শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ২৬ পৌষ ১৪৩১
বাংলাদেশের জার্সিতে তামিমকে দলে ফেরাতে ১৬ মাস পর বিসিবি উঠে পড়ে বসেছে। বিপিএলের মাঝেই তামিমের সঙ্গে আলোচনায় বসে জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু। ক্রিকেটে ফেরার বিষয়ে তামিমকে সময় দিয়েছেন নির্বাচকরা। তামিমও বিসিবিকে রাখলেন অপেক্ষায়। বর্তমান অবস্থা এমণ তামিম 'হ্যাঁ' বলতেই তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়ার অপেক্ষা বিসিবির নির্বাচক কমিটি। তাতে প্রশ্ন উঠেছে বিগত বোর্ড প্রধান ও নির্বাচকদের মতো অপ্রত্যাশিত সংস্কৃতির ধারাবাহিকতাই রয়েগেছে এখনও!
আকস্মিকভাবে ২০২৩ সালে জাতীয় দল থেকে অবসরের ঘোষণা দেন তামিম ইকবাল। তবে দুই দিন পার না হতেই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর অবসরের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন টাইগার এই ওপেনার। এরপর বাংলাদেশের জার্সিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে একটি ওয়ানডে খেলে বিশ্রামে যান তিনি। পরের অংশটা বাংলাদেশের ক্রিকেট বোর্ড ও সেই সময়ে নানা নাটকীয়তা ওয়ানডে বিশ্বকাপের স্কোয়াডে জায়গা হয়নি তামিমের।
এরপর মাঝে একটি বছর শেষ হয়ে নতুন আরেক বছর শুরু হয়েছে, তামিমের বাংলাদেশ দলের ভবিষ্যৎ পরিষ্কার হয়নি। দেশের গণমাধ্যমে দিনের পর দিন ধরে যে প্রশ্ন করে এসেছে তার ফেরা নিয়ে। আগের বোর্ড প্রধান নাজমুল হাসান পাপন থাকতেও তামিমকে নিয়ে বেশ বৈঠক হয়। কিন্তু তার কোনও পথ দেখেনি, উল্টো জিয়ে রাখার অপ্রসংস্কৃতি ছিলেন সে সময়ের বোর্ড।
এখন রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে বোর্ডে নীতি নির্ধারক বদলালেও ধোয়াশা আর জিইয়ে রাখার সেই সংস্কৃতি যেনো বদল হয়নি! ১৬ মাস পর বিসিবি উঠে পড়ে বসেছে তামিমকে দলে ভেড়াতে অথচ এর কোনও পরিষ্কার পরিকল্পনা আসেনি। বুধবার আবার এই ইস্যু এসেছে আলোচনায়। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য আইসিসিকে দল দিতে হবে চলতি মাসের ১২ তারিখের মাঝে। এই টুর্নামেন্টে তামিমকে দলে ফেরাতে বিপিএলের সিলেট পর্বে তার সঙ্গে জরুরু বৈঠকে বসে প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু। তাকে খেলার জন্য আহবানও জানান।
লিপু গণমাধ্যমে জানান, ‘আমি বোর্ডের সঙ্গে কথা বলেছি, তাদেরও কোন অসুবিধা নেই। পাশাপাশি খেয়াল করতে হবে, একটা খেলোয়াড়ের ক্ষেত্রে অনেক সময় এ সমস্ত ইস্যুতে ফেরত আসার ব্যাপারে তার ঘনিষ্ঠজন, পরিবার, বন্ধু-বান্ধব অনেক সময়, কিংবা তার প্রিয় কোচ অথবা শুভাকাঙ্ক্ষী, তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার একটা ব্যাপার থাকে। সেক্ষেত্রে একটু সময় নেওয়ার তো ব্যাপার এসেই যায়। আমাদের যেহেতু ১২ তারিখে দল ঘোষণা করতে হবে, তার আগেই আমাদেরকে দলটা দিতে হবে বোর্ডের কাছে। আমাদের কাছে মনে হয়েছে সময় আছে, লেট হিম টেক টাইম, তাড়াহুড়োর কিছু নাই। তিনি একটা টুর্নামেন্ট খেলছেন, আমাদের প্রাথমিক আলোচনা আমরা সেরে নিয়েছি’
অথচ ২০২৩ সালে অবসর ভেঙে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে খেলার পর, বাংলাদেশের ক্রিকেট বোর্ড ও সেই সময়ে নানা নাটকীয়তা ওয়ানডে বিশ্বকাপের স্কোয়াডে জায়গা হয়নি তামিমের। এরপর সাকিব আল হাসানের এক ইন্টারভিউ বেশ আলোড়ন ফেলে ক্রিকেট মহলে। তামিমের দ্বন্দ্বের বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে সাকিবের সেই ইন্টারভিউ থেকে। যা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা তৈরি হয়। এরপর আর কখনোই জাতীয় দলে দেখা যায়নি তামিমকে। আগের বোর্ড প্রধান পাপন অনেকবারই কথা বলেছেন, তবে স্পষ্ট হয়নি তার ফেরা নিয়ে। তামিম নিজের ফেরা নিয়ে ধোয়াশা রেখে গেছেন। বর্তমান বোর্ডও যেনো সেই একই পথের পথিক!
কেননা যদি পাকিস্তান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসতে যাওয়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তামিমকে দলেই রাখতে চাইতেন বর্তমান বোর্ড, তাহলে প্রশ্ন এই টুর্নামেন্টের আগে বাংলাদেশের শেষ দুই সিরিজ আফগানিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে কেনো তাকে দলে নেওয়া হলো না। বড় টুর্নামেন্টের আগে তাকে ঝালিয়ে দেখতে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলানো জরুরি কী ছিলো না। এছাড়া ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হিসেবে ২০২৭ বিশ্বকাপও কী তিনি থাকবেন। কেননা তার জায়গায় নতুন টপ অর্ডারে এসেছে দলে।
২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ থেকে ওপেনিংয়ে তানজিদ হাসান তামিম, লিটন দাস ও সৌম্য সরকারকে খেলতে দেখা গেছে। এখানে একটা ঘাটতি সৌম্য বাদে রান খড়ায় লিটন ও তানজিদ। সেই জায়গায় যদি তামিম ইকবালকে পরিকল্পনায় ও ভেবে থাকে বোর্ড ও নির্বাচক, তার স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই নির্বাচকদের কথাতে। গণমাধ্যমে প্রধান নির্বাচক বলেছেন, ‘তামিমকে খেলতে দেখতে কে না চায়?’
তাতে প্রশ্ন উঠেছে নতুন বোর্ড ও প্রধান নির্বাচকদের নিয়ে। দল নির্বাচনে যদি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনাহীনতায় থাকেন বোর্ড-নির্বাচকরা, তাহলে দেশের পাইপলাইনে থাকা ক্রিকেটাররা নিজেদের ক্যারিয়ারের লম্বা পরিকল্পনা কীভাবে নিবেন?
# মির্জা সাইমা
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)