রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আমরা খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই- দেশনেত্রীকে মুক্ত করুন। অন্যথায় আপনাদের (সরকার) যেকোনো পরিণতির জন্য তৈরি থাকতে হবে। এ দেশের মানুষ কখনোই তাকে (খালেদা জিয়া) এভাবে অন্যায়ভাবে কারাগারে বন্দী অবস্থায় চলে যেতে দেবে না। এটা আপনাদের মনে রাখতে হবে।’
শনিবার (২৯ জুন) বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এই সমাবেশের আয়োজন করে বিএনপি। এতে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
শনিবার বেলা আড়াইটার পর পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে সমাবেশ শুরু হয়। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এই সমাবেশে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন।
বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির সিনিয়র নেতা ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা বক্তব্য দেন।
এর আগে সকালে বৃষ্টির মধ্যেই কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ছয়টি পিকআপের ওপর অস্থায়ীভাবে সমাবেশের মূল মঞ্চ তৈরি করা হয়। টাঙানো হয় ব্যানার। মূল মঞ্চ তৈরির পাশাপাশি নয়াপল্টন থেকে শুরু করে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত এবং অন্যপাশে কাকরাইল পর্যন্ত লাগানো হয় মাইক।
এদিকে সকাল থেকেই ঢাকা মহানগরের পাশাপাশি আশপাশের জেলা ও মহানগর থেকে মিছিল সহকারে সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেন নেতাকর্মীরা। তারা খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে নানা স্লোগান দেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে আমি দলের পক্ষ থেকে আহ্বান জানাতে চাই-দেশনেত্রী খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের প্রতীক, আমাদের আন্দোলনের প্রতীক। তাকে রক্ষা করতে হলে, বাঁচাতে হলে একইসঙ্গে আমাদের গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হলে, আমাদের অধিকারকে ফিরিয়ে আনতে হলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। একইসঙ্গে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকে আহ্বান জানাতে চাই, আসুন আজকে যেমন গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করছি, যুগপৎ আন্দেোলন করছি, আজকে দেশনেত্রীর মুক্তির আন্দোলনকেও একইভাবে একীভূত করে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে সোচ্চার আওয়াজ তুলি।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, ‘আমাদের রাজপথে আরও তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। ভয়ে মারা যাওয়ায় কোনো পৌরুষ নেই। ভয়ে মারা যাওয়ার চেয়ে সাহস নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলাই হচ্ছে আসল কাজ। পরিবর্তন শুধু বয়সী লোকদের দিয়ে আসে না। পরিবর্তন আসে তরুণ, যুবক শ্রেণির মধ্য দিয়ে।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘যুদ্ধ করেই দেশ স্বাধীন করতে হয়েছে, তাই শুধু বক্তৃতায় বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি মিলবে না।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে নতুন করে লড়াই শুরু হয়েছে জানিয়ে তাকে মুক্ত করা ছাড়া ঘরে ফিরে না যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান। তিনি বলেন, ‘এ জন্য আজকে নেতাকর্মীদের শপথ নিতে হবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসনে দেশে আজ অনিয়ম নিয়মে পরিণত হয়েছে। তাই আমাদের জন্য প্রতিরোধ কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
ক্ষমতাসীনদের সমালোচনা করে আমীর খসরু বলেন, ‘বাংলাদেশে আজ আইনের শাসন নেই, মানুষের ভোটাধিকার নেই, বাকস্বাধীনতা নেই, মানবাধিকার নেই, জীবনের নিরাপত্তা নেই। এখানে অন্যায়-অনিয়ম আজ নিয়মে-আইনে পরিণত হয়েছে। কেউ কথা বললে গুম হতে হয়, খুন হতে হয়। নেতাকর্মীদের জেলখানায় বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করতে হয়। সেই দেশে কি শুধু প্রতিবাদ করে আমরা বের হতে পারব, না। এখানে প্রতিরোধ এখন কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ না দিয়ে গুরুতর অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়ার জীবনকে তিলে তিলে শেষ করে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন।
ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘আমাদের সংগ্রাম শুরু হলো। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ঢাকার রাজপথ প্রকম্পিত করতে হবে। মুক্তির মিছিল শুরু হলো।’ এ সময় নেতাকর্মীদের নিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে সমস্বরে স্লোগান তোলেন দুদু।
সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘কয়েক দিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছেন, জনগণ থেকে সরে গেলে আমি আর বাঁচব না। দেশবাসী মনে করে, র্যাব-পুলিশ যদি আপনাদের কাছ থেকে সরে যায়, তাহলে আপনার সরকারের অপমৃত্যু ঘটবে। আপনার সরকার রাজপথে লুটোপুটি খাবে। আপনার সরকারের পতন ঘটবে।’
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে বন্দি করে রাখা হয়েছে। তাকে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে। জনগণের ভাষা বুঝুন। অবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন।’
সমাবেশে ভাইস-চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, মো. শাহজাহান, নিতাই রায় চৌধুরী, আহমেদ আযম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, জয়নুল আবদীন ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক সালাউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, উত্তর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব আমিনুল হক, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির প্রমুখ বক্তব্য দেন।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)