শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১


দিনে ভিন্ন পেশা, রাতে সংঘবদ্ধ ডাকাত তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত:২ জানুয়ারী ২০২৪, ১৬:৫২

ছবি-সংগৃহীত

ছবি-সংগৃহীত

রাজধানী ঢাকার পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন মহাসড়ক ও এলাকায় ডাকাতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সর্দারসহ ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের এলিট ফোর্স র‌্যাব।

সোমবার (১ জানুয়ারি) রাতে রাজধানীর কদমতলী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ডাকাতির প্রস্তুতির সময় দেশীয় অস্ত্র এবং সরঞ্জামসহ তাদের গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-৩ এর একটি দল।

র‌্যাব বলছে, ট্রাক ও মিনি ট্রাক চালানোর আড়ালে তারা টার্গেট করা যানবাহন আটকে ডাকাতি করতো।

রাজধানীর টিকাটলিতে র‍্যাব-৩ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, গত ৩১ ডিসেম্বর কুমিল্লা জেলার লালমাই থানাধীন কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কে গতিরোধ করে মালামালসহ পণ্যবাহী পিকআপ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার ভুক্তভোগী শাহেদুল হক রাজধানীর কদমতলী থানাধীন দক্ষিণ দনিয়া এলাকায় ভাড়া থাকেন এবং একটি পিকআপ ভাড়ায় চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।

ঘটনার বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, গত ৩১ ডিসেম্বর রাজধানীর কেরানীগঞ্জের বসুন্ধরা রিভারভিউ এলাকার অক্সিকন কনস্ট্রাকশন এডমিক্সার কোম্পানির হেড অফিস থেকে ১২৫টি (২০০০ কেজি) অক্সিকন কনস্ট্রাকশন এডমিক্সার নিয়ে নোয়াখালী জেলার উদ্দেশ্যে রওনা করেন।

পথে রাত সাড়ে ৩টায় কুমিল্লা জেলার লালমাই থানাধীন কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের শানিচৌ নামক স্থানে একদল ডাকাত একটি সাদা বলেরো পিকআপযোগে তার সামনে গিয়ে গতিরোধ করে। ডাকাতদল ভিকটিমকে তার পিকআপ থেকে টেনে-হিঁচড়ে নামিয়ে রাস্তার পাশে ফেলে মারধর করতে থাকে।

তারা ভিকটিম শাহেদুলকে চাপাতি, সুইচ-গিয়ারসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয় এবং তার হাত-পা রশি দিয়ে ও মুখ টেপ দিয়ে বেঁধে মালামালসহ তার পিকআপটি নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। পরে এলাকাবাসী এসে আহত ও হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ভিকটিমকে উদ্ধার করে এবং নিকটস্থ থানায় সংবাদ দেয়।

ওই ঘটনায় কুমিল্লা জেলার লালমাই থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ৩/৪ জনের বিরুদ্ধে একটি দস্যুতার মামলা করা হয়। র‌্যাব-৩ এর একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ৩১ ডিসেম্বর রাতে রাজধানীর কদমতলী থানাধীন মুক্তি ফিলিং স্টেশন সংলগ্ন সাকিব টি-স্টলের সামনে অভিযান পরিচালনা করে ডাকাতির প্রস্তুতির সময় ডাকাত দলের নেতা আবুল হোসেন (৩৫), রহমত আলী (২৮), জসিম মিয়া (৩৩), নয়ন মিয়া (২৪) এবং মো. ইব্রাহীম (২৬) নামে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে।

এসময় তাদের কাছ থেকে ব্যবহৃত ১টি পিকআপ, ১টি চাপাতি, ১টি ছুরি, ৪টি গামছা, ৩টি রশি, ৫টি মোবাইল ফোন ও নগদ ৭ হাজার ৩১০ টাকা উদ্ধার করা হয়।

তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার রাজধানীর কদমতলী থানাধীন শনিরআখড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সংঘবদ্ধ দুর্ধর্ষ ডাকাত দলের মো. ইদ্রিস (২৩), মাসুদ রানা (২৬), কফিল উদ্দিন (৩২), হাসান আলীকে (২৩) গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের হেফাজত থেকে কুমিল্লার লালমাই হতে ছিনতাই করা ১২৫ ড্রাম অক্সিকন কনস্ট্রাকশন এডমিক্সার বোঝাইসহ ১টি পিকআপ এবং ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত আরও ১টি বলেরো পিকআপ, ১টি চাপাতি, ১টি ছুরি, ৩টি লোহার রড, ৩টি স্ক্রু ড্রাইভার, ৪টি মোবাইল উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তার ৪ জনের দেওয়া তথ্যে রাজধানীর শনির আখড়া এলাকা থেকে মো. জুয়েল (৩৫), মো. আলমাস (২৭) নামে ১টি চোরাই পিকআপ ও ২টি মোবাইলসহ গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের বরাতে র‌্যাব-৩ সিও বলেন, ডাকাত দলটির সকল সদস্যই রাজধানী, ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করে। তারা দৃশ্যমান পেশা হিসেবে বিভিন্ন পেশায় কাজ করলেও ডাকাতিই তাদের মূল পেশা।

গ্রেপ্তার আবুলের নেতৃত্বে সংগঠিত হওয়ার পর থেকে তারা বেশ কয়েকটি মহাসড়কে পণ্যবাহী যানবাহনে ডাকাতি, বাসে ডাকাতি, ঘরবাড়ি ও দোকানে ডাকাতি এবং প্রবাসী যাত্রীদের টার্গেট করে ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে।

জিজ্ঞাসাবাদে তারা আরও জানায়, তারা মহাসড়কে নির্জন কোনো স্থানে এসে টার্গেট করা গাড়িটিকে ওভারটেক করে গতিরোধ করে গাড়িতে থাকা ড্রাইভারসহ সবাইকে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র, সুইচ গিয়ার, চাপাতি, স্টিলের পাইপ দিয়ে মারপিট করে ও প্রাণে মেরে ফেলার ভয়ভীতি দেখিয়ে হাত-পা ও মুখ বেঁধে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে গাড়ি এবং মালামাল নিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে পালিয়ে যায়।

পরবর্তীতে তারা ডাকাতি করা মালামাল এবং গাড়িগুলো বিভিন্ন চোরাকারবারীদের কাছে বিক্রি করে দেয়। একই উপায়ে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের গাড়িকেও টার্গেট করে ডাকাতি করে সর্বস্ব লুটে নেয়। যখন মহাসড়কে ডাকাতি করা সম্ভব না হয় তখন বাড়িঘর এবং দোকানপাটে তারা ডাকাতি করে থাকে।

গ্রেপ্তার আবুল হোসেন পেশায় একজন ট্রাকচালক। তার এই পেশার আড়ালে তিনি সরাসরি ডাকাত দলটির নেতৃত্ব দিয়ে আসছিল। তার সঙ্গে অন্যতম সহযোগী হিসেবে মাসুদ রানা ডাকাতির কার্যক্রম পরিচালনা করতেন।

মাসুদ মূলত একজন মাছ ব্যবসায়ী এবং তিনি তার ব্যবসার আড়ালে ডাকাতি করতেন। মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানার ডাকাতি মামলায় ২৭ দিন কারাভোগ করে জামিনে বের হয়ে পুনরায় ডাকাতির কাজ শুরু করেন মাসুদ।

গ্রেপ্তার জসিম এবং জুয়েল পেশায় মিনি ট্রাক চালক। ডাকাতি করা যানবাহনগুলো তারা সু-কৌশলে বিভিন্ন স্থানে চোরাকারবারির কাছে পৌঁছে দিত। জসিমের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানায় এবং পদ্মা সেতু (দক্ষিণ) থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে পৃথক ২টি মামলা রয়েছে। এছাড়াও জুয়েল ডাকাতি করে আনা কিছু গাড়ি সংরক্ষণ করতো। জুয়েলের নামে ১টি দস্যুতা মামলা রয়েছে।

গ্রেপ্তার ইদ্রিস চোরাই গাড়ি ক্রয় বিক্রয় করতেন। পাশাপাশি তিনি ডাকাতির জন্য প্রয়োজনীয় গাড়ি সরবরাহ করতেন। মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানার ১টি ডাকাতি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে ২৩ দিন কারাভোগ করে ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে জামিনে বের হয়ে পুনরায় সে ডাকাতি কার্যক্রম শুরু করে। এছাড়াও ইদ্রিস ১টি চুরির মামলায় অভিযুক্ত আসামি।

গ্রেপ্তার রহমত পেশায় একজন ড্রাইভার। তিনি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গাড়ি চালিয়ে ডাকাতির জন্য দূরবর্তী স্থানে ভাড়া নিয়ে যাওয়া যানবাহনসমূহের তথ্য সহজেই সংগ্রহ করতেন। তার বিরুদ্ধে নওগাঁ জেলার ধামইরহাট থানায় ১টি মাদক মামলা এবং গাজীপুর কাপাসিশিয়া থানায় ১টি চুরির মামলা রয়েছে।

গ্রেপ্তার আলমাস পেশায় মুদি ব্যবসায়ী। তিনি এ পেশার আড়ালে চোরাকারবারিদের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখতো এবং ডাকাতি করা মালামাল তাদের কাছে বিক্রি করতেন। গ্রেপ্তার ইব্রাহীম পেশায় মাছ ব্যবসায়ী এবং নয়ন ১টি ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপে কাজ করেন। পেশার আড়ালে তারা ডাকাতিতে অংশগ্রহণ করে থাকে। নয়নের বিরুদ্ধে রাজধানীর কদমতলী থানায় ১টি মাদক মামলা রয়েছে।

গ্রেপ্তার হাসান পেশায় একজন ড্রাইভার এবং কফিল উদ্দিন বাসের হেলপার হিসেবে কাজ করতেন। এসব পেশার আড়ালে তারা ডাকাতি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতেন। হাসান পদ্মা সেতু (দক্ষিণ) থানায় ১টি চুরির মামলায় ২ মাস কারাভোগ করে। এছাড়াও গ্রেপ্তার কফিলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ৪টি মাদক মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

সম্পর্কিত বিষয়:

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)
আরো পড়ুন

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

নামাজের সময়সূচি

ওয়াক্ত সময়সূচি
ফজর ০৪:৫৮ ভোর
যোহর ১১:৪৫ দুপুর
আছর ০৩:৩৬ বিকেল
মাগরিব ০৫:১৫ সন্ধ্যা
এশা ০৬:৩১ রাত

শুক্রবার ২২ নভেম্বর ২০২৪