বৃহঃস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৫, ১৭ মাঘ ১৪৩১
বরিশালের রূপাতলীতে বাস ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও শ্রমিকদের ওপর হামলাকারীদের বিচারের দাবিতে নিরাপত্তা চেয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাস ধর্মঘট শুরু করেছে বাস শ্রমিক সংগঠন। এতে করে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে দক্ষিণাঞ্চলের ১৬ রুটের যান চলাচল। শুধু বাসই নয় দূর পাল্লায় যাত্রী নিতে চাওয়া থ্রি-হুইলারগুলোও আটকে দিচ্ছেন শ্রমিকরা।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) ভোর থেকে এই কর্মসূচি শুরু হয়। এতে করে বরিশাল-খুলনা, পিরোজপুর, মঠবাড়িয়া, পাথরঘাটা, ভান্ডারিয়া, ঝালকাঠি, নলছিটি, বেতাগী, বরগুনা, লেবুখালি, বাউফল, দশমিনা, পটুয়াখালি, আমতলী, কুয়াকাটা ও ভোলা, রুটে দুর্ভোগে পড়েছেন চলাচলকারীরা।
বরিশাল থেকে ঝালকাঠি যাবেন নাজমুন্নাহার। তিনি বলেন, আমি ঢাকা থেকে পরিবহনে এসে রূপাতলীতে নেমেছি। এখান থেকে কোনো রুটে বাস চলাচল করছে না। দীর্ঘক্ষণ বসে আছি, অথচ বাড়িতে জরুরি যাওয়া দরকার।
তিনি বলেন, ঠুনকো ব্যাপারে শ্রমিকদের মারধর করা, বাসে আগুন জ্বালানো ছাত্রদের ঠিক হয়নি। যে বিষয়টি সমাধান করা যেত আলোচনার মাধ্যমে সেটি মনে হচ্ছে অতি উত্তেজনা দেখিয়ে আরও জটিল করা হয়েছে। পাশাপাশি বাস শ্রমিকদেরও উচিত না কথায় কথায় কর্মবিরতিতে যাওয়া। তাদেরও মনে রাখা উচিত এখানে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের প্রয়োজনীয়তা জড়িত।
শিক্ষার্থী সাইদুর রহমান বলেন, গতকাল আমাদের ওপর হামলা চালিয়ে শ্রমিকরা আজকে সব রুটের বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। তারা বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে অবস্থান নিয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে রাস্তায় চলাচল করতে পারছে না।
রূপাতলী শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম চৌধুরী বলেন, শ্রকিদের কাজ ও জীবনের নিরাপত্তার জন্য বরিশাল বিভাগের ১১টি বাস মালিক সমিতি ও ১১টি শ্রমিক ইউনিয়নের ঐক্য পরিষদ মিলে কর্ম বিরতির ডাক দেওয়া হয়েছে। এতে করে ১৬টি রুটে বাস চলাচল বন্ধ আছে।
তিনি বলেন, শ্রমিকরা আজিবন মার খেয়ে যাচ্ছে আর সকলকে ছাড় দিয়ে যাচ্ছে। গতকাল বিনা কারনে আমাদের ওপর হামলা চালায় শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা হাফ ভাড়া দিবে তাতে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু তাদের আইডি কার্ড দেখিয়ে পরিবার, বন্ধু, আত্মীয় স্বজনেরও হাফ ভাড়া করে নেয়। এভাবে হলে আমরা খাবো কি? আমাদেরওতো পরিবার, সন্তান আছে।
আবুল কালাম বলেন, ছাত্ররা গতকাল দলবদ্ধভাবে এসে আমাদের ওপর যেভাবে হামলা করেছে তাতে আমরা জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় আছি। আমাদের পিটিয়ে মেরে ফেললেও কেউ দেখবে না। এসব ভয় থেকেই শ্রমিকরা আর সড়কে গাড়ি চালাতে চাই না।
রূপাতলী বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন সিকদার বলেন, গতকাল ঝালকাঠি রুটের একটি বাসে বিএম কলেজের এক ছাত্রীর হাফভাড়া নিয়ে ঝামেলা হয়েছে শুনেছি। এ বিষয়ে বিচার চাইলে শিক্ষার্থীরা ঝালকাঠি মালিক সমিতির কাছে চাইতে পারতো। কিন্তু রূপাতলীতে বিক্ষোভ করে বাস ভাংচুর, অগ্নি সংযোগ করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে শ্রমিকরা ভয়ে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামতে চাইছে না।
তিনি বলেন, আমি বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছি। শ্রমিকরা আমাকে জানিয়েছেন তারা গাড়ি চালাবে না। তারা যেটা বলেছে, বাস ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও শ্রমিকদের ওপর বিনা কারণে হামলাকারীদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করতে হবে। শ্রমিকরা নিরাপত্তাহীনতায় আছেন।
জিয়া উদ্দিন সিকদার বলেন, বাস বন্ধ থাকলে মালিক সমিতির লোকসান। আমরাও বোঝাচ্ছি যেন শ্রমিকরা দ্রুত কাজে ফেরে।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (২৯ জানুয়ারি) বিকেলে ঝালকাঠি রুটে এক ছাত্রীর সঙ্গে অশোভন আচরণের অভিযোগ তুলে রূপাতলী বাস টার্মিনালে বিক্ষোভ ও অবরোধ করে সরকারি ব্রজমোহন কলেজের শিক্ষার্থীরা। এসময়ে শ্রমিকদের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থানকারী বাস ভাঙচুর করে এবং টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখে। তারা অসৌজন্য আচরণকারী শ্রমিক, হামলাকারী শ্রমিক গ্রেপ্তারসহ ৮ দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। পরে প্রশাসনের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা সাড়ি তিন ঘণ্টা পর সড়ক ছেড়ে দেয়। এদিকে রাতেই কর্মবিরতির ঘোষণা দেন পরিবহন শ্রমিকরা।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)