শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
মা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম ডাক বা অনুভূতিই নয়, মাতৃত্ব একজন নারীর সবচেয়ে বড় সার্থকতা। কিন্তু একজন নারী যখন প্রথমবার গর্ভধারণ করেন তখন অনেক কিছুই তার জানা থাকে না।
তাই সন্তান ধারণ থেকে শুরু করে শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত একজন মা’কে অনেক বিষয়ে সতর্কতা ও সচেতনতা অবলম্বন করতে হয়। চলুন গর্ভবতী মায়ের যত্ন ও নিরাপদ মাতৃত্ব সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে নেই।
একজন গর্ভবতী মায়ের যথাযথ যত্ন নিশ্চিতে কাছের মানুষরাই প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকেন। তবে নিজেরও অসতর্ক হলে চলবে না। কারণ মায়ের সুস্থতার উপরে আগত সন্তানের সুস্থতা নির্ভরশীল।
গর্ভবতী মায়ের খাবার এবং মানসিক ও শারীরিক যত্নঃ
শিশু গর্ভে থাকাকালীন তার শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গঠিত হয়। তাই এসময় মায়ের খাদ্যের উপর বিশেষ যত্ন এবং খেয়াল নিতে হবে। মায়ের খাওয়া খাদ্য প্লাসেন্টা’র মাধ্যমে শিশুর শরীরে প্রবেশ করে।
তাই মা যা খাচ্ছে সেটি মা-শিশু উভয়ের জন্যই পর্যাপ্ত পুষ্টির জোগান দিচ্ছে কিনা, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অন্যদিকে মা যদি অসুস্থ হয় বা যদি কোনো বিষয়ে মানসিকভাবে উদ্বিগ্ন থাকে, সেটিও উভয়ের জন্য সমান ক্ষতির কারণ হতে পারে।
তাই গর্ভকালীন একজন মায়ের সমানভাবে শারীরিক ও মানসিক যত্ন নেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। মানসিক চাপমুক্ত থাকা, ভারী কোন ওজন না নেওয়া, উঁচুনিচু স্থান এড়িয়ে চলা, বিভিন্ন বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।
পরিকল্পিত গর্ভধারণ মা ও শিশু উভয়ের জন্যই অত্যন্ত নিরাপদ। সন্তান ধারণের আগে মায়ের ডায়াবেটিস, থাইরয়েড, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি শারীরিক পরীক্ষা করে নেওয়া প্রয়োজন। সেইসাথে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সন্তান ধারণের তিনমাস আগ থেকে নিয়মিত ফলিক অ্যাসিডসহ অন্যান্য ওষুধ সেবনের প্রয়োজনও হতে পারে।
গর্ভবতী মায়েদের পোশাক নিয়েও সচেতন থাকা উচিৎ। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, আরামদায়ক, সহজে পরিধানযোগ্য ও ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান এবং সঠিক মাপের নরম জুতা পরতে হবে।
একজন অন্তঃসত্ত্বা নারীর প্রায় প্রতি মাসেই চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিৎ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি তথ্য অনুযায়ী, একজন অন্তঃসত্ত্বা নারীকে অবশ্যই কমপক্ষে চারবার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিৎ। এই চারবার হচ্ছে যথাক্রমে ১৬, ২৮, ৩২ ও ৩৬তম সপ্তাহে। এছাড়া কারও শারীরিক জটিলতা দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
একজন প্রসুতি মায়ের জন্য গর্ভধারণকালীন প্রথম এবং শেষ তিনমাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিশু গর্ভে থাকার প্রথম তিন মাসেই তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো পূর্ণ রূপ ধারণ করে। গর্ভাবস্থায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মায়েদের হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি পড়ে যায়। কারণ এ সময় গর্ভস্থ শিশুর শরীরে লৌহের চাহিদা মেটানোর পর মায়েদের রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। এজন্য গর্ভবতী মাকে এসময় প্রয়োজনীয় ওষুধের পাশাপাশি সবুজ শাকসবজি, ফলমূল ও অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে।
গর্ভে থাকাকালীন শেষ তিন মাস শিশু খুব দ্রুত বেড়ে ওঠে। যে কারণে প্রসূতি মায়ের পায়ে পানি আসতে পারে। তাছাড়া শেষ তিন মাসে পেট বড় হয়ে যাওয়ার কারণে গর্ভবতী মায়ের অনেক কষ্ট হয়। এই সময়ে কিছু জটিলতাও দেখা দিতে পারে, যেমন অস্বাভাবিক পেট বড় বা ছোট হওয়া, হঠাৎ রক্ত ভাঙা, খুব বেশি জ্বর আসা, রক্তচাপ অতিরিক্ত বেশি হওয়া। এমন পরিস্থিতিতে অনতিবিলম্বে চিকিৎসককে দেখাতে হবে।
ডাঃ অনুকা রায়
স্ত্রী, প্রসূতি, বন্ধ্যাত্ব রোগ ও ল্যাপারোস্কপি বিশেষজ্ঞ ও সার্জন
এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য)
ডিজিও, এফসিপিএস (গাইনী এন্ড অবস্)
ডিএমইউ, টিভিএস, এনোমালি স্ক্যান
বন্ধ্যাত্ব ও টেস্টটিউব চিকিৎসায় উচ্চতর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত
ফেলোশীপ ইন ইনফার্টিলিটি (ব্যাঙ্গালোর, ইন্ডিয়া)
বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত (ইনফার্টিলিটি, IUI, IVF)
শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট, মাতুয়াইল, ঢাকা (ex)
বিএমডিসি রেজিঃ নং -এ-৪৮৯৪৬
ধোলাইপাড় ইসলামিয়া মডেল হাসপাতাল
১৪৭/১ আনিস টাওয়ার, ধোলাইপাড়, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)