শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
ইঞ্জিন ও লোকোমাস্টার সংকটের কারণ দেখিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে চলাচলকারী একমাত্র বিশেষ ট্রেনটি। বৃহস্পতিবার (৩০ মে) থেকে এটি বন্ধ রয়েছে। যদিও আগামী ১০ জুন পর্যন্ত ট্রেনটি চলাচল করার কথা ছিল।
এদিকে, ট্রেনটি বাতিল করে দেওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন যাত্রীরা। তাদের দাবি চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ হয়েছে ঠিকই। কিন্তু এই রুটে চট্টগ্রাম থেকে কোনো ট্রেন দেওয়া হয়নি। শুধু ঢাকা থেকে দুটি ট্রেন চলাচল করে। এসব ট্রেনে চট্টগ্রামের জন্য সীমিত আসন নির্ধারিত রয়েছে। ফলে বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করে রেলপথ বর্ধিত করার কোনো সুফল পাচ্ছে না চট্টগ্রামের বাসিন্দারা।
যাত্রীদের দাবি ও আন্দোলনের মুখে গত ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে বিশেষ ট্রেন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। গত ৮ এপ্রিল এই ট্রেন চলাচল শুরু হয়। এরপর থেকেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ট্রেনটি। যাত্রীদের চাপে বিশেষ ট্রেনের সময় দুই দফা বাড়িয়ে ১০ জুন পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছিল। কিন্তু এর আগেই ট্রেনটি বন্ধ করে দেওয়া হলো।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সহকারী প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (এসিওপিএস) কামাল আখতার হোসেন স্বাক্ষরিত জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রেলওয়ের মহাপরিচালকের কার্যালয় থেকে কক্সবাজার স্পেশাল-৩ ও ৪ ট্রেনটি আগামী ১০ জুন পর্যন্ত চলাচলের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু যান্ত্রিক বিভাগ থেকে ইঞ্জিন ও লোকোমাস্টারের সংকট থাকার কথা জানানো হয়েছে। এজন্য কক্সবাজার বিশেষ ট্রেন ৩০ মে থেকে ১০ জুন পর্যন্ত বাতিল করা হলো।
চট্টগ্রামের একটি কলেজের ছাত্র ও কক্সবাজারের বাসিন্দা দিদারুল আলম বলেন, গত ঈদে ট্রেনটি দিয়ে বাড়িতে গিয়েছিলাম। এরপর আরেকবার বাড়িতে গিয়েছিলাম। এখন শুনেছি ট্রেনটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কারণ বলা হয়েছে ইঞ্জিন ও লোকোমাস্টার সংকট। এত টাকা খরচ করে রেলপথ নির্মিত হয়েছে। কিন্তু জনবল ও ইঞ্জিন সংকটের কারণ দেখানো দুঃখজনক। আমাদের দাবি চট্টগ্রাম কক্সবাজার রুটে একাধিক ট্রেন চালু হোক।
এ বিষয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) সাইফুল ইসলাম বলেন, ইঞ্জিন ও লোকোমাস্টারের সংকটের কারণে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের বিশেষ ট্রেন ৩০ মে থেকে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এটি স্থায়ী না কি সাময়িক তা এখনো বলা যাচ্ছে না।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের বিশেষ ট্রেনটি চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে প্রতিদিন সকাল ৭টায় ছেড়ে কক্সবাজার পৌঁছায় সকাল ১০টা ২০ মিনিটে। আবার কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছাড়ে সন্ধ্যা ৭টায়। চট্টগ্রামে পৌঁছায় রাত ১০টায়। যাত্রাপথে ট্রেনটি ষোলশহর, জানালিহাট, পটিয়া, দোহাজারী, সাতকানিয়া, চকরিয়া, ডুলাহাজারা ও রামু স্টেশনে থামে এবং যাত্রী পরিবহন করে। মোট ১০টি বগিতে আসন রয়েছে ৪৩৮টি। বিশেষ ট্রেনে শোভন শ্রেণির আসনের জন্য সর্বনিম্ন ভাড়া ৪৫ টাকা, প্রথম শ্রেণি আসনের জন্য ১৮৫ টাকা। তবে কক্সবাজার পর্যন্ত এই ভাড়া যথাক্রমে ১৮৫ ও ৩৪০ টাকা।
দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প ২০১০ সালের ৬ জুলাই একনেকে অনুমোদন পায়। ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকার এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে। এটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালের ৩০ জুন। পরে এক দফা বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ করা হয় ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। যদিও এর আগে প্রকল্পের কাজ মোটামুটি শেষ হয়ে যায়। গত বছরের ১১ নভেম্বর চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ১ ডিসেম্বর ২৩ তারিখ থেকে বাণিজ্যিকভাবে ঢাকা-কক্সবাজার ট্রেন চলাচল শুরু হয়।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)