বৃহঃস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫, ৮ শ্রাবণ ১৪৩২
ছবি সংগৃহীত
নাটোরের বড়াইগ্রামে ট্রাকের সঙ্গে মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে আটজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহত আটজনের মধ্যে পাঁচজনের গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ধর্মদহ গ্রামে। তারা একই পরিবারের সদস্য। বাকিরা তাদের স্বজন ও গাড়িচালক। তারা মাইক্রোবাসে করে বাড়ি থেকে সিরাজগঞ্জে অসুস্থ রোগীকে দেখতে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে ট্রাকের ধাক্কায় তাদের সকলের মৃত্যু হয়।
বুধবার (২৩ জুলাই) সকাল ১০টার দিকে উপজেলার আইড়মারী এলাকার তরমুজ পাম্পের সামনে বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
একই পরিবারের পাঁচজনসহ আটজনের মর্মান্তিক মৃত্যুর খবরে ধর্মদহ গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। কান্নায় ভেড়ে পড়েছেন স্বজনরা। চলছে শোকের মাতম। আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী, আশপাশের এলাকার মানুষসহ সকলেই নিহতদের বাড়িতে এসে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। একই পরিবারের পাঁচজনের মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর শুনে নিহতদের বাড়িতে জড়ো হয়েছে হাজারো মানুষ।
নিহতরা হলেন- কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ধর্মদহ গ্রামের মৃত জিল্লুর রহমানের ছেলে জাহিদুল ইসলাম (৫৫), তার স্ত্রী সেলিনা খাতুন (৫০), শহিদুল ইসলামের স্ত্রী আনোয়ারা খাতুন আন্না (৫৫), মিজানুর রহমানের স্ত্রী আনোয়ারা খাতুন আনু (৫০), নিহত জাহিদুলের বোন প্রাগপুর গ্রামের রফেজ চৌধুরীর ইতি খাতুন (৪০), একই গ্রামের জয়নাল আবেদীনের ছেলে সাহাব হোসেন (৩৫), মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বেতবাড়ীয়া গ্রামের মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী আঞ্জুমানারা (৭৫) এবং সাহাব হোসেন রুবেল (৩৫)।
নিহত জাহিদুলের চাচাতো ভাই অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য জানারুল ইসলাম বলেন, বুধবার সকাল ৭টার দিকে মাইক্রোবাসে করে সিরাজগঞ্জে রোগী দেখতে যাচ্ছিলেন সবাই। জাহিদুলের ছেলে সোহানের অসুস্থ স্ত্রীকে দেখতে যাচ্ছিলেন। এ সময় ট্রাকের ধাক্কায় আটজন মারা গেছেন। ধর্মদহ গ্রামের পাঁচজন মারা গেছেন। তাদের মধ্যে একজন মাইক্রোবাসের চালক। বাকি চারজন একই পরিবারের সদস্য। এছাড়াও নিহত জাহিদুলের বোন প্রাগপুর গ্রামের ইতি, গাংনীর বসতবাড়িয়া গ্রামের জাহিদুলের শাশুড়ি ও শালিকা মারা গেছেন। তাদের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
জানা গেছে, বুধবার সকাল ১০টার দিকে বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের তরমুজ পাম্প এলাকায় মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলেই পাঁচজনের মৃত্যু হয়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তিনজনকে বড়াইগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে একজনের মৃত্যু হয়। বাকি দুজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে ওই দুজনেরও মৃত্যু হয়।
নিহতদের স্বজন আব্দুর রাজ্জাক বলেন, নিহতরা আমার আত্মীয়-স্বজন। সিরাজগঞ্জ জেলার কামারখন্দ উপজেলার নান্দীরামধু গ্রামে অসুস্থ পুত্রবধূ শাফিয়া বেগমকে দেখতে যাচ্ছিলেন সবাই। পথে দুর্ঘটনায় গাড়িতে থাকা আটজনের সবাই মারা গেছেন।
নিহত জাহিদুল ইসলামের চাচাতো ভাই মানজারুল ইসলাম খোকন বলেন, আমার চাচাতো ভাইয়ের দুই ছেলে প্রবাসে থাকেন। দুই দিন আগে এক ছেলের স্ত্রীর অপারেশন হয়েছে। তিনি দেশে তার বাবার বাড়ি সিরাজগঞ্জে থাকেন। তাকে দেখতে যাওয়ার জন্য সকাল ৭টার দিকে একটি মাইক্রোবাস ভাড়া নিয়ে তারা সিরাজগঞ্জ যাচ্ছিলেন সবাই। এ সময় পথিমধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় পরিবারের সাতজনসহ গাড়িচালক মারা গেছেন।
বনপাড়া হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেন বলেন, মরদেহ হস্তান্তর ও অন্যান্য আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।
দৌলতপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোলাইমান শেখ বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের পাঁচজন, তাদের স্বজন ও গাড়িচালক মারা গেছেন। তাদের মধ্যে পাঁচজনের বাসা ধর্মদহ। একজন প্রাগপুর ও বাকিরা গাংনীর বসতবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)