বৃহঃস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
‘সকাল থেকে এখনও এক টাকাও বিক্রি করতে পারিনি। বিক্রি দূরে থাক, ক্রেতাই নেই। অথচ মাসের শুরুতে কারেন্ট বিল, কর্মচারীদের বেতন, সার্ভিস চার্জসহ অনেকগুলো খরচ থাকে। টানা দুইদিন এমন অবস্থার মুখোমুখি হতে হলো। সামনে যদি আরো এমন অবস্থা হয় তাহলে আমাদের আর্থিক সংকটে পড়তে হবে। এভাবেই বলছিলেন রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার কাদের অর্কিড মার্কেটের শুভ ফ্যাশনের কর্ণধার মো. রিপন।
অবশ্য শুধু রিপনই নন, মার্কেটের অন্যান্যদের অবস্থাও একই। কোটা বাতিলের এক দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের চলমান অবরোধের কারণে ক্রেতা সংকটে অনেকটা অলস এবং অবসর সময় পার করছেন তারা।
সোমবার (৮ জুলাই) দুপুরে নিউমার্কেট থানার আওতাধীন সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় অবরোধ করেন শতাধিক শিক্ষার্থী। ফলে পুরো এলাকার যানচলাচলসহ অন্যান্য কার্যক্রম অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, স্বাভাবিক সময়ে যে নিউমার্কেট এলাকা হাজার হাজার ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁক-ডাকে মুখরিত থাকতো সেটি এখন পুরোপুরি নীরব। সড়কে নেই গাড়ি চলাচল। ফুটপাতেও নেই কোনো দোকানপাট।
ব্যবসায়ীরা বলেন, সাধারণত সারাদিন পর বিকেলের দিকে নিউমার্কেট এলাকায় ক্রেতার সমাগম বেশি হয়। আর সন্ধ্যা নামতেই সবচেয়ে বেশি ক্রেতার উপস্থিতি হয়। যা চলে রাত দশটা থেকে এগারটা পর্যন্ত। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষার্থীদের অবরোধ কর্মসূচির কারণে ক্রেতার পরিমাণ এমনিতেই কম ছিল। তারপর আবার সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে অবরোধ করার ফলে একেবারেই তা শূন্যের কোঠায় পৌঁছেছে। দিনভর দোকান খোলা রেখেও একজন ক্রেতার দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় অনেকটা অলস সময় পার করছেন বিক্রয়কর্মীরা। সারাদিন দোকান খোলা রাখলেও কর্মচারীদের খরচও উঠছে না বলেও মন্তব্য করেন অনেক ব্যবসায়ী।
মার্কেটের দৃষ্টি পাঞ্জাবি ঘরের বিক্রয় কর্মী শজীদ বলেন, একটি মাত্র পাঞ্জাবি সকাল থেকে বিক্রি হয়েছে। আমাদের বিক্রি শুরুই হয় সন্ধ্যার পর থেকে। এখন পর্যন্ত কোনো ক্রেতার উপস্থিতি নেই। গাড়ি চলাচল বন্ধ। মানুষ আসবে কি করে। গতকালও একই অবস্থা গেছে। শিক্ষার্থীদের এই বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা উচিত। না হলে সবারই ক্ষতি হচ্ছে।
মানুষের উপস্থিতি না থাকায় অলস সময় পার করতে দেখা গেছে এসব এলাকার অন্যান্য দোকানদারও। সায়েন্সল্যাব মোড়ের আশরাফ প্রিন্টার্সের মালিক আশরাফুল ইসলাম বলেন, গাড়ি চলাচল হচ্ছে না সেজন্য কাস্টমার নেই। দুপুরের পর থেকেই এই অবস্থা। আজকে আর মানুষের উপস্থিতি হবে না। দিনটাই আমাদের মাটি হয়ে গেছে। গতকালও সারাদিন আশানুরূপ কাজ করতে পারিনি। আজকেও একই অবস্থা।
অপরদিকে শিক্ষার্থীরা বলছেন, এক দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের এই আন্দোলন চলমান থাকবে। সায়েন্সল্যাবে আন্দোলনরত ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের এক দফা দাবি, সেটি হচ্ছে কোটা বাতিল করতে হবে। কেন্দ্রীয় নির্দেশনার অপেক্ষায় আমরা আছি। সে অনুযায়ী আন্দোলনের পরবর্তী গতিপথ নির্ধারিত হবে।
এর আগে বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটের দিকে মিছিল নিয়ে এসে সায়েন্সল্যাব মোড় অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে এই এলাকার যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)