বৃহঃস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ৪ পৌষ ১৪৩২
ছবি : সংগৃহীত
গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের সাপ্তাহিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা প্রেস উইংয়ের পাঠানো এক বার্তায় তা জানানো হয়েছে। বৈঠকে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বার্তায় বলা হয়, গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। এর ফলে গুম হওয়া ব্যক্তি অন্যূনতম ৫ বছর ধরে গুম থাকলে এবং জীবিত ফিরে না আসলে ট্রাইবুন্যাল তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ডিসাপিয়ার্ড’ বা ‘গুম’ ঘোষণা করতে পারবে।
সরকার ‘গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার ট্রাইবুনাল’ এর জন্য মানবাধিকার কমিশনের সুপারিশের প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পাবলিক প্রসিকিউটর নিয়োগ দিতে পারবে। ভুক্তভোগী বা অভিযোগকারীও ব্যক্তিগত উদ্যোগে ট্রাইবুনাল আইনজীবী নিয়োগ করতে পারবেন এবং গুম হওয়া ব্যক্তির স্ত্রী বা তার ওপর নির্ভরশীল পরিবারের কোনো সদস্য কমিশনের পুর্বানুমতি ব্যাতিরেকে গুম হওয়া ব্যক্তির সম্পত্তি ব্যবহার করতে পারবে।
আরও বলা হয়, বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি সংরক্ষণ অধ্যাদেশ ২০২৫ এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। বাংলাদেশের হাওর অঞ্চলের ইকোসিস্টেম বিশ্বে বিরল ও অনন্য। কিন্তু নদী ও নদীপথের বাধা সৃষ্টি করে অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ, বিষ ও কীটনাশকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার এবং পর্যটনের বিরূপ প্রভাবের কারণে এই ইকোসিস্টেম ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে পড়ছে। অন্যদিক, জলাশয় রক্ষায় আইনি কাঠামোরও অপ্রতুলতা রয়েছে।
এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাংলাদেশে হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব, কর্তৃত্ব ও অধিক্ষেত্র সুস্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা হবে। হাওর ও জলাভূমি এলাকার জীববৈচিত্র্য, পরিবেশ, প্রতিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণের লক্ষ্যে সুরক্ষা অধ্যাদেশ জারির বিধান রাখা হয়েছে। পাশাপাশি, হাওর ও জলাভূমি এলাকার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংরক্ষিত হাওর ও জলাভূমি এলাকা ঘোষণা করার বিধানও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
বার্তায় আরও বলা হয়, হাওর ও জলাভূমি এলাকায় নিষিদ্ধ কার্যক্রমের বিবরণ প্রদান, নিষিদ্ধ কার্যক্রম সংঘটিত হলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য করা এবং উক্ত অপরাধের জন্য আরোপনীয় দণ্ডের বিধান করা হয়েছে। হাওর ও জলাভূমি এলাকায় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নির্ধারিত ব্যতিক্রম সাপেক্ষে অধিদপ্তরের মতামত গ্রহণের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। পাশাপাশি, প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে অন্যান্য কর্তৃপক্ষ/দপ্তর/সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়, স্থানীয় অংশীজনদের সম্পৃক্ততা এবং সংরক্ষণ কার্যক্রমে তাদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিধি, প্রবিধান ও নির্দেশিকা প্রণয়নের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে।
বৈঠকে সুইজারল্যান্ডের রাজধানী বার্নে বাংলাদেশের নতুন একটি দূতাবাস স্থাপনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকেই সুইজারল্যান্ডের জেনেভাতে বাংলাদেশের পার্মানেন্ট মিশন রয়েছে। বার্নে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেরই দূতাবাস থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের দূতাবাস না থাকায় জেনেভার পামার্নেন্ট মিশনেই এতদিন ধরে জাতিসংঘ ও দূতাবাসের কাজগুলো সম্পন্ন করা হচ্ছিল। সুইজারল্যান্ড বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সহযোগী ও কৌশলগত অংশীদার। এসব বিবেচনায় নিয়ে বার্নে বাংলাদেশ দূতাবাস স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে একজন রাষ্ট্রদূত, ফার্স্ট সেক্রেটারি, কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারি নিয়োগ দিয়ে দূতাবাসের কার্যক্রম শুরু হবে। এ পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের ৮২টি মিশন অফিস আছে।
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখভাগের অকুতোভয় যোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা হয়েছে। হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন। তার বিষয়ে সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণান নিয়মিতভাবে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন, খোঁজখবর জানাচ্ছেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গতকাল সিঙ্গাপুর পৌঁছেছেন। তিনি সরাসরি হাদির চিকিৎসার দেখভাল করছেন।
এছাড়া, এবছর মহান বিজয় দিবস সুন্দর ও সুচারুভাবে উদযাপনের জন্য মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)