শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
সময় যায়, বেলা ফুরায়, ক্যারিয়ারের গোধূলী বেলায় সবুজ গালিচাকে জানাতে হয় বিদায়। তুলে রাখতে হয় নিজের প্রিয় বুট জোড়া। তেমনিভাবে এবার ফুটবল ছাড়ার ঘোষণা দিলেন বর্তমান সময়ের বিশ্বের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার টনি ক্রুস।
গতকাল নিজের ইনস্টাগ্রামে একাউন্টে এক দীর্ঘ পোস্টের মধ্য দিয়ে চলতি মৌসুম শেষে ক্লাব ফুটবল ও আগামী মাসে নিজেদের ঘরের মাটিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ইউরো শেষে আন্তর্জাতিক ফুটবল ক্যারিয়ার বিদায় জানানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেন এই ৩৪ বছর বয়সি জার্মান মধ্যমাঠের তারকা।
এরআগে ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত হওয়া ২০১৪ সালে ফুটবল বিশ্বকাপে শিরোপা জিতে জার্মানি। ঐ আসরে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে রিয়াল মাদ্রিদ কর্তৃপক্ষের নজরে পড়েন ক্রুস। পরে ২৫ মিলিয়ন ইউরোতে স্বদেশী ক্লাব বায়ান মিউনিখ ছেড়ে নাম লেখান নিজের স্বপ্নের ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদে। এরপর আস্তে আস্তে ক্লাবটির মিডফিল্ডে সবচেয়ে বড় আস্থার নাম হয়ে ওঠেন তিনি। আর ইতিমধ্যে তার গায়ে লেগেছে মাদ্রিদের ইতিহাসে অন্যতম সেরা মিডফিল্ডারের তমকা। ক্লাবটির হয়ে মোট ২৪টি শিরোপা জিতেন এই কিংবদন্তি মিডফিল্ডার।
গতকাল ফুটবলকে বিদায় জানানোর সেই পোস্টে রিয়াল মাদ্রিদ নিয়ে তিনি বলেন, ‘১৭ জুলাই ২০১৪। সেদিন রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে আমি আমার যাত্রা শুরু করেছিলাম। সেদিনটি আমার জীবন বদলে দিয়েছে। একজন ফুটবলার হিসেবে, একজন মানুষ হিসেবে। ঐদিন বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্লাবের হয়ে আমার নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিল। দীর্ঘ ১০ বছর পর চলতি মৌসুম শেষে আমার রিয়াল মাদ্রিদের অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছে। আমি এই সময়গুলো কখনো ভুলবো না। আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। যারা আমাকে এখানে স্বাগত জানিয়েছে এবং আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছে। প্রিয় মাদ্রিদস্তাস, ধন্যবাদ প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত আপনাদের স্নেহ ও ভালোবাসার জন্য।’
এছাড়াও রিয়াল মাদ্রিদ নিয়ে ক্রুস বলেন, ‘আমি সবসময় বলেছি। রিয়াল মাদ্রিদ আমার শেষ ক্লাব হবে। আমি অনেক আনন্দিত ও গর্বিত। আমার কাছে মনে হয় আমি সঠিক সময়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ অন্যদিকে নিজ দেশ জার্মানির জাতীয় দলকে বিদায় জানানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘একই সঙ্গে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি একজন ফুটবলার হিসেবে এবারের ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপের মধ্যে দিয়ে আমি জাতীয় দলের জার্সিকে বিদায় জানাব।’
এদিকে নিজেদের ওয়েবসাইটে দেওয়া বার্তায় দলের বিভিন্ন সাফল্যের নায়কের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদও। সেই বার্তায় লেখা ছিল, ‘রিয়াল মাদ্রিদ টনি ক্রুসের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা জানাতে চায়, যিনি এরই মধ্যে ক্লাবটির ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছেন এবং তিনি এই ক্লাব ও বিশ্ব ফুটবলের কিংবদন্তিদের একজন। টনি ক্রুস তার অসাধারণ ফুটবল সামর্থ্য এবং এই ক্লাবের জন্য তার নিবেদনের জন্য আজীবন সব মাদ্রিদিস্তাসের হূদয়ে থাকবেন।’
এরআগে ২০১০ সালের ৩ মার্চ আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে জার্মান জাতীয় দলের অভিষেক হয় টনি ক্রুসের। ১৪ বছর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বড় অর্জন ২০১৪ বিশ্বকাপের শিরোপা জয়। ক্লাব ও জাতীয় দল মিলিয়ে মোট ৩৪টি শিরোপা জিতেন ৩৪ বছর বয়সি এই ফুটবলার। যার মধ্যে সর্বোচ্চ ছয় বার ক্লাব বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেন এই মিডফিল্ডার। এছাড়াও পাঁচ বার চ্যাম্পিয়নলিগের শিরোপা, পাঁচ বার ইউরোপিয়ান সুপার কাপ, ন্যাশনাল লিগ চার বার, স্প্যানিশ সুপার কাপ চার বার, স্প্যানিশ কাপ এক বার, বুন্দেসলিগা তিন বার, জার্মান কাপ তিন বার, জার্মান সুপার কাপ দুই বার, চারটি লা লিগার শিরোপা ও এক বার ফিফা বিশ্বকাপ ট্রফি উঁচিয়ে ধরেন টনি ক্রুস। এছাড়াও ব্যক্তিগত অর্জন হিসেবে তিন বার ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হওয়ার পাশাপাশি, একবার বেস্ট প্লেয়ারমার্ক অ্যাওয়ার্ড জিতেন তিনি।
সেইসঙ্গে এখন পর্যন্ত জার্মানি জাতীয় দলের হয়ে মোট ১০৮টি ম্যাচে মাঠে নামেন এই মিডফিল্ডার। সেখানে ১৭টি গোল করেন তিনি। ২০১৪ সালে রিয়াল মাদ্রিদে নাম লেখানোর পর ক্লাবটির হয়ে মোট ৩০৫টি ম্যাচে মাঠে নামেন তিনি। স্প্যানিশ জায়েন্টদের ডেরায় যোগ দেওয়ার আগে ২০০৭ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত জার্মানের সবচেয়ে বড় ক্লাব বায়ান মিউনিখের হয়ে খেলেন ক্রুস। সে সময় নামের সঙ্গে সুবিচার করতে না পারায় ২০০৯-১০ মৌসুমে লোনে বায়ার লেভারকুসেনে এক মৌসুম খেলেন এই তারকা মিডফিল্ডার। আগামী ১ জুলাই ওয়েম্বলিতে চ্যাম্পিয়ন লিগের ফাইনালে বরুশিয়া ডটমুন্ডের বিপক্ষে মাঠে নামবে রিয়াল মাদ্রিদ। এই ম্যাচের মধ্যে দিয়ে ক্লাব ফুটবলকে বিদায় জানাবেন টনি ক্রুস।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)