শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
শতাব্দীর ভয়াবহ বন্যায় ফেনী জেলাজুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৪৯ হাজার মোটরসাইকেল, ৮ শতাধিক প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস। এসব গাড়ি মেরামতে মালিকদের গুনতে হচ্ছে ৬০ কোটি টাকার বেশি। গাড়ি মেরামত সংশ্লিষ্ট ফেনীর একাধিক গ্যারেজ মালিক ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) ফেনী শহরের একাধিক মোটরসাইকেল মেরামত প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা গেছে, যান্ত্রিক ত্রুটি নিয়ে মোটরসাইকেল মালিকরা দোকানে দোকানে ভিড় করছেন। শহরের মিজান রোডের কামাল অটো সার্ভিস এবং কোর্ট বিল্ডিং এলাকার গ্যারেজে বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়া ত্রুটিপূর্ণ বেশকিছু মোটরসাইকেল পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
বন্যায় এ জেলায় ৪৯ হাজারের বেশি মোটরসাইকেল পানিতে ডুবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দাবি করছেন কামাল অটো সার্ভিসের মালিক কামাল হোসেন। জেলায় মোটরসাইকেল মেরামতে দক্ষ হিসেবে পরিচিত এ ব্যক্তি বলেন, আমার দুটি গ্যারেজে গত একসপ্তাহে দুই হাজারের বেশি মোটরসাইকেলের ত্রুটি সারানো হয়েছে। এই ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে একই তথ্য জানিয়েছেন নবী অটোর মালিক মো. নূর নবী এবং আরেক মেকানিক মাইন উদ্দিনও।
শহরের অন্যান্য ওয়ার্কশপের মধ্যে আবদুল ট্রেডার্স, ফারিয়া ওয়ার্কশপে ঘুরে ত্রুটিপূর্ণ মোটরসাইকেলের বিশাল সারি দেখা গেছে। এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালকদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বন্যার পানিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গতি নির্ণায়ক মিটার। সর্বনিম্ন ৩ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত মোটরসাইকেল মেরামতে মালিকদের গুনতে হচ্ছে। গড় হিসেবে গাড়ি প্রতি ১০ হাজার টাকা মেরামতে ব্যয় হচ্ছে। এ হিসেবে উল্লিখিত মোটরসাইকেল মেরামতে মালিকদের গুনতে হচ্ছে ৪৯ কোটি টাকা।
ক্ষতিগ্রস্ত একাধিক ভুক্তভোগী বলেন, এবার খুব দ্রুত এবং অস্বাভাবিকভাবে বন্যার পানি বেড়েছে। ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। ঘরের অন্যান্য আসবাবপত্রের মত মোটরযান পানিতে নিমজ্জিত ছিল। শহরের অধিকাংশ ভবনের গ্যারেজ পানিতে ডুবে গেছে। এতে যেসব গাড়ি গ্যারেজে রাখা হয়েছিল সেগুলোও পানিতে ডুবে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে নবী অটোর স্বত্বাধিকারী মো. নূর নবী বলেন, মোটরসাইকেলে সার্ভিসিংয়ে ফেনী শহরে ৪০টি ওয়ার্কশপসহ জেলায় মোট ৯৬টি ওয়ার্কশপ রয়েছে। প্রায় ৮০ হাজারের বেশি মোটরসাইকেল এসব গ্যারেজে সার্ভিসিং করা হয়। মোটরসাইকেল সবগুলোই ফেনীসহ আশপাশের উপজেলায় চলাচল করে। এসব এলাকার প্রায় শতভাগ বন্যার পানিতে আক্রান্ত হয়েছে।
একইভাবে বন্যার পানি প্রবেশ করে জেলার ৮ শতাধিক প্রাইভেটকার এবং মাইক্রোবাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দাবি করছেন ওয়ার্কশপ মালিক ও ভুক্তভোগীরা। তারা বলছেন, এসব গাড়ির বড় একটি অংশ ফেনীর গ্যারেজগুলোতে মেরামত করা হচ্ছে, যেখানে প্রয়োজনে ঢাকা-চট্টগ্রাম থেকে মোটর মেকানিকরা এসে কাজ করছেন। আবার কিছু গাড়ি ঢাকা ও চট্টগ্রামে নিয়ে মেরামত করা হচ্ছে।
মোটর মেকানিক ও গাড়ি মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাড়ি প্রতি সর্বনিম্ন ৩০ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত মেরামতে ব্যয় হচ্ছে। গাড়ি প্রতি ব্যয় হচ্ছে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। সেই হিসেবে বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস মেরামতে মালিকদের গুনতে হচ্ছে ১২ কোটি টাকা।
ফেনীর বিভিন্ন ওয়ার্কশপে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সোমবার পর্যন্ত মহাসড়কের রামপুরে রাকিব ওয়ার্কশপে ৩০টি, হযরত পাগলা মিয়া সড়কের শরীফ অটোমোবাইলে ৪০টি, মক্কা অটোতে ১০টি, শাহীন অটোমোবাইলে ৯টি, পলিটেকনিক সংলগ্ন ইসমাইল অটোতে ৩৫টি প্রাইভেটকার এবং মাইক্রোবাস মেরামতের জন্য আনা হয়েছে।
ওয়ার্কশপ মালিকদের তথ্যমতে, জেলায় শতাধিক অটোমোবাইল ওয়ার্কশপ রয়েছে। এসব সার্ভিসিং সেন্টারে ফেনী ছাড়াও আশপাশের অন্যান্য উপজেলা হতে গাড়িগুলো সেবা নিয়ে থাকে।
বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত প্রাইভেটকার মালিক মো. আলম বলেন, আমার টয়োটা প্রিমিও ২০১৮ মডেলের প্রাইভেটকারটি প্রায় চারদিন বন্যার পানিতে নিমজ্জিত ছিল। মেরামত করতে গিয়ে দেখা গেছে, দরজার অটোলক, ডায়নামো, মোটর, সার্কিটসহ গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ পানিতে ভিজে অকেজো হয়ে গেছে। গাড়িটি মেরামতে আড়াই লাখ টাকা খরচ হবে বলে ওয়ার্কশপ থেকে জানানো হয়েছে। আবার এ সুযোগে গাড়ির যন্ত্রাংশেরও দাম বাড়িয়ে দিয়েছে মোটরপার্টস ব্যবসায়ীরা।
জামাল উদ্দিন নামে আরেকজন বলেন, ফেনী জেলায় হাজারের বেশি গাড়ি ভাড়ায় চালিত। এসব গাড়ির বড় একটি অংশ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ভারী বৃষ্টি ও ভারতীয় উজানের পানিতে মাত্র দেড় মাসের ব্যবধানে তিনবার বন্যার কবলে পড়েছে ফেনীর উত্তরাঞ্চল। গত ১৯ আগস্ট থেকে তৃতীয় দফার বন্যার ভয়াবহতা অতিতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)