রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
কোরবানির গোশত হাদিয়া দেওয়া এবং সদকা করা যাবে। কিন্তু পারিশ্রমিক হিসেবে কোরবানির গোশত দেওয়া যাবে না। এ বিষয়ে ফতোয়ার কিতাবাদিতে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, ‘পশু জবাই করে পারিশ্রমিক দেওয়া-নেওয়া জায়েজ, তবে কোরবানির পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া যাবে না। (কিফায়াতুল মুফতি: ৮/২৬৫)
অর্থাৎ পারিশ্রমিক হিসেবে টাকা-পয়সা ইত্যাদি দিতে হবে, কোনো অবস্থাতেই কোরবানির পশুর কোনো কিছু দেওয়া যাবে না। ‘অবশ্য ঘরের অন্যান্য সদস্যদের মতো কাজের লোকদেরকে গোশত খাওয়ানো যাবে।’ (আহকামুল কুরআন জাসসাস: ৩/২৩৭; বাদায়েউস সানায়ে: ৪/২২৪; আলবাহরুর রায়েক: ৮/৩২৬)
দুঃখজনক বিষয় হলো, আমাদের দেশে ব্যাপকভাবে বিনিময় হিসেবে কাজের লোককে টাকার পাশাপাশি কিছু গোশত দেওয়ার প্রচলন রয়েছে। কিছু স্থানে তো এটা নিয়মই হয়ে গেছে যে, যারা কাজ করে, তারা টাকা না নিয়ে গোশত নেবে। এটি জঘন্য প্রকৃতির ভুল। কারণ, পারিশ্রমিক হিসেবে গোশত দেওয়ার অর্থ হচ্ছে- গোশত বিক্রি করা। অথচ কোরবানির পশুর শুধু গোশত নয়, চামড়া বিক্রি করা এমনকি হাড় বিক্রি করাও জায়েজ নেই।
আলী ইবনে আবি তালিব (রা.) বলেন, ‘নবী করিম (স.) আমাকে তার (কোরবানির উটের) আনুষঙ্গিক কাজ সম্পন্ন করতে বলেছিলেন। তিনি কোরবানির পশুর গোশত, চামড়া ও আচ্ছাদনের কাপড় সদকা করতে আদেশ করেন এবং এর কোনো অংশ কসাইকে দিতে নিষেধ করেন। তিনি বলেছেন, আমরা তাকে (তার পারিশ্রমিক) নিজের পক্ষ থেকে দেব।’ (সহিহ বুখারি: ১/২৩২)
কেউ কোরবানির পশুর গোশত চামড়া ইত্যাদি দ্বারা পারিশ্রমিক দিয়ে দিলে যে পরিমাণ পারিশ্রমিক দেওয়া হয়েছে তার মূল্য গরিব-মিসকিনকে সদকা করে দিতে হবে। আর জবাইকারী, কসাই ও কাজে সহযোগিতাকারীদের যথাযথ পারিশ্রমিক দেওয়ার পর স্বেচ্ছায় হাদিয়াস্বরূপ কোরবানির পশুর গোশত দেওয়া যাবে।
হাদিসে যে নিষেধাজ্ঞা এসেছে তা শুধু পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কোরবানির মাংস বিতরণ ও পারিশ্রমিক দেওয়ার বিধানসহ সকল আমল সহিহ সুন্নাহ মোতাবেক করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
(তথ্যসূত্র: আলমুহিতুল বুরহানি: ৮/৪৭১; বাদায়েউস সনায়ে: ৪/২২৫; ফাতহুল বারি: ৪/৬৫০; আদ্দুররুল মুখতার: ২/৬১৬; হাশিয়াতুল শিলবি আলা তাবয়িনিল হাকায়েক: ৬/৪৮৬)
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)