শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষার্থী ও চাকরপ্রার্থীরা। গত কয়েক দিনে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে রাজধানী থেকে জেলা শহর পর্যন্ত। রোববার (৭ জুলাই) আন্দোলনকারীরা ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করায় সেই আন্দোলন নতুন মাত্রা পেয়েছে। শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আর ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়েছেন সাইন্সল্যাব মোড়ে। এতে রাজধানীজুড়ে দেখা দিয়েছে তীব্র যানজট। পুলিশ এই আন্দোলনে বাধা না দিলেও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
তবে পুলিশ বলছে, আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কেউ কোনো সহিংসতার চেষ্টা করলে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন। এছাড়া জনদুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে আন্দোলনকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
কোটাবিরোধী আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ নিয়েছিল ২০১৮ সালে। তখন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সহিংসতার ঘটনাও ঘটে। তীব্র আন্দোলনের মুখে তখন সরকার দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়। তবে এবার উচ্চ আদালতের একটি রায়কে কেন্দ্র করে নতুন করে কোটা বহাল হওয়ায় আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
চলমান আন্দোলনের শুরু থেকেই পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কোনো সংঘাতে যায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করছেন। ঢাকায় গুরুত্বপূর্ণ শাহবাগ মোড় অবরোধ করা হচ্ছে ছয় দিন ধরে। তবে সরকারের পক্ষ সরাসরি আন্দোলনে বাধা দেওয়ার কোনো নির্দেশনা না থাকায় পুলিশ অনেকটা দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। যদিও জনদুর্ভোগ কমাতে পুলিশ সরব রয়েছে। সরকারও বাধা দিয়ে আন্দোলন দমানোর চেষ্টা না করে কৌশলী ভূমিকা নিয়েছে। ছাত্রলীগের মাধ্যমে আন্দোলন দমানোর চেষ্টার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
তবে আন্দোলনকারীরা সহিংসতার দিকে গেলে দমানোর নির্দেশনা রয়েছে পুলিশের প্রতি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএমপির একজন কর্মকর্তা জানান, ঢাকা শহরের প্রতিটি বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কেউ সহিংসতার চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে অ্যাকশনে নামার। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো চিঠি দেয়নি ডিএমপি, সেটা মৌখিকভাবে বলা হয়েছে।
পুলিশকে দেওয়া নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সরকারবিরোধী কোনো পক্ষ সক্রিয় হয়ে উঠে কি না সেই বিষয়টি যেন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা কঠোরভাবে মনিটরিং করেন। পাশাপাশি যারা কোটাবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিচ্ছে তাদের ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়ার জন্য মাঠে কাজ করছেন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। তাদের সহযোগিতা করছে ঢাকা শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে দায়িত্বে থাকা সরকারদলীয় লোকজন। যদিও এখন পর্যন্ত কতজন এই আন্দোলনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, এমন কোনো তালিকা প্রস্তুত করতে পারেনি ডিএমপি।
এ বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ড. খ মহিদ উদ্দিন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমরা সবাইকে বলব জনদুর্ভোগের বিষয়টি যেন তারা বিবেচনায় রাখেন। যারা আন্দোলন করছেন, তাদের বলব, তারা যেন বিষয়গুলো বিবেচনায় নেন। আন্দোলনের প্রতি আমাদের পুরো নজর আছে। যেকোনো ধরনের সহিংস আচরণ করা হলে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এ আন্দোলনে যেন কোনো দুষ্কৃতিকারী প্রবেশ করতে না পারে, সতর্ক রয়েছি। শিক্ষার্থীদেরও এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।’
ইতোমধ্যে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো এই আন্দোলনে সমর্থন দেওয়ায় সরকারের পক্ষ থেকেও সতর্ক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রোববার এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আমরা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আন্দোলন গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। সময় মতো সমাধান হয়ে যাবে। আই বিলিভ সো আই হোপ সো। শিক্ষকদের সঙ্গে বসে কথা বলতে পারছি না। তবে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে। যেকোনো সময় সমাধান হয়ে যাবে।’
এদিকে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এক অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলনে কোনো পক্ষের গভীর ষড়যন্ত্র থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক দৃষ্টি রাখতে বলেছেন মন্ত্রী।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)