বৃহঃস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১


অন্যের ঘরে প্রবেশে অনুমতি নেবেন যেভাবে

ধর্ম ডেস্ক

প্রকাশিত:১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪, ১৯:২২

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

মানুষ যার যার ঘরে ঘুমায় বা বিশ্রাম নেয়। এছাড়াও ঘরে নারীরা অবস্থান করে। এসব কারণে অন্যের ঘরে প্রবেশের আগে মালিকের অনুমতি নিতে বলে ইসলাম। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ঈমানদাররা, তোমরা নিজেদের ঘর ছাড়া অন্যকারো ঘরে প্রবেশ করো না, যতক্ষণ না অনুমতি গ্রহণ করো এবং তার বাসিন্দাদের সালাম দাও। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম। (এ নির্দেশ দেওয়া হলো), যাতে তোমরা স্মরণ রাখো।’ (সুরা নুর: ২৭)

অন্যের ঘরে প্রবেশে অনুমতি চাওয়ার কিছু আদব রয়েছে। সেগুলো হলো—

১. সালাম দিয়ে অনুমতি প্রার্থনা করা: সালাম দিয়ে তারপর অনুমতি চাওয়াই হাদিসের নির্দেশনা। সাহাবি ও তাবেঈনদের আমলও অনুরূপ এবং এটাই সুন্নতসম্মত। (তিরমিজি: ২৭১০; আবু দাউদ: ৫১৭৭)

২. নাম বলে পরিচয় দেওয়া: ভেতর থেকে পরিচয় জানতে চাওয়া হলে অনুমতি প্রার্থীর কর্তব্য হলো- সরাসরি নিজের নাম বলে দেওয়া বা যে নামে সে পরিচিত সেটা উল্লেখ করা। জাবির (রা.) বলেন, আমার পিতার কিছু ঋণ ছিল। এ সম্পর্কে আলোচনা করার জন্য আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কাছে এলাম এবং দরজায় আঘাত করলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কে? আমি বললাম, আমি। তখন তিনি বলেন, আমি-আমি, যেন তিনি তা অপছন্দ করলেন। (সহিহ বুখারি: ৬২৫০)

৩. দরজা বরাবর না দাঁড়ানো: সরাসরি ঘরের দরজা বরাবর না দাঁড়িয়ে বরং দরজার ডান বা বাম পাশে দাঁড়াতে হবে, যাতে ঘরের ভেতর দৃষ্টি পড়ে না যায়। হুজাইল (রহ) থেকে বর্ণিত আছে, একবার এক ব্যক্তি অর্থাৎ সাদ (রা.) এসে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর ঘরের দরজা বরাবর মুখ করে দাঁড়িয়ে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। রাসুলুল্লাহ (স.) তাকে বলেন, দরজার ডান অথবা বাম দিকে সরে দাঁড়াও। কেননা চোখের দৃষ্টির কারণেই অনুমতি নেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। (আবু দাউদ: ৫১৭৪)

৪. ঘরের ভেতরে দৃষ্টি দেওয়া যাবে না: অনুমতির আগে ঘরের ভেতরে দৃষ্টি দেওয়া অতি নিন্দনীয় ও কুরুচিপূর্ণ কাজ। একবার এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কোনো এক কক্ষে উঁকি দিয়ে তাকাল। তখন রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কাছে একটা ‘মিদরা’ ছিল, যা দিয়ে তিনি তাঁর মাথা চুলকাচ্ছিলেন। তখন তিনি বলেন, যদি আমি জানতাম যে তুমি উঁকি দেবে, তবে এ দিয়ে তোমার চোখ ফুঁড়ে দিতাম। তাকানোর জন্য অনুমতি গ্রহণের বিধান দেওয়া হয়েছে। (বুখারি: ৬২৪১)

৫. অনুমতি না পেলে ফিরে আসা: অনেক সময় বাসায় মানুষ থাকে না। আবার কখনো মানুষ থাকে তবে পুরুষ নয়, ছোট বাচ্চা বা নারী। এমনও হতে পারে যে ঘরে একজনই আছেন কিন্তু নন-মাহরাম। ফলে প্রবেশের অনুমতি দিতে পারছেন না। অথবা ঘরের মালিক ব্যক্তিগত কোনো কাজে ব্যস্ত থাকায় তিনি চাচ্ছেন- এ মুহূর্তে কেউ তার ঘরে প্রবেশ না করুক। এসব অবস্থায় উচিত হলো তিনবার অনুমতি চেয়ে প্রতিউত্তর না পেলে ফিরে আসা। আর যদি ভেতর থেকে সরাসরি ফিরে যেতে বলা হয়, তাহলে অবশ্যই ফিরে যাওয়া। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলার নির্দেশ হলো- ‘আর যদি তাতে কাউকে না পাও, তাহলে তাতে প্রবেশ করো না। যতক্ষণ না তোমাদের অনুমতি দেওয়া হয়। আর যদি তোমাদের বলা হয়, ফিরে যাও, তাহলে ফিরে যেয়ো। এটি তোমাদের জন্য খুবই পরিচ্ছন্ন পদ্ধতি বা পন্থা। আর তোমরা যা করো সে সম্বন্ধে আল্লাহ সম্যক অবগত।’ (সুরা নুর: ২৮)

উল্লেখ্য, সবার জন্য উন্মুক্ত—এমন স্থানে প্রবেশ করতে অনুমতির প্রয়োজন নেই। যেমন- মাদরাসা, মসজিদ, গণমুসাফিরখানা, হাসপাতাল, ডাকঘর ইত্যাদি। একইভাবে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের ঘরে প্রবেশেও অনুমতির প্রয়োজন নেই। এরপরও উত্তম হলো- স্ত্রীর ঘরে অকস্মাৎ ঢুকে না পড়া, বরং গলা খাঁকারি, পায়ের আওয়াজ অথবা অন্যকোনো উপায়ে অবগত করে প্রবেশ করা। জয়নব সাকাফি রা. (আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর স্ত্রী) বলেন, আবদুল্লাহ যখন কোনো প্রয়োজন সেরে দরজায় এসে পৌঁছতেন তখন গলা খাঁকারি দিতেন এবং থুথু ফেলতেন। যাতে অকস্মাৎ আমাদেরকে এমন কোনো অবস্থায় দেখে না ফেলেন যা তার খারাপ লাগবে। (তাফসিরে তাবারি: ১৭/২৪৫; তাফসিরে ইবনে কাসির: ৬/৪১-৪২)

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)
আরো পড়ুন

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

নামাজের সময়সূচি

ওয়াক্ত সময়সূচি
ফজর ০৪:২৯ ভোর
যোহর ১১:৫৩ দুপুর
আছর ০৪:১৭ বিকেল
মাগরিব ০৬:০৩ সন্ধ্যা
এশা ০৭:১৬ রাত

বৃহঃস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪