সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
বাংলাদেশের হকি অঙ্গনের অতি পরিচিত মুখ ফজলু। হকি খেলোয়াড় গড়ার কারিগর হওয়ায় নামের সঙ্গে যোগ হয় ‘ওস্তাদ’। পুরো ক্রীড়াঙ্গন যাকে ওস্তাদ ফজলু হিসেবে চেনে। সেই ফজলু আকস্মিকভাবে আজ সবাইকে ছেড়ে পারি জমিয়েছেন পরপারে।
আন্তর্জাতিক আম্পায়ার শাহবাজ আলীর বসবাস পুরান ঢাকাতেই। ফজলুর প্রয়াণ সম্পর্কে সাবেক হকি খেলোয়াড় ও আম্পায়ার বলেন, ‘বাসায় হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে যান। মিটফোর্ড হাসপাতালে নেয়া হচ্ছিল এর আগেই।’
বাংলাদেশের হকির পাইপলাইন ছিল বিকেএসপি ও পুরান ঢাকা। এই দুই জায়গা থেকেই মূলত হকি খেলোয়াড় উঠে আসত। পুরান ঢাকায় বছরের পর বছর হকি নিয়ে কাজ করেছেন ফজুল । অসংখ্য খেলোয়াড় তার হাতে তৈরি যারা এখন ও বিগত সময়ে জাতীয় দলে খেলেছেন।
হকির অন্যতম সুতিকাগার আরমানিটোলা স্কুল। সেই স্কুলের মাঠে প্রায় প্রতিদিনই তিনি হকি খেলা শেখাতেন। আরমানিটোলা স্কুল ছাড়াও পুরান ঢাকার অনেক শিশু-কিশোরই ফজলুর হাতে হকি খেলা শিখেছেন। ফজলুর চলে যাওয়া হকির বড় শূন্যতা। এই অভাব অপূরণীয় মনে করছেন সাবেক জাতীয় তারকা খেলোয়াড় রফিকুল ইসলাম কামাল, ‘ফজলু ওস্তাদ নিঃস্বার্থভাবে হকি শেখাতেন। তার মতো আর কেউ নেই আর হবেও না। পুরান ঢাকার অনেকেই তার কাছ থেকে শিখে বিকেএসপিতে ভর্তি হয়েছে। আবার কেউ লিগে খেলে জাতীয় দলে এসেছে।’
সাধারণ বীমা, ওয়ান্ডারার্সে খেলেছেন ফজলু। খেলা ছাড়ার পর কোচিংয়ে এসেই পরিচিতি পেয়েছেন। জাতীয় দল বা জুনিয়র দলের কোচের দায়িত্ব না পেলেও কোনো আফসোস ছিল না তার।
খুবই সাদাসিধে জীবনযাপন ছিল ফজলুর। হকি খেলা শিখিয়ে যৎসামান্য আয় হতো তার। এতেই চলতেন। আর্থিক অনটনের চিন্তা-ভাবনা ছিল প্রতিনিয়ত। কয়েক বছর আগে ব্রেন স্ট্রোক করেছিলেন। কয়েক দিন চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে আবার হকি শেখানোর কাজ শুরু করেন। স্বাভাবিক জীবনযাপনের মধ্যেই সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন ফজলু। তৃণমূলে কাজের জন্য জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পুরস্কারের স্বীকৃতি পেয়েছিলেন হকির এই নিবেদিত প্রাণ।
দেশের হকি সব সময় সংকটের মধ্যেই থাকে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরও বিরাজ করছে সংকট। এর মধ্যে ফজলুর চলে যাওয়া আরো বড় সংকট। ফজলুর প্রয়াণে হকি অঙ্গন কাঁদছে।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)