শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
নির্বাচনে ভরাডুবির পর দলের প্রার্থীদের নানা অভিযোগের মুখে পড়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। বিশেষ করে নির্বাচনে খরচের নামে সরকারের কাছ থেকে টাকা পাওয়ার অভিযোগ নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন এই দুই শীর্ষ নেতা। তবে তাদের ভাষ্য ভোটের জন্য প্রার্থীদের টাকা দেওয়ার কোনো প্রতিশ্রুতি ছিল না। কোনো মাধ্যমে তারাও টাকা পাননি।
অন্যদিকে ভোটে পরাজিত প্রার্থীদের বিক্ষোভে শীর্ষ নেতাদের ইন্ধনের অভিযোগ তুলে এর পেছনে ষড়যন্ত্র আছে বলে মন্তব্য চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের। তবে শৃঙ্খলাবিরোধী কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে হার্ডলাইনে থাকার ইঙ্গিত দিয়েছেন জাপার দুই শীর্ষ নেতা। অন্যথায় দলের সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা তাদের।
তবে দলে ভাঙনের কোনো আশঙ্কা দেখছেন না জিএম কাদের ও চুন্নু।
সোমবার ( ১৫ জানুয়ারি) একটি গণমাধ্যমকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, যারা বলছে, আমরা টাকা পাইছি, টাকা যে পাইছি, এর সাক্ষী-প্রমাণ কী। বললেই হলো টাকা পাইছি।
অন্যদিকে ভোটে জাপাকে কেউ অর্থ দেয়নি জানিয়ে দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, কেউ আমাদের ভোট করতে টাকা দেয়নি। ব্যবসায়ীরাও দেয়নি। কেউ একটা পয়সা দিয়েছে, অসম্ভব।
যদিও রোববার (১৪ জানুয়ারি) ঢাকায় জাপার প্রার্থীদের বিশেষ সভায় সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের প্রার্থী মোক্তার হোসেন বলেন, নির্বাচনের আগে দল থেকে বলা হলো নির্বাচন করো। তুমি কিছু খরচ করো, আর বাকিটা দল দেবে। সে মোতাবেক আমি দোকান বিক্রি করে প্রথম কয়েকদিন প্রচারণা চালিয়েছি। পরে জিএম কাদের ও চুন্নুকে কল দিলে তারা আর রিসিভ করেননি। ঢাকায় এসে দেখা করতে চাইলাম, তাও মানা করে দিয়েছে। কারণ, তাদের ভেতরে ভয়, তারা যে টাকা আত্মসাৎ করেছে, কি জবাব দেবে?
তবে দলের পক্ষ থেকে ফান্ড তৈরির বিষয়টি জানিয়েছেন জাপা চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ প্রেসিডিয়াম সদস্য রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া। তিনি রোববার বলেন, যারা নির্বাচন করেছেন তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এটা ঠিক। বলা হয়েছিল দলের ফান্ডের ব্যবস্থা করা গেলে টাকা দেওয়া হবে। সেটা করা যায়নি তাই এই ক্ষোভ।
দল ভাঙার গুঞ্জন নিয়ে কী বলছেন কাদের-চুন্নু?
বিক্ষুব্ধ নেতা–কর্মীদের এসব অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, নির্বাচনের জন্য কাউকে তো ডেকে আনা হয়নি। তখনই বলা হয়েছিল, পার্টি কোনো আর্থিক সহযোগিতা করতে পারবে না। যাদের আগ্রহ ছিল, তারা নির্বাচন করেছেন। এখন এসব করা হচ্ছে ষড়যন্ত্র থেকে।
তৃণমূলের অমতের সত্ত্বেও নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে জি এম কাদের বলেন, তৃণমূল আমাকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছিল। সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমি সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি। এর বাইরে নির্বাচনে যাওয়ার জন্য আরও কী কী হয়েছিল, সেটা আর বলতে চাই না।
এদিকে মহাসচিব চুন্নু বলেছেন, বাইরের কারও ইন্ধনে জাতীয় পার্টিকে দুর্বল করার চেষ্টা চলছে। কারা ইন্ধন দিচ্ছে এটা এখনই বলতে পারব না। এটা এখনই বলা মুশকিল, অনুমানের ওপর বলছি।
সোমবার (১৫ জানুয়ারি) এ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে গণমাধ্যমকে চুন্নু বলেন, নির্বাচনে কাঙ্ক্ষিত ফল পাইনি। সেই বিষয়ে আমার ও চেয়ারম্যানের মধ্যে দায়-দায়িত্ব আছে। সেই দায়-দায়িত্ব নিয়ে আমরা কথা বলতে পারতাম। আমরা ঘরের মধ্যে আলোচনা করতে পারতাম। ফোরামে আলোচনা করতে পারতাম, কিন্তু যেটা করছে সেটা আমার মনে হয় বাইরে থেকে কারও ইন্ধন আছে। পার্টিকে দুর্বল করার জন্য, কারও ইন্ধন আছে। না হলে এ ধরনের কথা বলার কোনো যুক্তি নেই।
চুন্নু বলেন, আমরা পরাজিত প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলাম। তার আগেই তারা ফরাসি বিপ্লবের মতো বিপ্লব আরম্ভ করে দিয়েছে।
দলের ভাঙনের গুঞ্জন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ৩ বার ৪ বার ভাঙছে। বিএনপিও অনেক বার ভাঙছে এটা চলমান প্রক্রিয়া। একটা দল ট্রেনের মতো যাচ্ছে। সেখান থেকে কোনো কোনো যাত্রী নেমে যায়, নতুন যাত্রী ওঠে। এটা কোনো বিষয় না। দল ভাঙছে না, কোনো জেলার সভাপতি সেক্রেটারি আসছে, প্রেসিডিয়াম মেম্বার সংখ্যাগরিষ্ঠ কেউ বিবৃতি দেয়নি। নির্বাহী সদস্যরাও বিবৃতি দেয়নি। সাংগঠনিক ভাঙা একটা প্রক্রিয়া। কতিপয় প্রার্থী যারা ভেবেছে আমরা টাকা পেয়েছি, ওদের টাকা দেইনি। এটাই কারণ, অন্য কোনো কারণ নেই। এখানে ভাঙা ভাঙির কোনো বিষয় নেই।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)