শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
রাজধানী বাসীর জন্য স্বস্তির বার্তা নিয়ে পুরোদমে চালু হয়েছে মেট্রোরেল। মতিঝিল থেকে উত্তরা পর্যন্ত সকাল ৭টা ১০ মিনিট থেকে রাত আটটা ৪০ মিনিট পর্যন্ত চলছে বিদ্যুৎচালিত মেট্রোরেল। ঢাকার চিরচেনা যানজট এড়িয়ে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছতে অনেকে মেট্রোরেলে চলাচল করলেও আজ স্টেশনগুলোতে ভিড় করছেন বহু মানুষ। স্টেশন ও মেট্রোর বগিগুলোয় যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
এমআরটি পাস ব্যবহারকারীরা টিকিট কাটার ঝামেলা এড়িয়ে দ্রুত ট্রেনে উঠতে পারলেও বিপাকে পড়েছেন অন্যরা। মেট্রোর টিকিটের জন্য লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন তারা। তাদের লাইন স্টেশন ছেড়ে সড়ক পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছে। টিকিট কাটতে দীর্ঘসময় লাগায় কাউন্টার বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন যাত্রীরা।
গত শনিবার থেকে পুরোদমে মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর এমন চিত্র দেখা গেছে। সেদিন ছুটির দিন হওয়ার মেট্রোরেলের সব স্টেশনে যাত্রীতে ঠাসা ছিল। রোববার ও সোমবারও এমন চিত্র দেখা গেছে।
সাধারণত রাজধানীতে পিক আওয়ার সকাল নয়টা ও বিকেল পাঁচটা। অফিস শুরু ও শেষের সময়কে কেন্দ্র করে সড়কে এ সময় তীব্র যানজট দেখা যায়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে নগরবাসীর আস্থায় পরিণত হয় মেট্রোরেল। ফলে পিক আওয়ারে স্টেশনগুলোতে ভিড় দেখা যায়। মতিঝিল অংশ পর্যন্ত মেট্রোরেল পুরোপুরি চালু হওয়ার পর থেকে যাত্রীচাপ আরও বেড়েছে। তবে শুধু পিক আওয়ার না অন্য সময়গুলোতেও মেট্রোতে যাত্রীদের চাপ দেখা গেছে।
সোমবার (২২ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে নয়টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সচিবালয় স্টেশনে যাত্রীদের তীব্র চাপ চোখে পড়েছে। সেখানে মোট তিনটি মেশিন ও একটি ম্যানুয়াল বুথের সামনে শতাধিক যাত্রীকে টিকিটের জন্য লাইনে অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে। এছাড়া আগারগাঁও, পল্লবী স্টেশনের যাত্রীদের প্রচুর চাপ।
শুধু টিকিট কাটাই নয়, একই চিত্র মেট্রোতে উঠার সময়েও। টিকিট কাটলেও বগিতে উঠতে পারবেন কি না তা নিয়ে অনেকে উদ্বেগ-উৎকষ্ঠায় আছেন। সচিবালয়ের স্টেশনের যাত্রীরা উঠতে পারলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছার পর কোনো বগিতেই তিল ধরার ঠাঁই নেই। এ সময় অনেক যাত্রীকে এক বগির দরজা থেকে অন্য বগির দরজায় দৌঁড়াতে দেখা যায়।
শাহবাগ স্টেশনে চাপাচাপি করে কিছু যাত্রী উঠতে পারলেও অনেককেই ব্যর্থ হয়ে পরের ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। যাত্রীদের উদ্দেশ্যে নিরাপত্তা কর্মীদের পরবর্তী মেট্রোর জন্য অপেক্ষা করতে বলতে শোনা যায়। স্টেশনগুলোতে নামা যাত্রীর তুলনায় অপেক্ষমাণ যাত্রীর সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি হওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
শেওড়াপাড়া যাওয়ার জন্য পঞ্চাশোর্ধ আব্দুল কাদির সচিবালয় স্টেশন থেকে মেট্রোতে উঠেছেন। নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে এই যাত্রী ঢাকা মেইলকে বলেন, মেট্রোরেলে ধারণক্ষমতার থেকে যাত্রী অনেক বেশি। দুইদিন আগে এই স্টেশনগুলো পুরোপুরি চালু হওয়ার পর যাত্রী অনেক বেড়েছে। সবার লক্ষ্য যানজট এড়িয়ে গন্তব্যস্থলে পৌঁছানো।
তিনি বলেন, ‘এখানে তো তবুও উঠা যায়। উত্তরা ও মিরপুরের স্টেশনগুলো অবস্থা খুবই খারাপ। সেখানে অধিকাংশ ট্রেনে যাত্রীতে ভরা থাকায় ওঠা যায় না। গতকাল বিকেলে আসার সময় দুইটা ট্রেন মিস করে তারপর উঠতে পেরেছিলাম।’
অনভিজ্ঞতায় টিকিট কাটতে বিড়ম্বনা-
অতি জনবহুল ঢাকা মহানগরীর ক্রমবর্ধমান যানবাহন সমস্যা ও পথের দুঃসহ যানজট কমিয়ে আনার লক্ষ্যে মেট্রোরেল স্থাপনের পরিকল্পনা নেয় সরকার। ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর এমআরটি লাইন ৬-এর উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও অংশের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। মেট্রোরেল চালুর এক বছরের বেশি সময় পার হলেও এখনো অনেক যাত্রী স্বয়ংক্রিয় টিকিট কাটায় অনভিজ্ঞ। ফলে টিকিট কাটতে দীর্ঘ সময় লাগছে। আর তাতে দীর্ঘ হচ্ছে টিকিট কাটার লাইন৷ টিকিট মেশিনে সকল নির্দেশনা দেওয়া থাকলেও অভিজ্ঞতা থাকায় অনেককে অন্যর সহযোগিতা নিয়ে টিকিট কাটতে হচ্ছে। ফলে সময় লাগছে। তাছাড়া একের অধিক নোট না দেওয়ার জন্য বলা হলেও অনেকেই এই ভুল করতে দেখা গেছে। ফলে একই কাজ একাধিকবার করতে হয় এবং দ্বিগুণ সময় লাগে।
মেশিনে দেওয়ার পর ময়লা ও ছেঁড়া টাকা ফেরত দেওয়ায় বিপত্তি দেখা দিয়েছে। এছাড়া মেশিনে ভাঙতি অর্থ না থাকায়ও বারবার অর্থ ফেরত দিতে দেখা যায়। এসব কারণে টিকিটের লাইন লম্বা হচ্ছে।
মেট্রোরেলের উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের চলাচল শুরু হয় ২০২২ সালের ২৯ নভেম্বর। এর একদিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেট্রোরেল চলাচল শুরু করে। আর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশে যাত্রী চলাচল শুরু হয় গত ৫ নভেম্বর।
এতদিন উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল করছে সকাল সাতটা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত। আর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলছে সকাল সাতটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত। কিন্তু গত শনিবার থেকে উত্তরা থেকে মতিঝিল অংশে সকাল সাতটা ১০ মিনিট থেকে রাত ৮টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করছে।
এখন অফিস আওয়ারে মেট্রোরেল চলছে ১০ মিনিট পরপর এবং অফপিক আওয়ারে চলছে ১২ মিনিট পরপর। নতুন সূচির প্রথম দিন থেকেই মানুষের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। যানজট ভোগান্তি থেকে রেহাই পেতেই যাত্রীদের অনেকে মেট্রোরেল পছন্দের বাহন হিসেবে বেছে নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)