সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
ভারতে চিকিৎসা করাতে গিয়ে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যার ঘটনার তদন্ত শেষে অনেকেই গ্রেফতার হতে পারেন বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এছাড়া সংসদ সদস্য আনারের মরদেহের সন্ধান মিললে এ সংক্রান্ত আরও অনেক তথ্য প্রকাশ করা হবে বলে জানান তিনি।
সোমবার (১০ জুন) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘আমরা সত্যের কাছাকাছি এসে গিয়েছি। মরদেহের বিষয়টি নিশ্চিত হলেই আমরা আপনাদের কাছে অনেক কিছু প্রকাশ করতে পারব। মরদেহ নিশ্চিত হওয়ার জন্য যারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তাদের জবানবন্দি শুনেছি। তারা বলেছে যে, মরদেহ তারা খণ্ডবিখণ্ড করেছে। কোথায় রেখেছে, সেটা নির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি। ভারত ও আমাদের গোয়েন্দারা সেখানে গিয়েছিল। সেখান থেকে তারা যেগুলো পেয়েছেন, সেগুলো উদ্ধার করেছেন। ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া নিশ্চিত হতে পারব না যে এগুলো তার মরদেহের অংশ।’
গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়ে নিখোঁজ হন সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। ২২ মে কলকাতা পুলিশ জানায়, আনার খুন হয়েছেন। একইদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানও জানান, আনারকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
এ ঘটনায় একইদিন আনারের খোঁজ চেয়ে রাজধানীর শেরে বাংলা নগর থানায় মামলা করেন তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শুরুর পর আসতে থাকে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। তবে আনারের মরদেহ পাওয়া যায়নি। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ও ভারতে মোট পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে দুই দেশের পুলিশ। এরমধ্যে ডিবির হেফাজতে আছে আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, শিলাস্তি রহমান ও তানভীর ভূঁইয়া। আর কলকাতা পুলিশের হেফাজতে আছেন জিহাদ হাওলাদার ও মো. সিয়াম হোসেন।
শিমুল, শিলাস্তি ও তানভীর এরই মধ্যে এমপি আনারকে অপহরণ ও হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। তারা বর্তমানে কারাগারে আছেন। এই ঘটনায় আরেক অভিযুক্ত মার্কিন নাগরিক আক্তারুজ্জামান শাহীন আমেরিকা পালিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কলকাতা পুলিশ বলছে, গ্রেফতার জিহাদ এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। আনারের মরদেহ থেকে হাড় ও মাংস আলাদা করার কাজটি মূলত সে–ই করেছে। তদন্তের অংশ হিসেবে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে একটি দল সম্প্রতি কলকাতায় যায়। গত ২৮ মে বিকেলে কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জীভা গার্ডেনের সেপটিক ট্যাংক থেকে প্রায় ৪ কেজি মাংসের টুকরা উদ্ধার করে ডিবি ও কলকাতা সিআইডির যৌথ দল। সে সময় ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের জানান, প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে এটি এমপি আনারের দেহাবশেষ। ফরেনসিক টেস্টের মাধ্যমে পরে জানা যাবে এটি তাঁর দেহাংশ কি না।
পরে গ্রেফতার সিয়ামের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গতকাল রোববার কলকাতা থেকে কিছু হাড় উদ্ধার করেছে পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি। তবে এগুলো এমপি আনারের কি না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এমপি আনারকে অপহরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কামাল আহমেদ বাবুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত রোববার বাবুকে সাত দিনের রিমান্ডে পাঠায় আদালত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আমি তো বললাম, তদন্ত শেষ হোক। অনেকেই গ্রেফতার হতে পারেন। তদন্তের আগে আমার মনে হয়, এগুলো বলা উচিত হবে না।’
মূল আসামি যুক্তরাষ্ট্রে থাকায় তাকে গ্রেফতার করতে না পারলে আসামিদের বিচার কোথায় হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন, মামলা দুটো হয়েছে। যেখানে ঘটনা ঘটেছে, সেখানে একটি মামলা হয়েছে। সেটা হতেই হবে। আর ওই সংসদ সদস্যের মেয়ে ঢাকায় একটি মামলা করেছেন, তার নিরুদ্দেশ হওয়ার পরেই। কাজেই এ ঘটনাগুলো দুদেশেই সম্পৃক্ত হয়ে গেছে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, তাদের দেশে যেহেতু ঘটনা ঘটেছে, তাদের আসামিকে ফেরত নেওয়া ও বন্দি করার দায়িত্ব তাদের। আমি যতটুকু জানি, ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বন্দিবিনিময় চুক্তি আছে। সেক্ষেত্রে হয়ত সেই সুবিধা ভারত সরকার পাবে। আমাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বন্দিবিনিময় চুক্তি নেই। তবে ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে। বন্ধুপ্রতিম দেশ হিসেবে আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের সব কাজেই তারা সহযোগিতা করছেন এবং ভবিষ্যতে করবেন।
আপনারা কবে নাগাদ সংসদের স্পিকারকে জানতে পারবেন যে তার মরদেহ শনাক্ত করা গেছে- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, সংগত কারণেই এটা আসবে। আমাদের একটা প্রমাণ লাগবে যে এই খণ্ডবিখণ্ড মাংসগুলো তার। তার ডিএনএ পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তার মেয়ের সঙ্গে যদি মিলে যায়, তাহলে ভারত সরকার আমাদের জানাবে, তখন আমরা বলতে পারব।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)