বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২


হজের পবিত্র সফরে সালাফদের হৃদয়স্পর্শী অভিজ্ঞতা

ধর্ম ডেস্ক

প্রকাশিত:২১ মে ২০২৫, ১২:৩৪

ছবি সংগৃহীত

ছবি সংগৃহীত

হজ ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ, যার মাধ্যমে মুসলমানগণ আল্লাহর ঘরে গিয়ে আত্মার পরিশুদ্ধি ও ঈমানের পুনর্জাগরণ লাভ করে। যুগে যুগে সাহাবি, তাবেঈ এবং ইমামগণ এই সফরকে শুধুমাত্র শারীরিক নয়, বরং আত্মিক ও হৃদয়গ্রাহী এক অভিজ্ঞতা হিসেবে দেখেছেন। তাদের হজের মুহূর্তগুলো আজও আমাদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস।

সাহাবিদের হৃদয়স্পর্শী অভিজ্ঞতা
হজের সফরে সাহাবিগণ ছিলেন পরম বিনয় ও আবেগে পূর্ণ। খলিফা উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) কাবা শরিফের সামনে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন- اللهم أنت السلام ومنك السلام، فحينا ربنا بالسلام. ‘হে আল্লাহ! আপনি শান্তি, আপনার পক্ষ থেকেই শান্তি আসে। আমাদেরকে শান্তিসহ বাঁচিয়ে রাখুন।’

তিনি হজে এসে কাবা শরিফ দেখে আবেগে কেঁদে ফেলেন এবং বলেন- أما والله إنك لبيت عظيم، وإنك لعظيم، ولكن المؤمن أعظم حرمة منك. ‘নিশ্চয়ই তুমি (কাবা) মহান, কিন্তু একজন মুমিনের সম্মান তোমার চেয়েও বড়।’ (মুয়াত্তা মালিক: ২/৮৭)

আরেকজন সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) হজের সময় কাবা শরিফের সামনে দাঁড়িয়ে বলতেন- كم أنت عظيمة! وكم حقك عظيم! ولكن حرمة المؤمن أعظم من حرمتك. ‘তুমি কতই না মহান, আর তোমার সম্মান কতই না বিশাল! কিন্তু একজন মুমিনের সম্মান তোমার চেয়েও বড়।” (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ১০/৩৯৯)

তাবেঈদের হৃদয়ছোঁয়া অনুভব
তাবেঈদের মধ্যেও হজ ছিল এক অপূর্ব আত্মিক অভিজ্ঞতা। প্রখ্যাত তাবেঈ আতাআ ইবনে রাবাহ (রহ.) বলতেন- الحاجّ يغفر له ولمن استغفر له، حتى إن أهل الموقف ليشفع بعضهم في بعض. ‘হজযাত্রীকে ক্ষমা করে দেওয়া হয় এবং যার জন্য সে মাগফিরাত চায় তাকেও ক্ষমা করা হয়। এমনকি আরাফাতের ময়দানে একে অপরের জন্য সুপারিশও গ্রহণযোগ্য হয়।’ (সিয়ারু আলামিন নুবালা, ইমাম জাহবি)

তাবেয়ি মাসরুক ইবনে আজদ (রহ.) আরাফার দিনে এত বেশি কাঁদতেন যে, তার সঙ্গীরা বলতেন, “আমরা মনে করতাম তিনি মৃত্যুর কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন।” (হিলইয়াতুল আওলিয়া, আবু নুয়াইম: ৪/৯২)

ইমামদের হজের অভিজ্ঞতা
ইমাম আবু হানিফা (রহ.) হজে এসে কাবা শরিফ দেখেই তিনি কেঁদে ফেলেন এবং বলেন- ما أعظمك يا بيت الله! ولكن رحمة الله أعظم منك. ‘হে আল্লাহর ঘর! তুমি কতই না মহান! তবে আল্লাহর রহমত তোমার চেয়েও অনেক বড়।’

ইমাম মালিক (রহ.) বলতেন- "الحج المبرور ليس له جزاء إلا الجنة، ومن لم يتهذب بالحج فلا تهذبه العبادة. ‘যার হজ মাকবুল হয়নি, অন্য ইবাদত তাকে সংশোধন করতে পারবে না।’

ইমাম শাফেয়ি (রহ.) হজের সময় দোয়া করতেন- اللهم إني أقف ببابك كما يقف العبد المذنب، فاغفر لي كما تغفر لعبيدك الصالحين.‘হে আল্লাহ! আমি তোমার দরজায় সেই গোনাহগার বান্দার মতো দাঁড়িয়েছি, আমাকে ক্ষমা করে দাও, যেমন তুমি তোমার সৎ বান্দাদের ক্ষমা করো।’

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.) হজের সফর শেষে বলেছিলেন- ما رأيتُ الدنيا إلا كقبر صغير، وأعظم ما رأيتُ في حياتي يوم عرفة. ‘আমি দুনিয়াকে একটি ক্ষুদ্র কবরের মতো মনে করি, আর আমার জীবনের সবচেয়ে বড় দৃশ্য ছিল আরাফাতের দিন।’

একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন- الْحَجُّ الْمَبْرُورُ لَيْسَ لَهُ جَزَاءٌ إِلَّا الْجَنَّةُ ‘মাকবুল হজ বা হজ্জে মাবরুরের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া আর কিছু নয়।’ (সহিহ বুখারি: ১৭৭৩)

এই মহান ইবাদতের প্রতিটি স্তম্ভ আমাদের হৃদয়কে নাড়া দেয়। সালাফদের সেই হৃদয়স্পর্শী অভিজ্ঞতাগুলোই প্রমাণ করে—হজ শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের এক অপূর্ব উপলক্ষ। তাঁদের চোখের অশ্রু, কাবার সামনে বিনম্রতা, আর আরাফাতের দিনে অন্তরের গহীন কান্না আজও আমাদের ঈমান জাগিয়ে তোলে।

সম্পর্কিত বিষয়:

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)
আরো পড়ুন

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

নামাজের সময়সূচি

ওয়াক্ত সময়সূচি
ফজর ০৩:৫০ ভোর
যোহর ১১:৫৫ দুপুর
আছর ০৪:৩৪ বিকেল
মাগরিব ০৬:৪০ সন্ধ্যা
এশা ০৮:০১ রাত

বুধবার ২১ মে ২০২৫