শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
উপজেলা পরিষদসহ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে নির্দলীয় প্রতীকে নির্বাচন আয়োজনে আইন সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা নেই বলে মনে করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, বর্তমান আইন এমনভাবে রয়েছে যে, দলীয় প্রতীকে বা নির্দলীয় প্রতীকে ভোট করার সুযোগ রয়েছে। রাজনৈতিক দল যদি মনে করে, দলীয় প্রতীকে প্রার্থী দেবে সেটাও করতে পারে। আবার দলীয় প্রতীক না দিয়েও নির্বাচন করতে পারে।
আওয়ামী লীগ এখন মনে করছে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী দেবে না। অন্য রাজনৈতিক দল চাইলে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে পারছে। সুতরাং নির্দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার জন্য আইন সংশোধনের প্রয়োজন নেই।
অন্যদিকে নির্বাচন নিয়ে কাজ করা বিশ্লেষকরা বলছেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন রাজনৈতিক দল ও ভোটারদের অংশগ্রহণমূলক হয়নি। এর অন্যতম কারণ নির্বাচনের ওপর মানুষের আস্থাহীনতা। নির্বাচন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করতে রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তনের পরামর্শ দেন তারা। উপজেলা পরিষদসহ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের ওপর সংসদ সদস্যদের প্রভাব দূর করা এবং স্থানীয় সরকার আইন সংশোধনেরও পরামর্শ দেন বিশিষ্টজনেরা।
শনিবার (৮ জুন) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (আরএফইডি) আয়োজিত ‘স্থানীয় সরকারব্যবস্থা শক্তিশালীকরণে চ্যালেঞ্জ ও নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে তারা এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, দেশে গণতন্ত্র থাকার কারণে নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ে মানুষ বিতর্ক করতে পারছে। আমি দলীয় প্রতীকের পক্ষে কিংবা দলীয় প্রতীকহীন নির্বাচন- এ দুই পদ্ধতির কোনোটির পক্ষে বা বিপক্ষে নই।
ঢাকা-৬ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, ঢাকা শহরে জনগণকে সেবা দিতে হলে নগর সরকারের বিকল্প নেই। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন না দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর সময়োপযোগী যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত।
তৃতীয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আয়োজনের সময়ে নির্বাচন কমিশনার ছিলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। ওই প্রেক্ষাপট টেনে তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হওয়ার কথা ছিল না। রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রের হাতে ক্ষমতা রাখতে নির্বাচনে প্রার্থীদের দলীয় প্রতীক দেওয়া হয়। দলীয় প্রতীক দেওয়ার অর্থ হচ্ছে যাকে মনোনয়ন দেব তাকে ভোট দেবেন।
সাখাওয়াত বলেন, এখন পুরো নির্বাচনব্যবস্থা দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে গেছে। একটি দলের সুবিধা-অসুবিধার জন্য স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক আনা হয়েছিল। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের প্রয়োজন নেই। আগে যেভাবে নির্দলীয় প্রতীকে ভোট হতো, সেভাবেই হওয়া ভালো।
নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তনের পরামর্শ দেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার বেগম কবিতা খাতম। তিনি বলেন, আইনের অস্পষ্টতা ও অসঙ্গতি উপজেরা পরিষদকে অকার্যকর করার জন্য দায়ী। তিনি বলেন, নির্দলীয় বা দলীয় প্রতীক সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ফ্যাক্টর নয়। রাজনৈতিক শিষ্টাচারই বড় কথা
স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণমুক্ত করতে হবে মন্তব্য করে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, দুই কারণে স্থানীয় সরকারব্যবস্থা দুর্বল হয়। এক হচ্ছে- সংসদ সদস্যদের হস্তক্ষেপ এবং দ্বিতীয়ত প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে জনগণের সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে।
সংসদ সদস্যদের ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে সরকারের পদক্ষেপের সমালোচনা করে তিনি বলেন, স্থানীয় উন্নয়নে সংসদ সদস্যদের যুক্ত করা সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে করা উচিত।
নির্বাচনব্যবস্থায় আস্থাহীনতা বিরাজ করছে মন্তব্য করে প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের মুখ্য পরিচালক ড. আব্দুল আলীম বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়নি। সব দল অংশ নেয়নি। ভোটার উপস্থিতি ৪০ শতাংশের কম। নির্বাচনী প্রতিযোগিতামূলক করা গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনের ওপর আস্থা ফিরিয়ে আনা দরকার। এজন্য রাজনৈতিক সমঝোতা প্রয়োজন।
স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান আইন সংশোধনের দাবি জানিয়ে মূল প্রবন্ধে ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, সিটি করপোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের জন্য পৃথক পৃথক আইন রয়েছে। এসব আইন একীভূত করে একটি আইন করা দরকার। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য পৃথক বিধিমালা করা যেতে পারে। একক তফসিলে একই দিনে ভোট করা সম্ভব। এতে নির্বাচনী খরচ কমবে। তিনি বলেন, আমি দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার পক্ষে। যারা নির্বাচন করেন তারা নিরপেক্ষ নন।
রাজনীতি দুর্বৃত্তদের দখলে চলে গেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সমস্যা প্রতীকে নয়। সমস্যা আসলে রাজনীতিতে।
আরএফইডির সভাপতি একরামুল হক সায়েমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনার সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ূন কবীর। সেমিনারে বাংলাদেশ উপজেলা জেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি ও দোহার উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আলমগীর হোসেনসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)