বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১
ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেছেন, আমাদের প্রধান সমস্যা হচ্ছে অসঙ্গত নীতি। বাংলাদেশ পলিসি আনপ্রেডিক্টেবল। প্রতি বছর আমরা ভয়ভীতির মধ্যে থাকি যে ট্যাক্স বাড়লো কি কমলো। বিডা চেষ্টা করতে থাকে বড় বড় বিনিয়োগকারী দেশে আনার জন্য। তারা কনফিউজড থাকে যে ট্যাক্স বাড়বে কি না।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘বিনিয়োগের সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক একটি সেমিনারে তিনি এই কথা বলেন।
ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালা। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিডার ব্যবসায়িক উন্নয়ন প্রধান নাহিয়ান রহমান রোচি।
আবুল কাসেম খান বলেন, গত ১৫ বছর ধরে আমরা একই কথা বলে আসছি যে কেন বাংলাদেশে অনেক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বিনিয়োগ হচ্ছে না। বিনিয়োগকারীদের একটা কমন প্রশ্ন থাকে যে বাংলাদেশ ট্যাক্স রেটটা কত আসলে। কেউ বলে ২৭ শতাংশ, কেউ বলে ৩৬ শতাংশ, কেউ বলে ৪৮ শতাংশ, কেউ বলে ১২ শতাংশ। কোনো বেঞ্চমার্ক নেই। কারণ এত স্টেজে বিভিন্ন ধরনের ট্যাক্স রেট অ্যাপ্লাই হচ্ছে যে এফেক্টিভ ট্যাক্স রেটের বেসিক কোনো স্ট্রাকচার নেই। এটা হচ্ছে বিনিয়োগের প্রথম বাধা।
তিনি বলেন, তার সাথে আছে অসঙ্গত নীতি। সংবিধিবদ্ধ নিয়ন্ত্রক আদেশ (এসআরও) দিয়ে পলিসি চেঞ্জ করে দেওয়া হচ্ছে। এরকম অনিশ্চয়তার মধ্যে একজন বিনিয়োগকারী যখন বিনিয়োগ করেন তিনি তো দীর্ঘমেয়াদি একটা পরিকল্পনা নিয়ে আসেন। যেকোনো ক্ষেত্রে ইনসেন্টিভ দিলে সেটা দীর্ঘমেয়াদি হতে হবে।
ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আরও বলেন, স্পেশাল ইকোনমিক জোনের (এসইজেড) পলিসিতে প্রথমে বলা হয়েছিল তা প্রাইভেট সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট করবে। পরে আবার সরকার মিরসরাই করে কম্পিটিশন বাড়িয়ে দিলো। সরকার যে লেভেলে এসইজেড দিতে পারবে বেসরকারি খাত সেই লেভেলে দিতে পারবে না। কারণ সরকারের সক্ষমতা আছে। আজ আমরা এসইজেডে ইনভেস্ট করে ধরা খেয়ে আছি।
তিনি বলেন, প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশনে বাংলাদেশে কোনো সময়সীমা নেই। কোনো প্রজেক্ট শুরু হতেই অনেক বছর লেগে যায়। ফলে রিটার্ন অব ইনভেস্টমেন্ট মিলবে না। এরপর আছে ন্যাশনাল বোর্ড অব রেভিনিউয়ের হয়রানি। যারা ভালো ট্যাক্স দিচ্ছে তাদের আবার দিচ্ছে। পরের বছর আবার অডিট করছে। এরপর আসে লজিস্টিক ডেফিসিট। সেখানে ইচ্ছাকৃতভাবে একটা পণ্যের ওপর ডেমারেজ দিয়ে, আরবিটারি ট্যাক্স বসিয়ে দিচ্ছে। ফলে যে দামে পণ্য আনছেন তার দ্বিগুণ তিনগুণ দামে কস্ট বেড়ে যাচ্ছে। কে দেখছে? কেউ দেখছে না। সরকার অনেক ব্যবসাতে জড়িত। ডিরেগুলেশন দরকার।
আবুল কাসেম খান বলেন, আমি মনে করি পলিসির ক্ষেত্রে প্রাইভেট সেক্টরকে ইনভল্ভ করা দরকার। তাদের নিয়ে পলিসি করলে তারা কমপ্লেইন করতে পারবে না। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার দরকার, সব স্ট্রাকচার ভেঙে দিয়ে নতুন করে স্ট্রাকচার করতে হবে। প্রধান অবজেক্টিভ হবে বাংলাদেশের মানুষের জন্য কাজ করা। প্রতিযোগিতা বাড়াতে হবে। শ্রমঘন শিল্প তৈরি করতে হবে ২০-৩০ বছরের জন্য। টেকসই ব্যবসা করার মাধ্যমে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। লজিস্টিকস এবং পরিবহন ব্যয় ১০ শতাংশের নিচে নামাতে হবে যা এখন ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। একটা লজিস্টিকস পলিসি হয়েছে তার কম্পিটিভনেস বাড়াতে হবে। অবকাঠামো উন্নয়নে জিডিপির ৭ থেকে ৮ শতাংশ ব্যয় করতে হবে।
তিনি বলেন, সাপ্লাই চেইন মেকানিজমে আমরা অনেক দুর্বল, সবকিছু আমাদের আমদানি করতে হয়, এদিকে নজর দিতে হবে। আমাদের ব্যাকএন্ড সাপ্লাই চেইন মেকানিজম নেই। আবার ফরেক্স এক্সচেঞ্জ সীমাবদ্ধতার জন্য প্রযুক্তি ট্রান্সফার হচ্ছে না। সবকিছু রিডিফাইন করতে হবে। আমাদের কস্ট অব ডুইং বিজনেস অনেক বেশি। ট্রেড লাইসেন্স সিটি করপোরেশনের রেভিনিউ ইনকামের সোর্স। এটাকে অ্যাবলিশ করা উচিত।
তিনি আরও বলেন, ৭০ দশকে আমাদের দেশে ব্রেন-ড্রেন হতো, আর এখন স্কিল ড্রেন হচ্ছে, উদ্যোক্তা ড্রেন হচ্ছে। তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য ট্যাক্স ফ্রি হওয়া উচিত যাতে তারা তাদের ধারণাগুলো বাস্তবে রূপ দিতে পারে। দেশি বিনিয়োগকারীদের সুবিধা দিলে বিদেশি বিনিয়োগ এমনি বাড়বে কারণ বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের পূর্বে দেশি বিনিয়োগকারীদের জিজ্ঞেস করেন যে বিনিয়োগ পরিস্থিতি কেমন। আমি বিডা, বেজা, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বলবো দয়া করে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এঙ্গেইজ হন।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল চৌধুরী, বিশিষ্ট শিল্পপতি এবং এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ, এফবিসিসিআই প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমানসহ প্রমুখ।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)