শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
ছাতকে বন্যা পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতি ঘটেছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল এবং মুষলধারে বৃষ্টির কারণে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমা ছাড়িয়ে গেছে। ভয়াবহ রূপ নিয়েছে সুরমা, চেলা ও পিয়াইন নদী। পাউবোর তথ্য মতে মঙ্গলবার (১৮ জুন) নদীর পানি বিপৎসীমার ১৩৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ছাতক পৌরশহরের বাগবাড়ী, মন্ডলীভোগ, হাসপাতাল রোড, তাঁতিকোন, বৌলা, চরেরবন্দ, মোগলপাড়া, ঢাকাইয়া বাড়ি, লেবারপাড়া, পাটনীাড়া, কুমনা, শ্যামপাড়াসহ আবাসিক এলাকায় বন্যার পানি প্রবেশ করায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে এসব এলাকার বসবাসরত মানুষজন। ইতোমধ্যেই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় একাধিক আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিত মানুষের জন্য শুকনো খাবারসহ প্রাথমিক সব ব্যবস্থা রেখেছে উপজেলা প্রশাসন।
ছাতকসহ পার্শ্ববর্তী কোম্পানীগঞ্জ ও দোয়ারাবাজার উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যেই ছাতকের বহু গ্রামীণ সড়ক বন্যার পানিতে তলিয়ে গিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ।
ছাতক পৌর এলাকার বাসিন্দা মাসুদ আমান বলেন, ২২ এর বন্যার চেয়ে ভয়ানক রুপ নিচ্ছে এবারে বন্যা। আমরা ছেলে-মেয়ে নিয়ে বিপাকে আছি। আমার ২ মেয়ের কেউ সাঁতার জানে না। কী হবে এখনো জানি না।
বাগবাড়ি এলাকার বাসিন্দা জামি আহমেদ বলেন, পরিবারের সবাইকে নিয়ে নিরাপদেই আছি। কিন্তু আমাদের গবাদি পশু নিয়ে পড়েছি বিপাকে। আমাদের মতো তারাও না খেয়ে আছে।
ছাতক উপজেলার গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। অর্ধশতাধিক গ্রামের মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় দুর্বিসহ অবস্থায় দিন পার করছে। উপজেলার ইছামতি-ছনবাড়ীবাজার, শিমুলতলা-মুক্তিরগাঁও সড়ক, বঙ্গবন্ধু সড়ক, ছাতক-জাউয়া, ছাতক-সুনামগঞ্জ, ছাতক-দোয়ারাবাজার সড়কের বিভিন্ন নিচু অংশ পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া ছাতক পৌরসভারসহ নোয়ারাই, ছাতক সদর, কালারুকা, উত্তর খুরমা, চরমহল্লা, জাউয়া, গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও, ছৈলা-আফজলাবাদ, দক্ষিণ খুরমা, ভাতগাঁও, দোলারবাজার ও সিংচাপইড় ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ বর্তমানে পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শতাধিক কাঁচা ঘর-বাড়ি ও গ্রামীণ কাঁচা সড়ক। পাহাড়ি ঢলের স্রোতের ধাক্কায় ছাতক উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের সীমান্তবতী নীজগাঁও, রতনপুর, বাগানবাড়ি, নোয়াকোট, ধনীটিলা, ছনবাড়ী, দারোগাখালী সড়ক সহ নব নির্মিত ৮-১০টি কাঁচা সড়ক বিলীন হয়ে গেছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে যেকোনো সময় দেশের সাথে ছাতকের সড়ক যাগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম মোস্তাফা মুন্না বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে। পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুতসহ প্রাথমিক সব ধরনের প্রস্তুতি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। বন্যার্তদের সহায়তায় সকলকে মানবীয় কর্মকাণ্ডে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)