রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১


আন্দোলনে প্রাণ ফেরানোর চেষ্টায় বিএনপি, পরিকল্পনা কী?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত:১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪, ১৬:২০

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

প্রায় ১৪ মাস আগে ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে মহাসমাবেশ করেছিল বিএনপি। সেই থেকে চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত চলে একের পর এক সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং। বিভিন্ন সময় দেওয়া হয় অবরোধ, হরতাল ও অসহযোগের ডাক। ক্ষমতাসীনদের পদত্যাগ, দলীয় চেয়ারপারসনের মুক্তিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত রাখে দলটি। কিন্তু একের পর এক সিনিয়র ও শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের গ্রেফতারে অনেকটা দমে যেতে হয়েছে তাদের। অস্বস্তি দেখা দেয় দলের অভ্যন্তরে। তবে ‘প্রায় অভিভাবকহীনতায়’ পড়া বিএনপিতে কিছুটা স্বস্তি মিলেছে শীর্ষ নেতাদের জামিন খবরে। ধীরে ধীরে উদ্দীপ্ত হয়ে উঠছেন নেতাকর্মীরাও। একই সঙ্গে আগামী দিনগুলোতে সরকারবিরোধী আন্দোলনের গতিপথ কী হতে পারে, সে আলোচনাও শুরু হয়েছে। চিন্তাভাবনা চলছে সর্বোচ্চ ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি পুনর্বিন্যাসেরও।

গত ২৮ অক্টোবর ঢাকার নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ থেকে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের যাত্রা শুরুর ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি। তবে বেশকিছু কারণে পণ্ড হয়ে যায় সেই সমাবেশ। সরকারবিরোধী এক দফা আন্দোলনের ‘স্টিয়ারিং’ বিএনপির হাতছাড়া হয়। ওই ঘটনায় মহাসচিবসহ দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য, কেন্দ্রীয় এবং তৃণমূলের নেতাদের একের পর এক গ্রেফতারের ফলে আন্দোলনের তেজ কমতে থাকে। এরপর আত্মগোপনে চলে যান অনেকে। হতোদ্যম হয়ে পড়ে সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। ফলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকাতে ধারাবাহিকভাবে হরতাল-অবরোধের পর অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেও নেতাকর্মীদের সেভাবে মাঠে নামানো যায়নি। এই অবস্থার মধ্যেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়ে যায়। টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ।

নির্বাচনের পর কয়েক সপ্তাহ নীরব থাকা বিএনপি আন্দোলনের মাঠে ফেরে কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচির মাধ্যমে। তবে নীতি নির্ধারণী পর্যায় থেকে সিদ্ধান্ত হয় বড় কোনো কর্মসূচিতে না যাওয়ার। নীরবতার কৌশল অবলম্বন করে অনেকটা সফলও হয়েছে বিএনপি। কারাগার থেকে একেরপর এক মুক্তি মিলছে নেতাদের।

বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার পর্যন্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, কেন্দ্রীয় নেতা শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক, দক্ষিণ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ফজলুর রহমান খোকন, যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল মোনায়েম মুন্না প্রমুখের মুক্তি মিলেছে। জানা গেছে, আর দুই মামলায় জামিন পেলে মুক্তি মিলবে মির্জা আব্বাসেরও।

এদিকে মুক্তি পাওয়ার পর ওই দিন রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে গিয়েছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফুলের তোড়া দিয়ে তাকে বরণ করে নেন নেতাকর্মীরা। এরপর ভার্চুয়ালি কথা বলেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গেও। এ সময় বিশ্রাম নিতে বলা হয়েছে মির্জা ফখরুলকে।

দলীয় সূত্র বলছে, ট্রমা কাটিয়ে ওঠার পর স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডাকা হবে। আন্দোলনের গতিপথ ও নতুন কর্মসূচি নিয়েও কথা হয় তাদের মাঝে। এরপর স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও ড. আব্দুল মঈন খানও দেখা করেন মির্জা ফখরুলের সঙ্গে আলোচনা করেন পরবর্তী আন্দোলন ও কর্মকৌশল নিয়ে।

পুনর্বিন্যাস হচ্ছে স্থায়ী কমিটি-
দলীয় সূত্র বলছে— স্থায়ী কমিটির পুনর্বিন্যাস নিয়ে দলের শীর্ষ পর্যায়ে আলোচনা হচ্ছে। এই কমিটি থেকে বাদ ও অন্তর্ভুক্ত করা হবে কয়েকজনকে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনাকালে মনে হয়েছে তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছেন— কাদের বাদ এবং কাদের অন্তর্ভুক্ত করবেন। এখন শুধু উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষা।

স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় অবশ্য বলছেন, আন্দোলনের সময় বিভিন্ন সংগঠনের ত্রুটি-বিচ্যুতি সামনে এসেছে। এতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হয়তো পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন। তবে স্থায়ী কমিটিতে কেউ অন্তর্ভুক্ত হবেন কি না, কমিটিতে কোনো পরিবর্তন আসবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের।

আন্দোলন পুনর্গঠনের উপায় খুঁজছে বিএনপির মিত্ররা-
নির্বাচনের আগে থেকে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে দেখা গেছে বেশ কয়েকটি দলকে। এসব দলের একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে আন্দোলন পুনর্গঠনের উপায় খুঁজছেন তারা। ইতিমধ্যে বিগত আন্দোলন-কর্মসূচির দুর্বলতা পর্যালোচনা করেছেন তারা। এবার পথ ও কৌশল খুঁজছেন আন্দোলনে প্রাণ ফেরানোর।

যুগপৎ আন্দোলনের একাধিক দল ও জোটের দায়িত্বশীল নেতারা মনে করছেন— ব্যস্ততাসহ বিভিন্ন কারণে আগামী এপ্রিল বা মে পর্যন্ত রাজপথে বড় কোনো কর্মসূচির পরিকল্পনা নেই তাদের। যদিও কারণ হিসেবে এসব নেতা ইঙ্গিত দিয়েছেন, এসএসসি পরীক্ষা, রোজা ও ঈদের। অনেকে আবার ইশারা করছেন আন্দোলনকারী মূল দল বিএনপির নেতাকর্মীদের কারাবন্দিত্ব বা অনুপস্থিতির দিকে।

গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আন্দোলনটা কীভাবে পুনর্গঠন করা যায়, সেটা নিয়ে আমরা অন্যান্য দলের সঙ্গে আলোচনা করব। ইতিমধ্যে বিএনপির সঙ্গে গত ১৩ জানুয়ারি আমাদের বৈঠক হয়েছে। আবারও মুলতবি বৈঠক হবে।’

ছয়দলীয় জোট ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ ‘ব্যাংক লোপাট ও অর্থ পাচারের প্রতিবাদে’ গতকাল শুক্রবার ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে। ২০ জানুয়ারি থেকে রাজধানীতে ‘প্রহসনের নির্বাচন মানি না, গণতন্ত্রের পক্ষে গণস্বাক্ষর’ শিরোনামে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি শুরু করেছে নাগরিক ঐক্যও।

দলের প্রায় ১৫ হাজার নেতাকর্মী কারাবন্দি রয়েছেন বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। কারান্তরীণ এসব নেতাকর্মীর মুক্তির আগে বড় কোনো কর্মসূচির পরিকল্পনা নেই সরকারবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম এই দলটির।

বিএনপির অভিযোগ, এখনো তাদের প্রায় ১৫ হাজার নেতা-কর্মী জেলে। তাদের মুক্ত করার আগে বড় কর্মসূচিতে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। যদিও গত মঙ্গলবার থেকে সারাদেশে ‘দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও’ শিরোনামে লিফলেট বিতরণে ছয় দিনের কর্মসূচি শুরু করেছে বিএনপি। এই কর্মসূচি চলবে আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

সরকারবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কারামুক্তির পর কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে বিএনপি সমমনা শিবিরে। মিত্র দলগুলোর নেতারা মনে করছেন— এখন আন্দোলনের দুর্বল দিকগুলো নিয়ে বিএনপির ভেতরে-বাইরে পর্যালোচনা হবে। এরপর আন্দোলন-কর্মসূচির বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তার আগে সিদ্ধান্তমূলক কর্মসূচিতে না গিয়ে রয়েসয়ে কর্মসূচি টেনে নেওয়া হবে।

শরিক দলগুলোর নেতারা বলছেন, আন্দোলনে ব্যর্থতার পর সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য দুটি বিষয় অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়েছে। একটি হলো, যার যার সংগঠন পুনর্গঠন। অন্যটি হচ্ছে আন্দোলন ‘পুনর্গঠন’ করা। বিগত আন্দোলনে স্পষ্ট হয়েছে যে সংগঠন শক্তিশালী করা না হলে আন্দোলনে সফল হওয়া সম্ভব হবে না। ফলে কার্যত সংগঠন পুনর্গঠনের ওপর আন্দোলন পুনর্গঠনের বিষয় অনেকটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)
আরো পড়ুন

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

নামাজের সময়সূচি

ওয়াক্ত সময়সূচি
ফজর ০৪:৫৮ ভোর
যোহর ১১:৪৫ দুপুর
আছর ০৩:৩৬ বিকেল
মাগরিব ০৫:১৫ সন্ধ্যা
এশা ০৬:৩১ রাত

রবিবার ২৪ নভেম্বর ২০২৪