বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১
ভোর হতেই অস্থায়ী খোলা মাঠে চৌকি পেতে ডালায় ডালায় ইলিশসহ নানা মাছের পসরা সাজিয়ে বসেন মাছ বিক্রেতারা। তার পাশেই বসেছে সবজি, খেলনাসহ নানা খাবারের দোকান।
কনকনে শীতকে উপেক্ষা করে বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সকাল ৭টার মধ্যেই ক্রেতা বিক্রেতার হাক-ডাকে জমে উঠে পুরো মেলা প্রাঙ্গণ।
এদিন মেলায় আসা সবাই ঘরে ফেরেন জোড়া ইলিশ আর জোড়া বেগুন নিয়ে।
শরীয়তপুরের মনোহর বাজার ও তার আশপাশের এলাকার ঐতিহ্য এটি। প্রতি বছরের মাঘ মাসের প্রথম দিনটিতে মনোহর বাজার কালীমন্দির ও গরুর মাঠে বসে এই ঐতিহ্যবাহী পৌষ সংক্রান্ত জোড়া ইলিশ মাছের মেলা।
মেলার প্রচলন কতো বছর আগে থেকে শুরু হয়েছে জানেন না অনেকেই। তবে ধারণা করা হয়, অন্তত ২০০ বছরের পুরোনো এ মেলা। এখানে মাছের পাশাপাশি বিভিন্ন খাবারের দোকান, খেলনার দোকান বসে এই মেলায়।
পুরো বছরজুড়ে এ দিনটির জন্য অপেক্ষায় থাকেন স্থানীয়রা। মেলাটি ঘিরে জেলার মধ্যপাড়া, চটাং, চরসোনামুখী, রুদ্রকর, শুবচনীসহ কয়েকটি এলাকার সব ধর্মের হাজারও মানুষের সমাগম ঘটে।
মেলা উপলক্ষ্যে এখানকার মানুষেরা তাদের আত্মীয়দের নিমন্ত্রণ জানায়। মেলা ঘিরে বড়দের চাইতে ছোটদের আগ্রহ থাকে আরও বেশি। তারা সবাই বড়দের সঙ্গে মেলায় গিয়ে মিষ্টির পাশাপাশি কিনে নানা রঙের বেলুন আর খেলনা।
এই মেলায় রয়েছে ইলিশ, রুই, কাতল, বোয়াল, আইড় ও কার্প জাতীয় মাছ। মেলা ঘুরে দেখা যায়- ক্রেতারা আসছেন, দামদর করে মাছ কিনে বাড়ি ফিরছেন। ছোট ছোট শিশুরা খেলনার দোকানে ভিড় জমাচ্ছে। কিনছে তাদের পছন্দের খেলনা।
প্রতিবছর মেলায় সব ধর্মের মানুষ এই মেলায় হাজির হয়ে মাছের পাশাপাশি ১ জোড়া বেগুন কিনে নেন।
মেলায় আসা স্থানীয় মাছ বিক্রেতা মধ্যপাড়া এলাকার গোপাল দাস বলেন, মেলাটি তার বাপ-দাদারাও দেখেছেন। আমরা একে জোড় মাছের মেলা বলি। এই মেলায় হিন্দু-মুসলিম সবাই আসে, আর ইলিশ মাছ কিনে নিয়ে যায়।
মেলায় ঘুরতে আসা সাকিল হোসেন বলেন, এই মেলাটি অনেক আগে থেকেই হচ্ছে। আমি শুনেছি কাল একজনের কাছ থেকে তাই দেখতে আসলাম। এসে ভালো লাগল।
আরেক দর্শনার্থী আল-আমিন বলেন, এই মেলাটি একটি ঐতিহ্যবাহী মেলা। অনেক বার এসেছি আজও আসলাম।
মেলার আয়োজক কমিটির সদস্য আতিকুর রহমান মোল্লা বলেন, আমাদের অঞ্চলের ২০০ বছরের ঐতিহ্য এই জোড় মাছের মেলা। প্রতিবছর এই দিনে মনোহর বাজার মাঠে ভোরবেলা থেকেই ইলিশ মাছ বিক্রি করা হয়। জাত ধর্ম নির্বিশেষে সবাই মেলায় আসে মাছ কিনেন। এখানে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)