শনিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ কার্তিক ১৪৩১


দুই দিনে ৭’শর অধিক রেস্তোরাঁয় হানা, আটক ৪০০

অভিযান আতঙ্কে রেস্তোরাঁ মালিক-কর্মীরা

বিশেষ প্রতিবেদক

প্রকাশিত:৬ মার্চ ২০২৪, ১১:১৬

রাজধানীর রেস্টুরেন্টগুলোতে অগ্নির্নিবাপণ ব্যবস্থার ঘাটতি খুঁজতে অভিযান চলছে। গতকাল মঙ্গলবার বেইলি রোডের সুলতান’স ডাইন সিলগালা করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। ছবি-সংগৃহীত

রাজধানীর রেস্টুরেন্টগুলোতে অগ্নির্নিবাপণ ব্যবস্থার ঘাটতি খুঁজতে অভিযান চলছে। গতকাল মঙ্গলবার বেইলি রোডের সুলতান’স ডাইন সিলগালা করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। ছবি-সংগৃহীত

২৯ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) রাতে বেইলি রোডের ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের পরদিন থেকেই রেস্তোরাঁর অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গতকাল মঙ্গলবারও একাধিক সরকারি সংস্থা বিভিন্ন দোকানে হানা দেয়। বেইলি রোড, খিলগাঁও, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, বাড্ডা, পুরান ঢাকা, উত্তরাসহ রাজধানীর প্রায় সব এলাকায় অভিযান চালানো হয়। গত ২৪ ঘণ্টায় অভিযান চলেছে ২৮৫ রেস্তোরাঁয়। আদালতে প্রসিকিউশন দেওয়া হয়েছিল ২০৪টি। রেস্তোরাকর্মী, ব্যবস্থাপকসহ গ্রেপ্তার করা হয় অন্তত ৪০০ জনকে। সব মিলিয়ে গত দুই দিনে ৭৩০ রেস্তোরাঁয় অভিযান চালানো হয়। আদালতে প্রসিকিউশন দেওয়া হয়েছে ৪৩৩টি।

গতকাল কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অনেক রেস্তোরাঁকে করা হয়েছে জরিমানা, কোনোটি করা হয় সিলগালা। কোথাও ছোটখাটো ত্রুটি থাকলে তাদের মুচলেকা রেখে ছেড়ে দেওয়া হয়। আবার কাউকে জামিন দিয়েছেন আদালত। তবে ধানমন্ডি ও ভাটারা থেকে গ্রেপ্তার ১৯ জনের জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়েছে। কিছু এলাকায় অভিযান শুরুর আগেই টের পেয়ে গা-ঢাকা দেন দোকানকর্মী ও ব্যবস্থাপক। সব মিলিয়ে রেস্তোরাঁ মালিক ও কর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে অভিযান আতঙ্ক।

এদিকে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে এ ধরনের অভিযানকে হয়রানি বলে দাবি করছে রেস্তোঁরা মালিক সমিতি। অভিযানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাউকে হয়রানি করা তাদের লক্ষ্য নয়। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন বলেন, অভিযানে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। নিয়ম মেনে ব্যবসা করতে কারও বাধা নেই। অভিযানের মূল লক্ষ্য হলো রেস্তোঁরার পরিবেশের ব্যাপারে সবাইকে সচেতন করা। যতদিন পরিবেশ উন্নত হবে না, ততদিন অভিযান চলবে।

বেইলি রোডের সুলতান’স ডাইন, নবাবী ভোজ ছাড়াও তিনটি রেস্তোঁরাকে সিলগালা করেছে রাজউক। সেগুলো হলো– পিৎজা মাস্তান, রোস্টার ক্যাফে ও চিলপ। এ ছাড়া বেইলি ডেলি রেস্টুরেন্টে দুই লাখ, ভূতের আড্ডা রেস্টুরেন্টে এক লাখ ও সুইসে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশ থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, রাজধানীতে সবচেয়ে বেশি অভিযান চালানো হয় মতিঝিলে। গত ৪৮ ঘণ্টায় সেখানে ১৩৩টি প্রতিষ্ঠানে হানা দেয় পুলিশ। আদালতে প্রসিকিউশন দিয়েছে ৬৫টি। অভিযানে দ্বিতীয় অবস্থানে উত্তরা; সেখানে ১০৮টি রেস্তোঁরায় অভিযান চলেছে। প্রসিকিউশন দিয়েছে ৮৭টি। রমনা বিভাগে ১০৪টি অভিযান চলেছে এবং ৩২টি প্রসিকিউশন দিয়েছেন আদালতে। লালবাগ বিভাগের অভিযান সংখ্যা ৭৫। প্রসিকিউশন সংখ্যা ৬৪। ওয়ারী বিভাগে অভিযান চলেছে ৮৪টি এবং আদালতে প্রসিকিউশন দিয়েছে ২৪টি। তেজগাঁও বিভাগের অভিযান সংখ্যা ১০৪, প্রসিকিউশন দিয়েছে ৬২টি। মিরপুর বিভাগের অভিযান সংখ্যা ৬৯, প্রসিকিউশন সংখ্যা ৫৮। গুলশান বিভাগে অভিযান চলেছে ৫৩টি, আদালতে প্রসিকিউশন দিয়েছে ৪১টি। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় রেস্তোরাঁ ছাড়াও ঝুঁকিপূর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার রয়েছে এমন ১০৪ দোকানে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। তিনটি রাসায়নিক গুদামেও অভিযান চালানো হয়।

‘সংস্কারকাজের জন্য রেস্টুরেন্ট বন্ধ আছে’– এমন নোটিশ টানানো রাজধানীর বেইলি রোডের সুলতান’স ডাইনের শাখার গেটে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাজউকের ভ্রাম্যমাণ আদালত দোতলা ও তিন তলায় উঠে রেস্তোঁরাটি বন্ধ থাকার প্রমাণ পায়। এর পর নিচতলায় নেমে প্রধান গেট সিলগালা করে দেন আদালত। এর মধ্যেই ভবনটির চার তলার আবাসিক বাসিন্দারা ছুটে আসেন। এই গেট দিয়ে তারাও যাতায়াত করেন। এটি সিলগালা করে দিলে তারা বাসা থেকে বের হতে কিংবা ঢুকতে পারবেন না। ভ্রাম্যমাণ আদালত বিষয়টি আমলে নেন এবং সুলতান’স ডাইনের দোতলা ও তিন তলার গেট সিলগালা করেন। বেইলি রোডের নবাবী ভোজও সিলগালা করে দেয় রাজউক। এ ছাড়া ওই রোডের অন্তত চারটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়।

অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মনির হোসেন হাওলাদার বলেন, রেস্তোরাঁর দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকজন কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। তাদের দাবি, সব কাগজপত্র আছে। যেহেতু কাগজপত্র উপস্থাপন করেনি, তাই আপাতত সিলগালা করা হয়েছে। কাগজপত্র দেখালে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। নবাবী ভোজে সিলগালা বিষয়ে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানটি করা হয়েছে আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে। এ কারণে সিলিগালা করা হয়েছে।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টারের পাঁচ তলায় অবস্থিত ফুডকোর্টে অভিযান চালান ভ্রাম্যমাণ আদালত। অগ্নি সুরক্ষার কাগজপত্র হালনাগাদ না থাকায় সেখানে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ফুডকোর্টের পরিচালক সারফুদ্দিন। তিনি বলেন, আমাদের সবকিছু ঠিকঠাক। ফায়ারের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছি অনেক আগে। তবে সেটি আমরা হাতে পাইনি। বিষয়টি আমি ভ্রাম্যমাণ আদালতকে জানিয়েছিলাম।

রাজধানীর খিলগাঁওয়ে নাইটিঙ্গেল স্কাই ভিউ টাওয়ার আবাসিক ভবনে রেস্তোরাঁ করায় একটি সাত তলা ভবন সিলগালা করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় খিলগাঁওয়ে অভিযান শুরু করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় ভবনটি সিলগালা করা হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাহাঙ্গীর আলম এ আদালত পরিচালনা করেন। তবে খিলগাঁও এলাকায় অভিযানের খবর পেয়ে অধিকাংশ কর্মী রেস্তোরাঁ বন্ধ করে সটকে পড়েন। অভিযানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন করপোরেশনের অঞ্চল-২ এর নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক মোহা. কামরুল হাসান, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক এটিএম শামসুজ্জোহাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

অভিযানের সময় আদালত ৯১৯/১ হোল্ডিংয়ের নাইটিঙ্গেল স্কাই ভিউ টাওয়ারে গেলে সেখানে দ্বিতীয় তলার শর্মা কিং বাদে বাকি সবই ছিল রেস্তোরাঁ। তবে অভিযানের সময় মালিক বা ব্যবস্থাপক কেউ ছিলেন না। তাদের মোবাইল ফোনে কল দিয়েও কথা বলা যায়নি। এ ছাড়া রেস্তোরাঁ কর্মীরাও কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। পরে দুপুর ১২টায় একই ভবনের তৃতীয় তলায় পাস্তা ক্লাব নামে আরেকটি রেস্তোরাঁয় ঢোকেন অভিযানকারীরা। সেখানেও মালিককে পাননি ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় আদালত ভবনের বেজমেন্টসহ যত্রতত্র ঝুঁকিপূর্ণ রান্নাঘর গড়ে তোলায় ভবনটি সিলগালা করা হয়। এ সময় ভবনের সামনে একটি ব্যানার টানিয়ে দেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের প্রতিনিধিরা।

অভিযান বিষয়ে করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমরা সেখানে বেজমেন্টসহ যত্রতত্র রেস্টুরেন্ট এবং অপ্রশস্ত সিঁড়ি দেখতে পাই। এ ছাড়া বিল্ডিং কোড অনুযায়ী সেখানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সিঁড়ি ছিল না।’

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, খিলগাঁওয়ের ৯০ শতাংশ রেস্তোরাঁ বাসাবাড়িতে গড়ে উঠেছে, যা রাজউকের আইন অনুযায়ী অবৈধ।
রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ নামে সাত তলা ভবনে আগুন লেগে ৪৬ জনের মৃত্যুর পর সেখানকার ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির। বৃহস্পতিবার রাতের আগুনের ঘটনার পর ওই এলাকার কিছু দোকান খুলতে শুরু করেছে। বেইলি রোডে মানুষের আনাগোনা এখনও কম।

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)
আরো পড়ুন

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

নামাজের সময়সূচি

ওয়াক্ত সময়সূচি
ফজর ০৪:৫২ ভোর
যোহর ১১:৪৩ দুপুর
আছর ০৩:৪০ বিকেল
মাগরিব ০৫:১৯ সন্ধ্যা
এশা ০৬:৩৩ রাত

শনিবার ৯ নভেম্বর ২০২৪