারের কার্যক্রম গ্রহণ করে সিটিটিসি।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকিদাতা দীন ইসলামকে তার সহযোগী কবির হোসেনসহ আটক করে সৌদি সরকার। পরে তাদের বাংলাদেশে পাঠালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারের সময় দীন ইসলামের কাছে থাকা ইমেইল অ্যাড্রেসের রিকভারী মোবাইল নাম্বারসহ একটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার আসাদুজ্জামান বলেন, গত ১০ বছর ধরে সৌদিতে থাকেন সৌদি যুবদলের একাংশের সভাপতি কবির হোসেন ও সৌদি যুবদল নেতা দীন ইসলাম। তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীকে হুমকির উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ ২৭ বার হত্যাচেষ্টা চালানো হয়েছে। যে কারণে এই হুমকিকেও গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের বক্তব্য সন্দেহজনক। শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা বা হামলা করা হলে রাষ্ট্রীয় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে, এটাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। তাদের সঙ্গে আর কারো যোগসাজশ ছিল কি না তা জানতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
এসময় তিনি দীর্ঘ তদন্ত ও পারস্পরিক যোগাযোগের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকিদাতাদের বাংলাদেশে পাঠানোর জন্য সৌদি সরকার ও সৌদিতে অবস্থানরত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতকে ধন্যবাদ জানান।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)