বুধবার, ২০ আগস্ট ২০২৫, ৫ ভাদ্র ১৪৩২
ছবি সংগৃহীত
কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষক, ছাত্র প্রতিনিধিসহ অন্তত ২০ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
বুধবার (২০ আগস্ট) সকাল ৮টার দিকে কর্মসূচির অংশ হিসেবে উপজেলা সদরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রবেশমুখে অবস্থান নিয়ে এনজিওর যানবাহনগুলো প্রবেশে বাধা দেন আন্দোলনকারীরা।
এ সময় পুলিশ লাঠিচার্জ করলে নারীসহ তিন শিক্ষক গুরুতর আহত হন, আটক করা হয় আন্দোলনের মুখপাত্র সাইদুল ইসলাম শামীমসহ অন্তত ৭ জনকে। এরপর বেলা ১১টার দিকে উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আহতদের দেখতে যাওয়া আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে পুলিশ।
আন্দোলনে সংহতি জানানো ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে কক্সবাজারের ছাত্র প্রতিনিধি ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেত্রী জিনিয়া শারমিন রিয়াসহ অন্তত ১৩ জনকে দ্বিতীয় দফায় পুলিশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে আটক করে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে আটকের সময় জিনিয়াকে পুলিশের উদ্দেশে বলতে শোনা যায়—‘আমি অধিকারের জন্য কথা বলছি, আমি কি ছাত্রলীগ..?’
আটকের খবর ছড়িয়ে পড়লে উখিয়া থানা ফটকে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন কমপক্ষে ৫ শতাধিক আন্দোলনকারী।
‘ভুয়া ভুয়া’সহ বিভিন্ন স্লোগানে-স্লোগানে তারা আটককৃতদের অনতিবিলম্বে মুক্তির দাবি জানানোর পাশাপাশি ওসির পদত্যাগ দাবি করেন। এ সময় থানায় প্রবেশের পথে আটকে দেওয়া হয় প্রিজন ভ্যান।
দুপুর দেড়টার দিকে থানায় প্রবেশ করেন এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব এস এম সুজা উদ্দিনের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল।
থানায় প্রবেশের আগে জিনিয়াসহ তার দুই সহযোদ্ধাকে আটক করা হয়েছে জানিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমরা সুষ্ঠু সমাধানের জন্য এসেছি৷ উখিয়া কোনো আলাদা দেশ নয় যে এখানে আন্দোলন করা যাবে না। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং সম্মানের সহিত তাদের ছেড়ে দিতে হবে।
এনসিপি নেতৃবৃন্দের উপস্থিতির পর আলোচনায় অংশ নিতে থানায় প্রবেশ করেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সরোয়ার জাহান চৌধুরীসহ বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল। বিকেল ৩টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্থানীয় বাংলাদেশি শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন। তবে অর্থ সংকটের কারণ দেখিয়ে গত জুলাইয়ে প্রায় দেড় হাজার স্থানীয় শিক্ষককে চাকরি থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়। এ সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষকরা ধারাবাহিকভাবে আন্দোলনে নামেন।
গত সোমবার সকাল ৮টা থেকে বিকেলে ৪টা পর্যন্ত তারা কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়ক অবরোধ করেন। এ সময় উভয় পাশে শত শত গাড়ি আটকা পড়ে, যাত্রী ও চালকরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন।
চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের দাবি, প্রশাসন সমাধানের আশ্বাস দিলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে তারা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছেন।
বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আশ্রয় শিবিরে সাড়ে ৪ হাজারের অধিক শিক্ষাকেন্দ্র চালু আছে। এসব ‘লার্নিং সেন্টারে’ প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার শিশু পড়াশোনা করে।
ডিএস /সীমা
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)