বৃহঃস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১


এই যুগে ঈমান ঠিক রাখা যে কারণে বেশি গুরুত্বপূর্ণ

ধর্ম ডেস্ক

প্রকাশিত:২ জুন ২০২৪, ১৪:১৯

ছবি- সংগৃহীত

ছবি- সংগৃহীত

ঈমান মুসলমানের সর্বোত্তম সম্পদ। ঈমান না থাকলে নেক আমলের মূল্য নেই। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘সময়ের কসম! নিশ্চয়ই সব মানুষ ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত। শুধু তারা ব্যতীত; যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে।’ (সুরা আসর: ১-২)

প্রত্যেক যুগেই একজন মুমিনের জন্য ঈমানের সংরক্ষণ সবচেয়ে জরুরি বিষয়। তবে, বর্তমান ফেতনার যুগে মানুষ অজ্ঞতাবশত ঈমান হারাবে বেশি। হাদিস অনুযায়ী, দ্বীন থেকে বেরিয়ে যাওয়া মহামারি আকার ধারণ করবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘তোমরা অন্ধকার রাতের টুকরোগুলোর মতো (যা একটার পর একটা আসতে থাকে) ফেতনা আসার আগে নেকির কাজ দ্রুত করে ফেলো। মানুষ সেসময় সকালে মুমিন থাকবে এবং সন্ধ্যায় কাফের হয়ে যাবে অথবা সন্ধ্যায় মুমিন থাকবে, সকালে কাফের হয়ে যাবে। নিজের দ্বীনকে দুনিয়ার সম্পদের বিনিময়ে বিক্রি করবে।’ (মুসলিম: ১১৮; তিরমিজি: ২১৯৫, আহমদ: ৭৯৭০, ৮৬৩১, ৮৮২৯)

অর্থাৎ কেয়ামতের আগে মানুষের মধ্যে কুফুরি বিশ্বাস ও কর্ম বেড়ে যাবে। মানুষ এতটাই দুনিয়ামুখী হবে যে দুনিয়ার স্বার্থ হাসিলের জন্য বেপরোয়া হয়ে যাবে। অর্থের বিনিময়ে ইসলামের বিরোধিতা করবে, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে নিয়ে মন্দ কথা বলবে এবং কাফেরদেরকে ইসলামের বিরুদ্ধে সাহায্য করবে। আলেমদের মধ্যে অনেকে টাকা-পয়সার লোভে হারাম জিনিসকে হালাল বলে ফতোয়া দেবে। এভাবে আর্থিক লোভ-লালসার শিকার হয়ে একশ্রেণির মানুষ ইসলামকেই বিক্রি করে দেবে।

হাদিস অনুযায়ী, মানুষ জানতেও পারবে না যে সে আর মুসলিম নেই। অথচ সে নিজেকে মুসলিম দাবি করবে। আমাদের চারপাশেই এরা ঘুরবে, ফিরবে। একই টেবিলে বসে খাবে। আমাদের মেয়ে বোনদের সঙ্গে তাদের বিয়ে হবে। অথচ তারা মুসলিম নয়। তাদের ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, ‘ওই ব্যক্তির চেয়ে বড় জালিম আর কে হতে পারে, যাকে তার রবের আয়াতসমূহ দিয়ে উপদেশ দেওয়া হয় অথচ সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়? অবশ্যই আমি (আল্লাহ) অপরাধীদের কাছ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণকারী।’ (সুরা আস-সাজদাহ: ২২)

বিভিন্ন কারণে মানুষ ঈমানহারা হয়। যেমন আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা, রাসুলুল্লাহ (স.)-এর আনিত বিধানকে অপছন্দ করা, দ্বীনের কোনো বিধান নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা, জাদু করা, মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাফের-মুশরিকদের সমর্থন ও সহযোগিতা করা ইত্যাদি। (দেখুন- সুরা নিসা: ৪৮, ৬৫; সুরা সাজদাহ: ২২; সুরা তওবা: ৬৫-৬৬; সুরা বাকারা: ১০২; সুরা তাওবা: ২৩; সুরা নিসা: ১৪; সুরা নিসা: ৬০; সুরা মায়েদা: ৫১)

প্রিয় পাঠক দেখুন, উল্লেখিত বিষয়গুলো কিন্তু বর্তমান যুগে অতিরিক্ত বেড়ে গেছে। তাই ক্ষণে ক্ষণে নিজের ঈমানকে যাচাই ও সংরক্ষণ করা, প্রয়োজনে নবায়ন করাই হবে বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক। এছাড়াও চুরি-ডাকাতি, সুদ, মাদক, জুলুম, পিতা-মাতার অবাধ্যতা ও অশ্লীলতার মতো কঠিন পাপগুলো তো রয়েছেই। সেইসঙ্গে নামাজ ও জাকাতের মতো মহান ইবাদত থেকে মানুষ একেবারেই গাফেল হয়ে গেছে। যে ফরজগুলো একেবারে ছেড়ে দিলে ঈমান নিয়ে মৃত্যুর সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

এই বিপর্যয় থেকে বাঁচতে হবে এবং নিজেদের ঈমানের সংরক্ষণ করতে হবে। এজন্য আমাদের ফিরে যেতে হবে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (স.)-এর দেখানো পথে। হাদিসে এসেছে, নবীজি (স.) বলেছেন, ‘আমি তোমাদের কাছে দুই বস্তু রেখে যাচ্ছি। তোমরা যতক্ষণ তা ধরে থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত পথভ্রষ্ট হবে না। তা হলো আল্লাহর কিতাব ও তাঁর নবীর সুন্নত।’ (মুয়াত্তা মালিক: ১৬০৪)

হুজাইফা ইবনে ইয়ামান (রা.) বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘তোমরা মুসলিমদের জামাত ও ইমামের সঙ্গে আঁকড়ে থাকবে। আমি বললাম, যদি তাদের কোনো জামাত বা ইমাম না থাকে? তিনি বলেন, ‘তাহলে সেসব বিচ্ছিন্নতাবাদ থেকে তুমি আলাদা থাকবে, যদিও তুমি একটি বৃক্ষমূল দাঁত দিয়ে আঁকড়ে থাকো এবং এ অবস্থায়ই মৃত্যু তোমার নাগাল পায়।’ (মুসলিম: ৪৬৭৮)

ফেতনা থেকে মুক্ত থাকার জন্য প্রিয়নবী (স.) স্বীয় উম্মতকে দোয়াও শিক্ষা দিয়েছেন। একটি দোয়া হলো— উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল ফিতানি, মা জহারা মিনহা ওয়া মা বাতানা।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আমরা আপনার কাছে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সকল ফিতনা থেকে পরিত্রাণ চাই।’ (মুসনাদে আহমদ: ২৭৭৮) দ্বীনের পথে অবিচল থাকার দোয়া হলো—‘ইয়া মুকাল্লিবাল ক্বুলুব সাব্বিত ক্বালবি আলা দ্বীনিক’ অর্থ: হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী, আমার অন্তরকে তোমার দ্বীনের উপর অটল রাখো।’ (তিরমিজি: ৩৫২২)

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে এই ফেতনার জামানায় বেঈমান ও মুরতাদের মিছিলে শামিল হওয়া থেকে হেফাজত করুন। মজবুত ঈমান নিয়ে আল্লাহর দরবারে হাজির হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)
আরো পড়ুন

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

নামাজের সময়সূচি

ওয়াক্ত সময়সূচি
ফজর ০৪:২৯ ভোর
যোহর ১১:৫৩ দুপুর
আছর ০৪:১৭ বিকেল
মাগরিব ০৬:০৩ সন্ধ্যা
এশা ০৭:১৬ রাত

বৃহঃস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪