মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২
ছবি : সংগৃহীত
রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরে একটি গার্মেন্টস ও একটি কেমিক্যাল গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন কেউ কেউ। স্বজনরা দিশেহারা হয়ে ছুটছেন ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের কাছে। কেউ হারিয়েছেন ছেলে, কেউ ভাই, কেউ ভাগনি।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছেন উৎসুক জনতা ও নিখোঁজদের স্বজনরা। চারপাশে কান্না আর উৎকণ্ঠার ছাপ। ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ভবনটি ঘিরে রেখেছেন। কাউকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। বিকেল ৫টার দিকে নতুন করে সারি সারি অ্যাম্বুলেন্স ভবনের ভেতরে ঢুকতে দেখা যায়। তখন স্বজনদের মধ্যে নতুন করে উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়ে। তাদের ধারণা, ভেতরে হয়ত আরও মরদেহ উদ্ধার হয়েছে।
এই গার্মেন্টস কারখানাতেই কাজ করতেন ২০ বছর বয়সী রবিউল্লাহ। সকাল থেকে তার কোনো খোঁজ পাচ্ছে না পরিবার। ছেলের খোঁজে ছুটছেন মা— একবার পুলিশের দিকে, একবার সেনাবাহিনীর কাছে, আবার ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের কাছে। কোথাও থেকে কোনো খবর মিলছে না। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ছেলেটা আমার বেঁচে আছে তো? আবার চোখ মুছে তাকাচ্ছেন আগুনের ধোঁয়ায় ঢেকে থাকা ভবনের দিকে।
রবিউল্লার বড় ভাই হাবিবুল্লাহ বলেন, আমার ভাই এই গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কাজ করতেন। আগুন লাগার পর থেকে তার কোনো খোঁজ পাচ্ছি না। যার কাছে যাচ্ছি কেউ কিছু বলতে পারছে না। সকালে আগুন লাগার পর নিচের গেট বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। তাই ৩য় ও ৪র্থ তলা থেকে কেউ বের হতে পারেনি। ওই দুই ফ্লোরে প্রায় ১০০ জন ছিলেন।
এই অভিযোগের সঙ্গে মিলে যায় আরও কয়েকজন স্বজনের বক্তব্য। তারা জানান, আগুন লাগার সময় ভেতরে অনেক শ্রমিক আটকা পড়েছিলেন। কেউ কেউ কাচ ভেঙে বের হতে পেরেছেন, কিন্তু অধিকাংশই বের হতে পারেননি।
ঘটনাস্থলে থাকা নিপা নামে এক নারী জানান, তার বোনের ছেলে রবিন পোশাক কারখানার তিন তলায় কাজ করতেন। তিনি বলেন, আগুন লাগার পর থেকে ওর কোনো খবর নেই। বারবার ফোন দিয়েছি, কোনো সাড়া পাইনি। এখন জানি না, ও বেঁচে আছে কি না।
একইভাবে কান্নাজড়িত কণ্ঠে ভাগনি মাহিরার ছবি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন মো. শফিকুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, আমার ভাগনি মাহিরা তিন তলায় কাজ করতেন। আগুন লাগার পর থেকে ওর কোনো খবর নেই। চারদিকে খুঁজেছি, হাসপাতালেও খোঁজ নিয়েছি—কোথাও পাইনি।
নিহতের সংখ্যা নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা ৯ জনের মরদেহ পেয়েছি। ধারণা করছি, কেমিক্যাল গোডাউনে আগুনের সময় যে বিস্ফোরণ হয়, সেখান থেকে নিঃসৃত বিষাক্ত গ্যাসেই তাদের মৃত্যু হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ভবনটি এখনো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং ভেতরে আগুন জ্বলছে। কেমিক্যাল পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় না হওয়া পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান স্থগিত রয়েছে। আমরা সবাইকে বলব, অন্তত ৩০০ গজ দূরে নিরাপদে থাকুন। ভেতরে এখনো কেউ থাকলে কেমিক্যাল নিষ্ক্রিয় করার পর সার্চিং শুরু করা হবে।
এদিকে আগুনের উৎস সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। তারা জানায়, উদ্ধার কাজ শেষ হয়নি। তবে হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)