শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন রাস্তার আশপাশ কিংবা ফুটপাত দখল করে হকারদের দোকান বসানোর বিষয়টি এখন চিরাচরিত দৃশ্য। তবে এবার দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। হকাররা দখল করে দোকানের পসরা সাজিয়েছেন মাঝরাস্তায়। আর গণপরিবহন, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, রিকশা কোনোরকমে রাস্তার এক পাশ দিয়ে চলাচল করছে। এতে তৈরি হয়েছে দীর্ঘ যানজট। বেড়েছে মানুষের ভোগান্তি। এ অবস্থায় নীরব ভূমিকায় দেখা গেছে সড়কে দায়িত্ব পালন করা পুলিশ সদস্যদের।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর গুলিস্তান এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, জিরো পয়েন্ট মোড় থেকেই রাস্তার উভয় পাশের ফুটপাত দখল করে বিভিন্ন দোকান বসানো হয়েছে। এর মধ্যে বাম পাশের সড়কের ফুটপাতের একপাশে চৌকি বসিয়ে আর আরেক পাশে দড়ি টানিয়ে কাপড়ের পসরা সাজানো হয়েছে। আর মূল রাস্তার ওপর ঝুড়ি, ভ্যান বসিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে বিভিন্ন ফল।
বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের রমনা ভবন মার্কেটের সামনের সড়কের ফুটপাত দখলের পাশাপাশি মূল সড়কেও বসানো হয়েছে দোকান। গুলিস্তানের শাহ আলী মাজার এলাকার অবস্থা আরও ভয়াবহ। মোড়ের জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশের জন্য সরু জায়গা ছাড়া পুরো প্রাঙ্গণই দখল করে দোকান বসানো হয়েছে। এর সামনের টিসিবির আঞ্চলিক কার্যালয়ের সামনের সড়কের ৮০ শতাংশই দখল করে আছেন হকাররা।
আরও দেখা যায়, স্টেডিয়াম রোড থেকে মাজার রোডে যেসব গাড়ি আসছে সেগুলোকে আসতে হচ্ছে সড়কের একপাশ দিয়ে। বাকি রাস্তা হকারদের দখলে। এ ছাড়া মূল সড়কে ঘোড়ার গাড়ি, মিনিবাস, বড় বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী তোলা হচ্ছে। এ অবস্থায় পুরো এলাকাজুড়েই তৈরি হয়েছে অসহনীয় যানজট। মাত্র পাঁচ মিনিটে অতিক্রম করা যাবে এমন সড়ক পাড় হতে লাগছে আধাঘণ্টা।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে আগ্রহ প্রকাশ করেননি অধিকাংশ হকার। অনেকেই আবার বিরক্তি প্রকাশ করেন।
রবিউল নামের এক হকার বলেন, সব কিছু ম্যানেজ করেই এখানে বসেছি। এখানে না বসলে কোথায় বসব? জায়গা বের করে দেন।
বেলাল হোসেন নামের আরেক হকার বলেন, আমরা তো রাস্তার সাইডেই বসেছি। যারা মাঝে বসেছে তাদেরকে উঠে যাওয়া উচিত। ওদের জন্যই পরে আমাদের সমস্যা হয়।
বিষয়টি নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন বাসযাত্রী ও সাধারণ মানুষরা। তারা বলছেন, ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্রে এমন যাচ্ছেতাই অবস্থা মেনে নেওয়ার মতো নয়। মনে হচ্ছে দেখার কেউ নেই।
এই দোকানগুলো রাস্তা ও ফুটপাত দখল করায় পথচারীদের চলাচলে যেমন অসুবিধা হয়, তেমনি যানজট বাড়ে এবং নগরীর সৌন্দর্যও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেক সময় প্রশাসনের উচ্ছেদ অভিযানে তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়। আবার কিছু সময় পরই তাদের পুনরায় সে জায়গা দখল করতে দেখা যায়। কারণ তাদের জীবিকা নির্বাহের নির্ভরযোগ্য আর কোনো উপায় নেই। এ বিষয়ের স্থায়ী সমাধান হওয়া উচিত।
আব্দুল লতিফ নামের এক বাসযাত্রী বলেন, ২০ মিনিট ধরে এখানে বসে আছি। পার হতে পারছি না। পরে বাস থেকে নেমে গিয়েছি। পুরো রাস্তাটাই অবৈধ দখল হয়ে আছে। সংশ্লিষ্টদের এ ব্যাপারে নজর দেওয়া উচিত।
কামরুল ইসলাম নামের এক পথচারী বলেন, ঢাকা শহরে হকারদের স্থায়ী বসবাস বা বিকল্প ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত তারা ফুটপাত দখল করতেই থাকবে। এ জায়গাটুকু পার হতে অনেক সময় লাগে। অথচ সড়কগুলো যথেষ্ট প্রশস্ত। কিন্তু এর অধিকাংশই হকাররা দখল করে রেখেছেন। ফুটপাত দখলের সমস্যা নিরসনে একটি সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা দরকার। যা নগরীর সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ও পথচারীদের সুবিধাকে প্রাধান্য দিয়ে বাস্তবায়ন করতে হবে।
অপরদিকে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি গুলিস্তান ও আশপাশে দায়িত্ব পালন করা ট্রাফিক বিভাগের পুলিশ সদস্যরা
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)