বুধবার, ২৭ আগস্ট ২০২৫, ১২ ভাদ্র ১৪৩২
ছবি সংগৃহীত
আগামী ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। এরই মধ্যে প্রার্থিতা এবং ভোটার তালিকা চূড়ান্ত হয়ে গেছে। শুরু হয়েছে প্রচার-প্রচারণাও। তবে হঠাৎই যেন এই নির্বাচন ঘিরে উত্তেজনা ও নানা শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) বেলা ১১টায় নিার্বচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা ও আচরণবিধি উদ্বোধনের পরপরই বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রচারণা শুরু করেন। এসময় তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়কে ঘুরে ঘুরে শিক্ষার্থীদের কাছে নিজেদের নাম-পরিচয় জানিয়ে ভোট চাইতে দেখা যায়।
প্রচারণা চলাকালীন শিক্ষার্থীদের মাঝে সাদা-কালো হ্যান্ডবিল বা লিফলেট বিতরণ করেন প্রার্থীরা। তাদের প্রচার-প্রচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে ক্যাম্পাসের প্রতিটি অলিগলি।
এই নির্বাচনকে ঘিরে শুরুর দিকে শিক্ষার্থীদের মাঝে উচ্ছ্বাস দেখা গেলেও বর্তমানে তা বিলিন হওয়ার পথে। কারণ, প্রচার-প্রচারণার প্রথম দিন থেকেই ঘটে চলছে একের পর এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। সেসব ঘটনার শিকার হচ্ছেন প্রার্থীরা। আবার কোনো কোনো ঘটনায় খোদ প্রার্থীদেরই জড়িত থাকার অভিযোগ উঠছে জোরেশোরে।
এর ফলে সাধারণ শিক্ষার্থী অর্থাৎ ডাকসু নির্বাচনের ভোটারদের মধ্যে তৈরি হচ্ছে শঙ্কা। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনটা হবে তো? এমন প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে তাদের মনে।
নির্বাচনি প্রচারণার প্রথম দিনেই (মঙ্গলবার) ঢাবির চারুকলা অনুষদের ভেতরে শিবির সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’-এর ফেস্টুন ভেঙে ফেলা হয়। পাশাপাশি ফেস্টুনে থাকা পুরুষ প্রার্থীদের ছবি ও হিজাব পরিহিত নারী প্রার্থীর ছবি বিকৃত করে দেয় দুষ্কৃতিকারীরা।
এ ঘটনায় তিনজনকে চিহ্নিত করা হলেও এখন পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি ঢাবি প্রশাসন। ফলে সামনে কী হতে চলেছে এই নির্বাচন ঘিরে, তা নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, একটি আলোচিত ছাত্র সংগঠনের প্যানেলের ফেস্টুন যদি দিনে-দুপুরে এভাবে ভেঙে ফেলা হয়, তবে অন্য সংগঠনগুলোর নিরাপত্তা কীভাবে নিশ্চিত হবে? এসব দেখেও যদি প্রশাসন এমন নির্বিকার থাকে, তবে তারা কীভাবে আমাদের একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেবে?
এদিকে মঙ্গলবার নির্বাচনি প্রচারণা শুরুর কিছু সময় পর কিছু প্রার্থীকে আচরণবিধি লঙ্ঘন করতে দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার বিভিন্ন জায়গায় তারা ব্যানার-ফেস্টুন টাঙান। এছাড়া নির্বাচনি প্রচারণা শুরুর আগেও অনেকে বিভিন্ন হলে প্রচারণা চালান, যা নির্বাচনি বিধিমালার স্পষ্ট লঙ্ঘন।
এ ঘটনায়ও আশাহত শিক্ষার্থীরা। তাদের বক্তব্য, যারা এখনই নিয়ম মানছে না, নির্বাচিত হলে তারা কীভাবে নিয়ম মেনে আমাদের জন্য কাজ করবে?
অন্যদিকে এসব ঘটনার মাঝেই মঙ্গলবার দিনগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে স্বতন্ত্র প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী জালাল আহমেদ ওরফে জ্বালাময়ী জালাল নিজের রুমমেটকে ছুরিকাঘাতে হত্যাচেষ্টা করেন। এরপরই তাকে হল থেকে বহিষ্কার এবং পুলিশে সোপর্দ করা হয়। বর্তমানে তিনি কারাগারে। অন্যদিকে আহত শিক্ষার্থীকে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জালালের উপর এবং তাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. সিরাজুল ইসলামের পদত্যাগ দাবি করেন। সবমিলিয়ে এখনো উত্তেজনাকর পরিস্থিতি ঢাবি ক্যাস্পাসজুড়ে।
জালালের ওই ঘটনার পরে রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ সংবাদিকদের বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে এরকম উত্তেজনাকর পরিস্থিতি আগেও হয়েছে। এতে ডাকসু নির্বাচনের উপর কোনো প্রভাব পড়বে না। নির্বাচন নির্ধারিত সময়ে সুষ্ঠুভাবেই সম্পন্ন হবে।’
ডাকসুর ভোট নির্বিঘ্ন করতে ক্যাম্পাসের ভোট কেন্দ্রগুলোতে সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এ বিষয়ে সবার মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। ডাকসুর সাবেক ভিপি, জিএস এবং বর্তমান বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীরাও বিষয়টি ভালোভাবে নেননি।
ডাকসুর সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুশতাক হোসেন এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার দায়িত্ব প্রশাসনের। অতীতে সেনাবাহিনী ছাড়াই ডাকসু নির্বাচন হয়েছে। এবারও সেনা মোতায়েনের মতো কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। সেনা উপস্থিতি বরং অস্থিরতা বাড়িয়ে দিতে পারে।’
সাবেক ভিপি ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘সত্তর ও আশির দশকে সামরিক শাসনের মধ্যেও ডাকসু নির্বাচন হয়েছে, কিন্তু কখনো ক্যাম্পাসে সেনা মোতায়েনের ঘটনা ঘটেনি। এমনকি পুলিশের উপস্থিতিও সীমিত রাখা হতো। এখন কেন এমন সিদ্ধান্ত?’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, প্রচারণা শুরু হওয়ার পর থেকেই এসব ঘটনা শিক্ষার্থীদের মধ্যে শঙ্কা সৃষ্টি করছে। এসব ঘটনার সূত্র ধরে অনেক রাজনৈতিক দল ডাকসু নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা করতে পারে।
মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মেহেদী হাসান বলেন, ‘এসব ঘটনা ডাকসু নির্বাচন বানচাল করতে পারবে না। যদিও শিক্ষার্থীদের মধ্যে শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। যেই গোষ্ঠীগুলো ডাকসু নির্বাচন চায় না, তারা হয়তো এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভিসি-প্রক্টরের পদত্যাগ চাইবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ক্যাম্পাসের ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলগুলোর বর্তমান অবস্থা দেখলেই বোঝা যায়, তারা চায় ডাকসু নির্বাচন দ্রুত সম্পন্ন হোক। কোনো পক্ষের যদি নির্বাচন বানচালের অসৎ উদ্দেশ্য থাকে, তবে সংগঠনগুলো তা রুখে দেবে বলে আমি মনে করি।’
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)