বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ কার্তিক ১৪৩১
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. এবিএম আবু হানিফসহ অন্যান্যদের নিয়োগকে কেন্দ্র করে চতুর্থ দিনের মতো মুখোমুখি অবস্থান বিএনপিপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) ও জামায়াতপন্থী ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরাম (এনডিএফ)। অন্তবর্তীকালীন সকরকারের নিয়োগ দেওয়া কর্মকর্তাদের পক্ষে এনডিএফের অবস্থান হলেও বিপরীত অবস্থান ড্যাবের।
বুধবার (২৩ অক্টোবর) সকাল থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মূল ফটকে অবস্থান নেয় ড্যাবের চিকিৎসকরা। এসময় তাদের সঙ্গে লুঙ্গি ও শর্ট প্যান্ট পরা বহিরাগত কিছু মানুষকেও দেখা গেছে। এদিকে অধিদপ্তরের দু-তিন তলায় এনডিএফ অবস্থান নিয়েছে বলে জানা গেছে।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলটির সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাচিপ বা স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সদস্যরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। এখন স্বাস্থ্য বিভাগের বড় পদে আর স্বাচিপের কাউকে রাখা হচ্ছে না। পদ নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে ড্যাব আর এনডিএফের মধ্যে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সরেজমিনে দেখা গেছে, অধিদপ্তরের নিচতলা ও প্রধান ফটকের সামনে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে প্রায় ১০০ জনের মতো ড্যাব নেতাকর্মী, যাদের মধ্যে অনেককে দেখে ড্যাবের কর্মী মনে হয়নি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, আন্দোলন করার জন্য ড্যাব স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের কাজে লাগাচ্ছে। তারাই সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এসে বসে থাকছে।
ডা. শরিফুল ইসলাম নামে এক চিকিৎসক বলেন, নতুন যারা নিয়োগ পেয়েছেন তাদেরকে ‘স্বৈরাচারের দোসর’ হিসেবে আখ্যা প্রদান করেন ড্যাবের চিকিৎসকরা। একইসঙ্গে তাদের যোগদানে বাধা প্রদান করেন। প্রকৃতপক্ষে নিয়োগপ্রাপ্তরা কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শের নন। নিজেদের স্বার্থে ড্যাব এসব চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপবাদ দিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ড্যাব আপাদমস্তক নিজেদের সমর্থক ছাড়া অন্য কোনো চিকিৎসকের নিয়োগ মানতে পারছে না। স্বাস্থ্য প্রশাসনে একক ‘আধিপত্য’ বিস্তার করতেই তাদের এমন মনোভাব।
এদিকে এনডিএফ-ড্যাবের শীর্ষস্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, চিকিৎসকদের দুটি পক্ষের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব পর্যায়ে কথা হচ্ছে, আশা করা যাচ্ছে আজ-কালের মধ্যেই বিষয়টি সমাধান হয়ে যাবে। তাই অধস্তন নেতাকর্মীদের দিয়ে রুটিন কর্মসূচি পালন করছে ড্যাব-এনডিএফ।
এনডিএফের দপ্তর সম্পাদক ডা. একেএম জিয়াউল হক বলেন, ড্যাবের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে। ইতোমধ্যে দুপক্ষের মধ্যে দূরত্ব কমে এসেছে। আমাদের কিছু নেতাকর্মী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অবস্থান নিলেও বড় সমাবেশ বা শোডাউন করার কোনো চিন্তা নেই।
ড্যাব সভাপতি অধ্যাপক হারুন অর রশীদ বলেন, আজকে দুই পক্ষ এখানে প্রোগ্রাম করবে। এটা আমরা আলোচনার ভিত্তিতেই ঠিক করে দিয়েছি। ড্যাব সকালে ও এনডিএফ দুপুর ১২টার পরে কর্মসূচি পালন করবে, যাতে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা সৃষ্টি করে কেউ সুযোগ নিতে না পারে।
তিনি বলেন, আমরা এনডিএফের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলছি। গতকালও তাদের সেক্রেটারির সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আশা করছি সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর স্বাস্থ্যখাতকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করে বর্তমান নতুন সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় অধিদপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ পদে নতুন করে নিয়োগ প্রদান করা হয়।
এতে পরিচালক (প্রশাসন) পদে নিয়োগ পান ডা. এবিএম আবু হানিফ। কিন্তু তাকে ফ্যাসিবাদের দোসর আখ্যা দিয়ে তার নিয়োগ বাতিলের দাবি জানিয়েছে ড্যাব। অপরদিকে এনডিএফের অভিযোগ, নিজ দলের না হলেই ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ আখ্যা দিচ্ছে বিএনপি সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠনটি।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)