শুক্রবার, ৭ মার্চ ২০২৫, ২২ ফাল্গুন ১৪৩১
ছবি সংগৃহীত
রোজার ফজিলত সম্পর্কে মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: বনি আদমের প্রত্যেকটি কাজের সওয়াব তার নিজের জন্য; রোজা ছাড়া। রোজা আমার জন্য; আমিই রোজার প্রতিদান দিব। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯০৪, সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১১৫১)
রমজানের ফরজ ইবাদত হলো প্রতিদিন রোজা রাখা এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ঠিকমতো জামাতে আদায় করা। এর বাইরেও কিছু সুন্নত ও মুস্তাহাব আমল আদায় করতে পারেন একজন রোজাদার ব্যক্তি।
তারাবি নামাজ আদায় করা
রমজানের বিশেষ ইবাদত রাতের তারাবি নামাজ। এশার নামাজের পর এই নামাজ আদায় করা হয়। তারাবির সঙ্গে অন্যান্য নফল, সুন্নত নামাজ ও ইবাদতগুলোও নিয়মিত আদায় করা উচিত।
রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানের রাতে তারাবি নামাজ আদায় করে, তার অতীতের গুনাহ ক্ষমা করা হয়।’ (বুখারি : ২০৪৭)
তিনি আরও বলেন, যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের আশায় রোজা রাখেন, তারাবি নামাজ পড়েন এবং কদরের রাতে জাগ্রত থেকে আল্লাহর ইবাদত করেন, তার জীবনের আগের সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে। (মিশকাত, হাদিস : ১৮৬২)
সাহরি খাওয়া সুন্নত
সাহরি মানে শেষ রাতের খাবার। আর সাহরি (সেহরি নামে যেটা আমাদের দেশে সমধিক পরিচিত) শব্দের অর্থ ভোরের খাবার। রোজা রাখার উদ্দেশ্যে সুবহে সাদিকের কাছাকাছি সময়ে যে পানাহার করা হয়, সেটাকে ইসলামের পরিভাষায় সাহরি বলে।
রোজা রাখার নিয়তে সাহরি খাওয়া সুন্নত। সাহরি অত্যন্ত বরকতময় খাবার। সাহরি খাওয়ার অনেক ফজিলত হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা সাহরি খাও, কারণ সাহরিতে বরকত আছে।’ (বুখারি, হাদিস : ১৯২৩)
তাড়াতাড়ি ইফতার করা সুন্নত
রমজান মাসে সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা সুন্নত। রাসূল সা. তাড়াতাড়ি ইফতার করার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন। হজরত সাহল ইবনে সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—
মানুষ যতদিন পর্যন্ত তাড়াতাড়ি ইফতার করবে ততদিন কল্যাণের মধ্যে থাকবে। (বুখারি, মুসলিম)
অপর হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যতদিন মানুষ তাড়াতাড়ি ইফতার করবে ততদিন দ্বীন ইসলাম বিজয়ী থাকবে। কেননা, ইহুদি ও নাসারাদের অভ্যাস হলো ইফতার দেরিতে করা। (আবু দাউদ)
কাঁচা খেজুর দিয়ে ইফতার করা; কাঁচা খেজুর না পেলে শুকনো খেজুর দিয়ে; শুকনো খেজুরও না পেলে পানি দিয়ে ইফতার করা সুন্নত।
হজরত আনাস বিন মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী (সা.) নামাজের আগে কয়েকটি কাঁচা খেজুর খেয়ে ইফতার করতেন। যদি কাঁচা খেজুর না থাকত, তাহলে শুকনো খেজুর দিয়ে। যদি শুকনো খেজুরও না থাকত তাহলে কয়েক ঢোক পানি দিয়ে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৬৩২)
অন্য হাদিসে ভিন্ন বর্ণনায় এসেছে, রাসুল (সা.) (মাগরিবের) নামাজের আগে তাজা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। যদি তাজা খেজুর পাওয়া না যেত, তবে শুকনো খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। আর যদি শুকনা খেজুর পাওয়া না যেত তাহলে কয়েক ঢোক পানি দিয়ে ইফতার করতেন। ( মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৩/১৬৪)
রমজান মাসে বেশি বেশি দোয়া করা মুস্তাহাব
রোজাদারের বেশি বেশি দোয়া করা মুস্তাহাব। হাদিস শরিফে মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেয়া হয় না। ন্যায়পরায়ণ শাসক। রোজাদার; ইফতার করার পূর্ব পর্যন্ত। মজলুমের দোয়া। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৮০৪৩)
ইমাম নববী (রহ.) বলেছেন, রোজাদারের জন্য রোজাপালনকালে নিজের জন্য, প্রিয় মানুষের জন্য এবং সকল মুসলমানের দুনিয়া ও আখেরাতের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দোয়া করা মুস্তাহাব।
রোজার দিন এই বিষয়গুলো পালন করাও মুস্তাহাব
১. মসজিদে বসে বসে কোরআন তিলাওয়াত করা ও আল্লাহর জিকির করা।
২. শেষ দশদিন ইতিকাফ করা।
৩. বেশি বেশি দান সদকা করা।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)