শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫, ৫ মাঘ ১৪৩১
শিক্ষা শিশুর মৌলিক অধিকার সেইসাথে একটি সামাজিক প্রপঞ্চ। যা আলোকিত সমাজ বিনির্মাণের গুরুত্বপূর্ণ এক হাতিয়ার। মানুষ জন্ম থেকে আমৃত্যু শিখন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই চলে। তবে শিখন প্রক্রিয়া আর শিক্ষার মধ্যে সংজ্ঞাগত কিছুটা পার্থক্য থাকলেও অংশীজন প্রায় একই।
সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণে তথা প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নমুখী ভাবনা তরান্বিত করার লক্ষ্যে চ্যালেঞ্জসমূহ চিহ্নিত করে সেগুলো থেকে উত্তরণের পথে আগাতে পারলেই আমরা পারবো আমাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে। বিভিন্ন গবেষণা থেকে প্রাপ্ত আমাদের প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের বিদ্যমান চ্যালেঞ্জসমূহ ও সেগুলোর আলোকে সম্ভাব্য সুপারিশমালা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়:
শিক্ষার সাথে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী অন্যতম প্রধান দুই অংশীজনের নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে। শিক্ষক হলেন আলোকিত সে সমাজ গড়ার সুনিপুণ কারিগর। শিক্ষকতা নিঃসন্দেহে একটি মহান পেশা। একজন শিক্ষার্থীকে কেবল শিক্ষিতই নয় বরং ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার গুরু দায়িত্বটিও থাকে শিক্ষকের ওপর।
শিশুর মধ্যে লুকিয়ে থাকা সৎ ও সামাজিক গুণাবলীর বিকাশ সাধন করা শিক্ষকের কর্তব্য। তবে হ্যাঁ এটাও সত্য যে হাতের তালি যেমন এক হাতে অর্থাৎ দুই হাতের নিবিড় সংমিশ্রণ যতক্ষণ পর্যন্ত না ঘটে ততক্ষণ অবধি বাজে না ঠিক তেমনি শিক্ষণ-শিখন প্রক্রিয়াও শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়ের নিবিড় মিথস্ক্রিয়া হলেই সুচারুরূপে সম্পাদিত হয়। তাই সম্মানিত শিক্ষকদের আন্তরিকতা বাড়াতে এবং পেশাদারিত্বের মনোভাব তৈরি করতে হবে।
শিক্ষকতাকে শুধু পেশা নয়, ব্রত হিসেবে গ্রহণ করলে সেই শিক্ষক কর্তৃক পুরো জাতি উপকৃত হবে। কিন্তু এখানেই সমস্যা শিক্ষকগণ শিক্ষকতা ব্রত হিসেবে কীভাবে নেবেন? রাষ্ট্রযন্ত্র কি তার অন্যান্য চাহিদা পূরণের দায়িত্ব নিয়েছে? প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীর অজুহাত দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষকদের পাঠদানের বাইরে অন্যান্য কাজে সম্পৃক্ত করা হয়, তা থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিরত থাকতে হবে। যদিওবা বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদটি দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করে প্রধান শিক্ষকগণের বেতন গ্রেড ১১ এবং সহকারী শিক্ষকগণের বেতন গ্রেড ১৩। শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং গুণগত শিক্ষার ধারা নিশ্চিত করতে এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হলেও এটি যথেষ্ট নয়।
প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন নিশ্চিত করতে সরকার পর্যায়ক্রমে বিপুল সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ প্রদান করছে। বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ। তবে এটিও যথেষ্ট নয় কেননা আদর্শ শ্রেণি কার্যক্রমে শিক্ষক শিক্ষার্থী অনুপাত ১:৩০ হলেও আমাদের দেশে এর অনুপাত প্রায় দ্বিগুণের কাছাকাছি। এ জায়গা থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন মানসম্মত পর্যাপ্ত পরিমাণ শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিত করা সেই সাথে শিক্ষকদের শিক্ষাতত্ত্বের ওপর প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান করা যাতে শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারেন আধুনিক শিক্ষার বিভিন্ন নতুন পদ্ধতি ও কৌশলসমূহের সাথে পরিচিতি গ্রহণের সাথে বাস্তবায়নের।
বর্তমানে শিক্ষক প্রশিক্ষণের মান ইতিমধ্যে বৃদ্ধি পেয়েছে। শিক্ষকরা পর্যায়ক্রমে দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদি বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ, নিড বেইজড সাব ক্লাস্টার প্রশিক্ষণ, আইসিটি প্রশিক্ষণ, প্রধান শিক্ষকদের লিডারশিপ প্রশিক্ষণ ও ইংরেজি বিষয়ে দক্ষ করতে সরকারি অর্থায়নে ব্রিটিশ কাউন্সিল কর্তৃক মাস্টার ট্রেইনার প্রশিক্ষণসহ নানাবিধ প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
এছাড়া বিদ্যালয় পরিদর্শনকারী কর্মকর্তা ও প্রশিক্ষকদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে এটি চলমান রাখতে হবে। জাতিসংঘ ঘোষিত ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা’ (এসডিজি) বাস্তবায়নের জন্য মানবসম্পদ উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। প্রাথমিকস্তরের শিক্ষা ব্যবস্থাকে বাণিজ্যিকীকরণ মুক্ত করার মতো জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা অতীব প্রয়োজন। সেইসাথে শিক্ষাসংক্রান্ত যেকোনো নীতি বা সিদ্ধান্ত গ্রহণে শিক্ষক সমাজের প্রতিনিধির অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করা প্রয়োজন সর্বাগ্রে।
‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা’ এর প্রাথমিক শিক্ষা সংক্রান্ত লক্ষ্য হলো ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের সব শিশুর মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা যা অর্জনে বাংলাদেশ দৃঢ় অঙ্গীকার করেছে। এজন্য একীভূত ও মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা জরুরি। পিছিয়ে পড়া ও অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল প্রান্তিক পরিবারের শিশুদের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আরও সচেতন থাকা প্রয়োজন।
বিভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক গোষ্ঠী, অঞ্চল, জাতি, লিঙ্গ ও স্বাস্থ্যগত অবস্থানের সব শিশুর প্রাথমিক শিক্ষায় অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি অভিভাবকদের অসচেতনতা, নিরক্ষরতা ও আর্থ-সামাজিক অবস্থা মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণের অন্যতম অন্তরায়। ফলপ্রসূ প্রচারের মাধ্যমে নিরক্ষর অভিভাবকদের শিক্ষার মূল্য সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করতে হবে।
সুন্দর সমাজের জন্য নারী শিক্ষার অপরিহার্যতা, বাল্যবিবাহের কুফল মানুষকে যথাযথভাবে অনুধাবন করাতে হবে। মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকারের প্রতিটি অংশীজনই নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করার জন্য এবং ঝরে পড়ার হার শূন্যের কোটায় নামিয়ে জানার জন্য ১ জুলাই ২০১৫ সাল থেকে শতভাগ উপবৃত্তি চালু রয়েছে।
শতভাগ উপবৃত্তি চালুর ফলে প্রাথমিক শিক্ষার গুণগতমান ও শিক্ষার্থীর হার উভয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেহেতু প্রাথমিক শিক্ষার ওপর ভিত্তি করে শিক্ষার পরবর্তী ধাপগুলো সুচারুভাবে সম্পাদিত হয় তাই আধুনিক যুগোপযোগী বিজ্ঞান ও বাস্তবসম্মত প্রায়োগিক শিক্ষা চালু করতে হবে যেখানে প্রাথমিক শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে।
শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি, মানসিক বিকাশ ও অটুট স্বাস্থ্যের জন্য পুষ্টিকর খাদ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিদ্যালয়ে গমনোপযোগী বয়সের শিশুদের এসব চাহিদা পূরণ ও শিক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠায় স্কুল মিল কার্যক্রম বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।
প্রাথমিক স্তরে মিড ডে মিল পরিকল্পনার স্কুল মিল কর্মসূচিকে সর্বজনীন করার মাধ্যমে শিক্ষায় সব ধরনের বৈষম্য নিরসন, শিক্ষার্থীদের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা বলয় সৃষ্টি করা এবং শিখনফল অর্জন ত্বরান্বিত করার মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখা সম্ভব। টেকসই উন্নয়ন ২০৩০-এর লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ অঙ্গীকারবদ্ধ। এ জন্য স্কুল মিল কর্মসূচিকে অগ্রাধিকার দেওয়া ও বাস্তবায়ন প্রয়োজন।
এ লক্ষ্যে শিক্ষায় পরিবর্তনশীল ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে নিয়মিত এবং শিক্ষক ঘনিষ্ঠ তত্ত্বাবধান ও মনিটরিং নিশ্চিত করতে শিক্ষক অভিভাবক কমিটি যা প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে বিশেষভাবে সহায়ক তার কার্যক্রমকে গতিশীল করা প্রয়োজন।
শিক্ষকদের শ্রেণি পঠন, পাঠন কার্যক্রমে আধুনিক শিক্ষা উপযোগী ধ্যান-ধারণা অবশ্যই প্রয়োগ করতে হবে। বর্তমানে আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে সমান তালে চলার জন্য যুগোপযোগী কারিকুলাম প্রণয়ন, শিক্ষা উপকরণ তৈরি মাল্টিমিডিয়া মাধ্যমে ক্লাস করলে পাঠের বিষয়বস্তু শিক্ষার্থীদের কাছে অতিসহজ, চিত্তাকর্ষণ ও মনোযোগ আকর্ষণ করবে। শিক্ষকদের শ্রেণি পাঠদানের ব্যাপারে আরও আন্তরিক হতে হবে।
এজন্য ডিজিটাল শিক্ষার সম্প্রসারণ ও হাইব্রিড লার্নিং মডেল প্রসার ঘটানো। যেখানে প্রযুক্তি ব্যবহার আরও বিস্তৃত করতে হবে, যেমন ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম, ভার্চুয়াল ক্লাসরুম এবং অ্যাডাপটিভ লার্নিং টুলস। কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে অনলাইন শিক্ষা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ২০২৫ সালে এটি আরও উন্নত এবং আধুনিক প্রযুক্তির সাথে একীভূত করা প্রয়োজন হবে। একইসাথে ফিজিক্যাল ক্লাসরুম এবং ডিজিটাল ক্লাসরুমের সমন্বয় ঘটানোর মাধ্যমে হাইব্রিড লার্নিং মডেল শিক্ষার্থীদের জন্য আরও নমনীয়তা এবং সুবিধা নিশ্চিত করবে।
সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাপ্তাহিক স্কুল পত্রিকা/দেয়ালিকা প্রকাশনার ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। যেখানে স্থান পাবে শিক্ষার্থীদের লেখা গল্প, কবিতা, চিত্রাঙ্কন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ-সংস্কৃতি পরিচিতি, কুইজসহ স্কুলের কর্মকাণ্ডের আলোকচিত্র। শিশুদের পঠন দক্ষতা বাড়ানোর জন্য বেশি বেশি বই পড়তে দিতে হবে। এক্ষেত্রে এমন বই নির্বাচন করতে হবে যেখানে শিশুদের পরিচিত জগৎ সম্পর্কে কথা থাকতে হবে, বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল রেখে আকর্ষণীয় রঙিন ছবি থাকতে হবে, শব্দের পুনরাবৃত্তি থাকতে হবে, বইয়ের লেখাগুলো পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ামূলক হতে হবে।
পঠন দক্ষতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে প্রতিদিন রিডিং পড়ানোর মাধ্যমে, বিভিন্ন রিডিং গেম করানোর মাধ্যমে, শব্দ গেমের মাধ্যমে, বর্ণ দিয়ে শব্দ তৈরির মাধ্যমে, নিজস্ব চিন্তায় খাতায় লিখতে দেয়ার মাধ্যমে, ছবি ও শব্দের মিল করার মাধ্যমে দৃষ্টির আয়ত্তাধীন শব্দভাণ্ডার বাড়ানো সম্ভব।
শিক্ষার্থীদের লিখন দক্ষতা বাড়ানোর জন্য শিক্ষকদের নিয়মিত প্রেষণা দিতে হবে, তাতে শিক্ষার্থীরা তাদের লেখার উন্নতি করার চেষ্টা করবে এবং নিয়মিত প্রচেষ্টা চলতে থাকবে। ভালো লেখার জন্য শিক্ষার্থীদের যথাযথ পদ্ধতিগুলো প্রয়োগ করতে হবে। হাতের লেখা খারাপ হলে তা পাঠককে আকৃষ্ট করে না। বিশেষত শিক্ষার্থীদের জন্য হাতের লেখা গুরুত্বপূর্ণ; তাই হাতের লেখার চর্চা ছোটবেলা থেকেই করাতে হবে।
সংগীত, আবৃত্তি, বিতর্ক, উপস্থাপনা, অভিনয়ের মতো সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ দ্রুত ও প্রাঞ্জল পঠনের অভ্যাস তৈরি করে। একই সঙ্গে রচনা বা গল্প লেখার প্রতিযোগিতা আয়োজন প্রাঞ্জল লেখার দক্ষতাও বৃদ্ধি করে। এজন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় এ ধরনের আয়োজন নিয়মিত করা যেতে পারে। প্রাথমিক স্কুলগুলোয় শিক্ষার্থীদের লাইব্রেরির প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি করার জন্য লাইব্রেরিতে শিশুদের উপযোগী বই রাখতে হবে, যেমন রঙিন ছবি ও মজাদার ছড়া, গল্প যা শিশুদের পঠন দক্ষতা বাড়াতে সহায়ক।
কাস্টমাইজড ও স্কিলভিত্তিক শিক্ষা: শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত প্রয়োজন অনুযায়ী শিক্ষা প্রদান করার পদক্ষেপ নিতে হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই এবং ডাটা অ্যানালিটিক্স ব্যবহার করে প্রতিটি শিক্ষার্থীর শক্তি, দুর্বলতা এবং আগ্রহ বুঝে তাদের জন্য উপযুক্ত পাঠ্যক্রম তৈরি করা হতে পারে। সেই সাথে আধুনিক কর্মক্ষেত্রে সফল থেকে তত্ত্বগত শিক্ষার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় দক্ষতা এবং স্কিল অর্জনেও গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। ফলশ্রুতিতে পেশাদার স্কিল, সফট স্কিল এবং টেকনিক্যাল স্কিলের ওপর গুরুত্ব বাড়বে।
বিদ্যালয়ের অবকাঠামো নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে প্রায়ই ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। তাই শ্রেণিকক্ষে বৈদ্যুতিক পাখা, বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবস্থা গ্রহণ, নিরাপদ বিশুদ্ধ পানি এবং পয়ঃপ্রণালীর ভালো ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। আমাদের অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামো এখনো উন্নত নয়। কোনো কোনো বিদ্যালয়ে স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন নেই, পানীয় জলের সু-ব্যবস্থা নেই। খেলাধুলার জন্য নেই মাঠ। শিক্ষার্থীদের শারীরিক বিকাশের জন্য খেলাধুলার বিকল্প নেই।
মানসিক স্বাস্থ্য এবং সামাজিক দক্ষতা: শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য, সৃজনশীলতা এবং সামাজিক দক্ষতার উন্নয়নের ওপর অধিক মনোযোগ দিতে হবে, কারণ এসব দক্ষতা আধুনিক জীবনে অপরিহার্য। বর্তমান সময়ে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়ন ও সামাজিক দক্ষতা নিশ্চিত ব্যতিরেকে সামনে এগিয়ে যাওয়া খানিকটা দুষ্কর।
আজকের শিশুরাই হবে আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। আর তারা আলোকিত জীবন গড়তে পারলেই তারা হতে পারবে শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিল্পী, সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী, দার্শনিক, রাজনীতিবিদ, লেখক, কবি ও সাংবাদিক। যার ভিত্তি তৈরি হয় বিদ্যালয় থেকেই। শ্রেণিকক্ষই শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ জীবনের প্রস্তুতির ক্ষেত্র।
পৃথিবীর প্রায় সব দেশকেই বর্তমান সমাজের প্রয়োজন মতো চাহিদা ও ভবিষ্যৎ সমাজের সম্ভাব্য চিত্রকে সামনে রেখে তাদের শিক্ষাঙ্গনে ইতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টিতে সচেষ্ট হতে হবে। মানসম্মত শিক্ষাব্যবস্থার জন্য প্রয়োজন অনুকূল পরিবেশ। আর এই পরিবেশ গড়ে তোলার দায়িত্ব শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের। আর এখানে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সম্পৃক্ততাই গড়ে দিতে পারে গুণগত শিক্ষার মজবুত ভিত।
পরিশেষে বলা যায়, প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য এবং প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে জড়িত শিক্ষার্থী-শিক্ষক, শিক্ষক অভিভাবক, এসএমসি’র সদস্যবৃন্দ, সব কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দদের তৎপর হতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষার পরিমাণগত মানের পাশাপাশি গুণগত মানের দিক থেকে উন্নত করতে পারলেই জাতীয় জীবনে এগিয়ে চলা সহজ হবে।
সৈয়দ মো. সিয়াম ।। সহকারী অধ্যাপক, শিক্ষা বিভাগ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)