শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
বগুড়ায় ফাঁড়িতে ঢুকে পুলিশের সামনেই যুবলীগ নেতাকে পিটিয়ে আহত করে বগুড়া-৬ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান রিপুর সঙ্গে আসা অনুসারীরা। ঘটনার এক সপ্তাহ পার হলেও পুলিশ মামলা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
মারধরের শিকার জিয়াদুশ শরিফ পরাগ জেলা যুবলীগে উপ-প্রচার সম্পাদক। তার দাবি, সংসদ সদস্যের ছেলে প্রতীত আহসানের নাম এজাহারে থাকায় মামলা নিতে গড়িমসি করছে পুলিশ।
যুবলীগ নেতা জিয়াদুশ বলেন,‘ঘটনার পর তিনদিন মামলা দায়েরের জন্য থানায় গিয়েছিলাম। তবে সেখানে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা নানারকম তালবাহানা করে ফিরিয়ে দেন। এমনকি এমপির ছেলের বিরুদ্ধে কিভাবে মামলা করবেন? বলে উল্টো প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় পুলিশ। থানায় গিয়ে ন্যায় বিচার পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। এমপির চাপে বা ভয়ে পুলিশ মামলা নিচ্ছে না।’
এ যুবলীগ আরও বলেন, ‘ঈদের পর থানাতে আর যাইনি। আদালতে মামলা দায়েরের জন্য আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করে একটি এজাহারও দায়ের করেছি। আমি এখনও অসুস্থ। হাত, পা, পিঠ ও মাথার বিভিন্ন স্থানে গুরুতর জখম আছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামীকাল বুধবার (১৭ এপ্রিল) আদালতে মামলা দাখিল করব।’
থানায় জমা দিতে যাওয়া যুবলীগ নেতা জিয়াদুশের অভিযোগে বগুড়া-৬ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপুর পুত্র প্রতীত আহসান, শিবগঞ্জের পিরব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আসিফ মাহামুদ, তার ছেলে আবির মাহামুদসহ নিঝুম আনসারী নাহিদ ও সিজান নামের দুই যুবককে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও অজ্ঞাতপরিচয়ে আসামি করা হয়েছে ৩৫ থেকে ৪০ জনকে।
এর আগে, ৭ এপ্রিল রাত ১১টার দিকে শহরের সাতমাথায় জিলা স্কুলের ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন শাজাহানপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রঞ্জু। এসময় বেপরোয়া গতিতে উল্টো পথে মোটরসাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলেন শিবগঞ্জ উপজেলার পিরব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আসিফ মাহামুদের ছেলে আবির। আবিরের মোটরসাইকেলটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ছাত্রলীগ নেতার রঞ্জুকে ধাক্কা দেয়। এ নিয়ে দুজনই বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে রঞ্জুর পক্ষ নিয়ে যুবলীগ নেতা পরাগ ও আদনান আবিরের ওপরে চড়াও হন। খবর পেয়ে আবিরের বন্ধু ও এমপি পুত্র প্রতীত আহসান ৩০ থেকে ৩৫ জনকে সঙ্গে নিয়ে ছাত্রলীগ নেতা রঞ্জুর ওপরে হামলার চেষ্টা করেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা হট্টগোল দেখতে পেয়ে দুই পক্ষকে আটক করে সদর ফাঁড়িতে নিয়ে যায়।
সেখানে ফাঁড়ি পুলিশের ইনচার্জ (পরিদর্শক) সুজন মিঞ্জার কক্ষে দুই পক্ষ মীমাংসার জন্য বসে। এরই মধ্যে এমপি রাগেবুল আহসান রিপু ছেলের আটকের খবর জানতে পেরে প্রায় অর্ধশত অনুসারী নিয়ে নিজের ব্যবহৃত গাড়ির হুইসিল বাজিয়ে ফাঁড়িতে আসেন। এমপি আসার খবরে যুবলীগ নেতা পরাগ ও আদনান পুলিশ পরিদর্শক সুজনের কক্ষ থেকে বেরিয়ে ফাঁড়ির চত্বরে আসেন। এ সময় কিছু বুঝে উঠার আগেই পুলিশ কর্মকর্তাদের সামনে ওই দুই যুবলীগ নেতাকে পেটাতে শুরু করেন এমপি অনুসারীরা। হামলাকারীদের আটক না করে পুলিশ উল্টো পরাগ ও আদনানকে ছাত্রলীগ নেতা রঞ্জুসহ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শকের কক্ষে আটক রাখে। এসময় রাগেবুল আহসান ছেলে ও হামলাকারীদের নিয়ে গাড়িতে করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। রাত ১টার দিকে পরাগ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পরলে তাকে পুলিশের হেফাজতে সরকারি মোহাম্মাদ আলী হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এছাড়াও নানা নাটকীয়তার পর ছাত্রলীগ নেতা রঞ্জু ও যুবলীগ নেতা আদনানকে ভোর সাড়ে ৩টার দিকে ফাঁড়ি থেকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। ঘটনার পরদিন শহরের সাতমাথায় প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে ৭২ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেয় যুবলীগ। তবে বেঁধে দেওয়া সময় পেরিয়ে গেলেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকেও নতুন কোনো কর্মসূচি ঘোষণাও করা হয়নি।
এ নিয়ে সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান রিপু সেই সময় গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘আমি ছেলেকে নিতে পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়েছিলাম। সেখানে কারা মারধর করেছে, আমি জানি না। ঘটনাটি দুঃখজনক।’
বগুড়া জেলা যুবলীগের সভাপতি শুভাশীষ পোদ্দার লিটন বলেন, এ নিয়ে পরাগের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মামালা না নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরাফত ইসলাম দায় এড়িয়ে যান। সদর থানার ওসি সাইহান ওলিউল্লাহর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)