শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার এখন আইনি কাঠামোর মধ্যে আসছে। ‘অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। অধ্যাদেশটি কার্যকর হলে আদালতে বর্তমান সরকারের ‘বৈধতা’ নিয়ে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না এবং ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়ে নতুন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নেওয়া পর্যন্ত সরকারের মেয়াদ চলতে থাকবে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ৮ আগস্ট ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত হওয়ার পর, নতুন সরকারের আইনি ভিত্তি প্রয়োজন ছিল। সেই কারণে, ১৯ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশের খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন পায়।
অধ্যাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং উপদেষ্টাদের পদমর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো এবার উপদেষ্টাদের সংখ্যা সীমিত রাখা হয়নি।
অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ শুরু হবে প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণের দিন থেকে এবং ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ গঠিত হয়ে নতুন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নেওয়ার তারিখ পর্যন্ত এই সরকার কার্যকর থাকবে। এর আগে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ ছিল ৯০ দিন।
অন্তর্বর্তী সরকার একটি অস্থায়ী সরকার হিসেবে কাজ করবে। এর প্রধান কাজ হবে অবাধ, সুষ্ঠু, এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করা। সরকার সরকারি কর্মচারীদের সহায়তায় নির্বাচন পরিচালনা করবে।
অধ্যাদেশে আরও বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন ও কার্যক্রমের বৈধতা নিয়ে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না। এছাড়া, রাষ্ট্রপতি প্রধান উপদেষ্টার পরামর্শ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হতে হলে প্রার্থীকে কমপক্ষে ২৫ বছর বয়সী হতে হবে। অধ্যাদেশের খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে, ২৫ বছরের কম বয়সী কেউ প্রধান উপদেষ্টা বা উপদেষ্টা পদে নিয়োগ পাবেন না। তাছাড়া, যেকোনো ব্যক্তিকে যদি আদালত অপ্রকৃতিস্থ, দেউলিয়া ঘোষিত বা বিদেশি নাগরিকত্ব অর্জনকারী হিসেবে ঘোষণা করা হয়, বা কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করেন, তাহলে তিনি এসব পদে নিয়োগ পাবেন না।
অন্য একটি শর্ত হলো— যেকোনো ব্যক্তি যদি নৈতিক বা ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে দুই বছরের বেশি কারাদণ্ড পান এবং মুক্তি পাওয়ার পর পাঁচ বছর না পেরোয়, তবে তিনি প্রধান উপদেষ্টা বা উপদেষ্টা হতে পারবেন না। তাছাড়া, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো প্রার্থীকে উপদেষ্টা পদে নিয়োগ দেওয়া হবে না।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং উপদেষ্টারা রাষ্ট্রপতির কাছে লিখিত পত্রের মাধ্যমে পদত্যাগ করতে পারবেন। প্রধান উপদেষ্টা পদ শূন্য হলে, উপদেষ্টাদের মধ্যে থেকে একজনকে রাষ্ট্রপতি প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ করবেন।
নতুন অধ্যাদেশের খসড়ায় বলা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা এবং উপদেষ্টা মন্ত্রীদের মতো পদমর্যাদা, পারিশ্রমিক এবং সুযোগ-সুবিধা পাবেন। মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা যেসব সুবিধা পান, সেগুলো উপদেষ্টারাও পাবেন।
বর্তমানে, সরকারের পক্ষ থেকে অধ্যাদেশটি জারি করার জন্য কোনো নির্দেশনা না আসলে, এটি চূড়ান্ত অবস্থায় রয়েছে বলে জানা গেছে।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)