শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
পবিত্র কুরআনের ১৮নং সুরা হচ্ছে সূরা কাহাফ। মক্কায় অবতীর্ণ সুরা কাহাফের মোট আয়াত সংখ্যা ১১০। রুকু সংখ্যা ১২।
এ সুরার প্রথম থেকে চতুর্থ রুকু পর্যন্ত, ১ থেকে ৩১ নম্বর আয়াতে কুরআনের মাহাত্ম্য এবং মর্যাদা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আরো আলোচনা হয়েছে যারা আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করে তাদের ভয়াবহতা সম্পর্কে। আসহাবে রকিম এবং আসহাবে কাহাফ সম্পর্কেও আলোচনা হয়েছে বিস্তারিতভাবে।
পঞ্চম রুকু। ৩২ থেকে ৪৪ নম্বর আয়াতে দুই ব্যক্তির উপমা দিয়ে আত্মঅহং ও গর্বের পরিণাম কী তা বোঝানো হয়েছে।
ষষ্ঠ রুকু। ৪৫ থেকে ৪৯ নম্বর আয়াতে দুনিয়া আখেরাতের প্রকৃতি ও বাস্তব অবস্থা উদাহরণের মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে। কেয়ামতের দিনের অবস্থা কী তাও বলা হয়েছে সংক্ষেপে।
সপ্তম রুকু। ৫০ থেকে ৫৩ নম্বর আয়াতে হজরত আদম (আ.) এবং ইবলিসের ঘটনা আবার বর্ণনা করা হয়েছে অনেকটা সংক্ষিপ্ত আকারেই।
অষ্টম রুকু। ৫৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহ কুরআনে এতসব উপমা দেন শুধু মানুষকে বোঝানোর জন্যই। এরপরও যারা আল্লাহর প্রতি অনুগত ও কুরআনময় জীবনযাপন না করবে তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক আজাবের ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছে।
৯ম ও ১০ম রুকুর মাঝামাঝি, ৬০ থেকে ৭৪ নম্বর আয়াতে হজরত মুসা এবং খিজির (আ.) এর ঘটনা বিস্তারিত আলেচানা করা হয়েছে। সামনের দিকে এ ঘটনা শেষ হবে।
কুরআনের নির্যাস সুরা ফাতিহা, উচ্চারণ অর্থ ও ফজিলত
নিয়মিত এ সুরা তিলাওয়াতের ফজিলত সম্পর্কে বিভিন্ন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। বিশেষ করে জুমার দিন এ সূরা তিলাওয়াতের ফজিলত অনেক বেশি।
আরও পড়ুন : আমলের মাধ্যমে যশখ্যাতি প্রত্যাশীদের পরিণতি যেমন হবে
আরও পড়ুন :জান্নাতের হুরদের নিয়ে হাদিসে যা বলা হয়েছে
রুহুল মাআনিতে হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেন, সুরা কাহাফ সম্পূর্ণ একসঙ্গে নাজিল হয়েছে এবং এর সঙ্গে সত্তর হাজার ফেরেশতা আগমন করেছেন। এতে বোঝা যায় সূরা কাহাফের মহত্ব অনেক বেশি ।
যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ পাঠ করবে তার নুর এ জুমা থেকে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত চমকাতে থাকবে (মিশকাত ২১৭৫)।
আরেক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ পাঠ করবে সে আট দিন পর্যন্ত সব ধরনের ফেতনা থেকে নিরাপদ থাকবে। যদি দাজ্জাল বের হয় তবে তার ফেতনা থেকেও নিরাপদ থাকবে।
মুসনাদে আহমদে হজরত সাহল ইবনে মুয়াজের রেওয়াতে আছে যে, রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি সুরা কাহাফের প্রথম ও শেষ আয়াতগুলো পাঠ করে তার জন্য তার পা থেকে মাথা পর্যন্ত একটি নুর হয়ে যায়। আর যে ব্যক্তি সম্পূর্ণ সূরা পাঠ করে তার জন্য জমিন থেকে আসমান পর্যন্ত নূর হয়ে যায়।
জুমার দিনে সূরা কাহফ পাঠ করলে কিয়ামত দিবসে তার পায়ের নিচ থেকে আকাশের মেঘমালা পর্যন্ত নুর আলোকিত হবে এবং দুই জুমার মধ্যবর্তী গুনাহ মাফ হবে। (আত তারগিব ওয়াল তারহিব-১/২৯৮)।
হজরত নাওয়াস ইবনে সাময়ান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন সকালে দাজ্জালের কথা আলোচনা করলেন। তিনি আওয়াজকে উঁচু-নিচু করছিলেন। ফলে আমরা মনে করলাম দাজ্জাল খেজুর বাগানের মধ্যেই রয়েছে।
অতঃপর যখন আমরা উনার কাছে গেলাম, তখন তিনি আমাদের অবস্থা বুঝে ফেললেন। তিনি বললেন, তোমাদের কী হলো। আমরা বললাম, আল্লাহর রাসুল! আপনি সকালে দাজ্জালের কথা আলোচনা করেছিলেন, আওয়াজকে উঁচু-নিচু করেছিলেন, তাই আমরা মনে করলাম দাজ্জাল হয়তো খেজুর বাগানেই আছে।
তিনি বললেন, তোমাদের ক্ষেত্রে দাজ্জাল ছাড়া অন্যকিছুতে এত বেশি ভয় আমাকে দেখানো হয়নি।
যদি আমি তোমাদের মাঝে থাকাবস্থায় সে বের হয়, তা হলে তোমাদের ছাড়া আমি সর্বপ্রথম তার প্রতিরোধ করব।
আর যদি তোমাদের মাঝে না থাকাবস্থায় সে বের হয়, তা হলে প্রত্যেকে তার প্রতিরোধ করবে। আল্লাহর শপথ! প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আমার খলিফা রয়েছে। নিশ্চয়ই দাজ্জাল কোঁকড়া চুলবিশিষ্ট যুবক হবে এবং তার চোখ কানা হবে।
যেন আমি আবদুল ওযা ইবনে কাতালের মতো তাকে দেখতে পাচ্ছি। তোমাদের মধ্যে যে তাকে পাবে সে যেন সুরা কাহাফের শুরু অংশ পড়ে। (সহিহ মুসলিম ২৯৩৭, সুনানে আবু দাউদ ৪৩২১, তিরমিজি ২২৪১) (কিছু বর্ণনায় শেষের ১০ আয়াত সম্পর্কে জানা যায় )
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)