শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ৮ কার্তিক ১৪৩২
ছবি : সংগৃহীত
মুন্সীগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তিন হত্যা মামলাসহ সাত মামলার আসামি নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা সাজ্জাত হোসেন সাগরের (৩৫) ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) দুপুরে মুন্সীগঞ্জ আমলি আদালত-১ এর বিচারক মো. আশীকুর রহমান এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আসামি সাজ্জাত হোসেন সাগর মুন্সীগঞ্জ শহর শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, দুপুর ২টার দিকে ছাত্রলীগ নেতা সাজ্জাত হোসেন সাগরকে কঠোর নিরাপত্তায় মুন্সীগঞ্জ আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় সেনা সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সাগরকে আদালতে হাজির করার খবরে দুপুর ১টা থেকে আদালত প্রাঙ্গণে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে ছাত্র-জনতা। এ সময় তারা সাগরের ফাঁসি চাই বলে স্লোগান দিতে থাকেন। সাগরকে বহন করা প্রিজনভ্যানে ডিম ছুড়তে থাকেন। এক নারীকে প্রিজনভ্যানে ঝাড়ু দিয়ে পেটাতে দেখা যায়। প্রিজনভ্যান ঘিরে বিক্ষোভ করতে থাকলে সেনাসদস্যরা কিছু বিক্ষোভকারীর ওপর চড়াও হয়ে লাঠিপেটা করেন। পরে কঠোর নিরাপত্তায় সাগরকে মুন্সীগঞ্জ আমলি আদালত-১ এ হাজির করা হয়।
এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ সজল হত্যা মামলায় সাগরের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন শুনানি হয়। শুনানিতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার পাশাপাশি অংশ নেন মুন্সীগঞ্জ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট হালিম হোসেন। শুনানি শেষে আদালতের বিচারক ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে গতকাল বুধবার গভীর রাতে ঢাকা হতে সাগরকে গ্রেপ্তারের পর বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) ভোর ৫টার দিকে মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়।
জানা যায়, ৫ আগস্টের পর দক্ষিণ কোরিয়ায় পালিয়ে গিয়েছিলেন সাগর। কিন্তু ভিসা জটিলতার কারণে সম্প্রতি দেশে ফিরে এসে বসবাস শুরু করেন ঢাকায়। ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট মুন্সীগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা ও হত্যার দায়ে দায়েরকৃত একাধিক মামলার আসামি সাজ্জাত হোসেন সাগর।
মুন্সীগঞ্জ সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম সাইফুল আলম বলেন, সাগরের বিরুদ্ধে তিনটি হত্যা মামলাসহ মোট সাতটি মামলা রয়েছে।
মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ফিরোজ কবীর বলেন, ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যান সাগর। পরে কোরিয়াতে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে আটক হওয়ার পর বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয় তাকে। সম্প্রতি কঠোর গোপনীয়তায় দেশে ফিরে ঢাকায় বসবাস শুরু করেন সাগর। গত এক মাস যাবৎ সাগরকে অনুসরণ শুরু করে মুন্সীগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশ। এর মধ্যে গতকাল রাতে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে।
এ ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) হালিম হোসেন বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মুন্সীগঞ্জে গুলিতে সজল মোল্লা নিহত হন। সজল মোল্লাকে গুলি করেছিলেন এই সাগর। পুলিশ তাকে দীর্ঘদিন যাবৎ খুঁজছিল। গতকাল ঢাকার ডেমরা এলাকা হতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ১০ দিন রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। আমরা ১০ দিন রিমান্ডের পক্ষে যৌক্তিকতা তুলে ধরেছি। ছবি-ভিডিও বিজ্ঞ আদালতে দাখিল করেছি। সে অনুযায়ী বিজ্ঞ আদালত তার ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট সারাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থনে মুন্সীগঞ্জে কর্মসূচি পালন করতে জড়ো হয় কয়েক হাজার ছাত্র-জনতা। এ সময় অস্ত্র-ককটেল নিয়ে তাদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। নিরস্ত্র আন্দোলনকারীরা ইটপাটকেল-লাঠিসোঁটা নিয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করলে সংঘর্ষ বাঁধে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন মুন্সীগঞ্জ শহরের উত্তর ইসলামপুর এলাকার সজল মোল্লা, রিয়াজুল ফরাজী ও ডিপজল। এছাড়াও আহত হন শতাধিক ব্যক্তি। এসব ঘটনায় তিনটি হত্যা মামলা ও হত্যাচেষ্টাসহ একাধিক মামলাতে আসামি করা হয়েছে সাজ্জাত হোসেন সাগরকে।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)