বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১


১৫ দাবি আদায়ে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি বিসিএস শিক্ষক সমিতির

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত:২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭:৩১

ছবিঃ মামুন রশিদ

ছবিঃ মামুন রশিদ

সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারকে ক্যাডার-বহির্ভূতকরণের প্রচেষ্টা প্রতিরোধ এবং শিক্ষা ক্যাডারের ১৫ দফা দাবি পূরণ করতে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশ। সংগঠনটির নেতারা আগামী ২৯ ডিসেম্বরের মধ্যে নিজেদের যৌক্তিক দাবি পূরণ করতে সরকারকে সময় দিয়েছে। ৩১ ডিসেম্বর থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।

তবে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চাইলে আলোচনায় বসতে রাজি আছে জানিয়ে শিক্ষক সমিতির নেতারা বলেছেন, আমরাও চাই আলোচনার মাধ্যমে দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হোক। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান উদ্যোগ না দেখা গেলে সমিতির নেতৃবৃন্দ আলোচনা করে পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করবে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ তাজিব উদ্দিন।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে সংঘটিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে সূচিত ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্যোগে সূচিত রাষ্ট্র পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সংস্কার সাধনের যে অভূতপূর্ব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ১৬ হাজার কর্মকর্তার পক্ষে আমরা তাকে স্বাগত জানাই।

তিনি আরও বলেন, আমরা জানি যে জন আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে সরকার এ লক্ষ্যে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে সংস্কার সাধনের জন্য মোট ১১টি কমিশন গঠন করেছে। আমাদের সবারই প্রত্যাশা ছিলো এই ধারাবাহিকতায় গঠিত জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন রাষ্ট্রের নাগরিকদের সর্বোচ্চ সেবা দানের জন্য উন্মুক্ত এ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে নির্বাচিত দেশের সর্বোচ্চ মেধা ও যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের ২৬ ক্যাডারের মধ্যে বিরাজিত আন্তঃ ও অন্তঃক্যাডার বৈষম্যসমূহ চিহ্নিত করে রাষ্ট্রের সিভিল প্রশাসনকে অধিকতর কার্যকর, গতিশীল ও যুগোপযোগী করার জন্য প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করবে। আমাদের বিশ্বাস ছিলো প্রশাসন, পররাষ্ট্র, কৃষি, স্বাস্থ্য কিংবা পুলিশ ক্যাডারের সঙ্গে একই সময়ে একই সঙ্গে গঠিত বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার এবারে হয়তো গত ৪০ বছর ধরে জমে থাকা সংকটসমূহ থেকে বের হয়ে আসার সুযোগ পাবে এবং শিক্ষা-উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের জনসম্পদকে মানবসম্পদে রূপান্তর করার মধ্য দিয়ে কাঙ্ক্ষিত নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পাবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় এই যে, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান মহোদয় সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে তাদের সুপারিশে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার ও স্বাস্থ্য ক্যাডারকে ক্যাডার বহির্ভূত রাখার যে পরিকল্পনার কথা ব্যক্ত করেছেন, তা বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের অন্যতম বৃহৎ অংশ বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ১৬ হাজার কর্মকর্তাকে তীব্রভাবে আহত করেছে। এ আঘাত এতোটাই প্রকট যে, এটা শিক্ষা ক্যাডারের সকল সদস্যকে অন্তহীন উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এটা রাষ্ট্রকে দীর্ঘ মেয়াদে অস্থিতিশীল করার মতো একটি পদক্ষেপ বলে আমরা মনে করি।

বিসিএস জেনারেল এডুকেশন ক্যাডারের পক্ষ থেকে এ পরিকল্পনাকে প্রত্যাখ্যান করার কথা জানিয়ে সংস্কারের নামে ‘আত্মঘাতী পরিকল্পনা’ থেকে দ্রুত সরে আসার জন্য সংশ্লিষ্ট কমিশনকে অনুরোধ করা হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে।

যে ১৫ দফা দাবি দিয়েছে শিক্ষক সমিতি:

১. বিসিএস সাধারণ শিক্ষাকে ক্যাডার বহির্ভূত করার পরিকল্পনা ও উদ্যোগ থেকে সরে আসার সুস্পষ্ট ঘোষণা দিতে হবে।

২. সকল প্রকার কোটা-বৈষম্য তুলে দিয়ে মেধার ভিত্তিতে সরকারের উপসচিব পদে যোগদান নিশ্চিত করার জন্য তা শতভাগ উন্মুক্ত করে দিতে হবে এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে সকল ক্যাডারের কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে সমান সুযোগ দিতে হবে।

৩. মন্ত্রণালয়সহ ক্যাডার সংশ্লিষ্ট সকল পদে স্ব স্ব ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদায়ন করতে হবে। অর্থাৎ কৃত্য পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

৪. শিক্ষা ক্যাডারসহ সকল ক্যাডারের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।

৫. বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার একটি পেশা-বিশেষায়িত ক্যাডার। তাই সাধারণ শিক্ষার অন্তর্গত সাধারণ ও মাদরাসা শিক্ষা ধারার সকল শিক্ষা স্তর যেমন প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ শিক্ষা কিংবা মাদরাসা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের সকল পদ হতে প্রশাসন ক্যাডারের অপেশাদার ও অশিক্ষক কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করতে হবে। সাধারণ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট যে সব দফতরের নিয়োগ বিধিমালায় অন্যায্যভাবে প্রশাসন ক্যাডারের পদস্তর উল্লেখ করে একতরফা গেজেট করা হয়েছে, তা সংশোধন করে তাতে শিক্ষা ক্যাডারের পদস্তর সংযোজন করতে হবে।

৬. বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে ৬ স্তরের পদসোপান প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

৭. বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের অধ্যাপক পদকে ৩য় গ্রেডে উন্নীত করতে হবে এবং আনুপাতিক হারে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ১ম, ২য় ও ৩য় গ্রেডের পদ সৃষ্টি করতে হবে।

৮. প্রতিটি শিক্ষাস্তরের প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম তদারকির জন্য অঞ্চল, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদ সৃষ্টি ও দফতর স্থাপন করতে হবে। এছাড়া ক্যাডার কর্মকর্তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্রশিক্ষণ একাডেমি ও গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

৯. কলেজ ও দফতর-অধিদফতরসমূহে বিদ্যমান প্যাটার্ন অনুযায়ী শিক্ষক কর্মকর্তা- কর্মচারীদের প্রাপ্য পদ সৃজন করতে হবে।

১০. নিয়মিত রুটিনে বছরে দুইবার সকল টায়ারে একই সঙ্গে পদোন্নতি দিতে হবে। প্রভাষকদের পদোন্নতির শর্তপূরণ হলে যথাদ্রুত ৬ষ্ঠ গ্রেডে পদোন্নতি দিতে হবে।

১১. শিক্ষাকে নন-ভেকেশন ডিপার্টমেন্ট ঘোষণা করতে হবে এবং অর্জিত ছুটি নিশ্চিত করতে হবে।

১২. অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষদের প্রাধিকারের ভিত্তিতে গাড়ি প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।

১৩. বদলি নীতিমালা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

১৪. ক্যাডারে পার্শ্ব প্রবেশ বন্ধ করতে হবে।

১৫. ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স এ শিক্ষা ক্যাডারের মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. রুহুল কাদির, অধ্যাপক ড. খান মইনুদ্দিন আলম মাহমুদ সোহেল, অধ্যাপক সৈয়দ মইনুল হাসান, অধ্যাপক মুহাম্মদ ফাতিহুল কাদির প্রমুখ।

সম্পর্কিত বিষয়:

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)
আরো পড়ুন

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

নামাজের সময়সূচি

ওয়াক্ত সময়সূচি
ফজর ০৫:২০ ভোর
যোহর ১২:১৩ দুপুর
আছর ০৪:১২ বিকেল
মাগরিব ০৫:৫১ সন্ধ্যা
এশা ০৭:০৫ রাত

বুধবার ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫