বৃহঃস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৫, ১৭ মাঘ ১৪৩১


‘নিরীহ ছাত্রদের গুলিতে ভরা দেহ: পুলিশের সন্ত্রাস ও সরকারের নির্দেশনা’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত:২৮ জানুয়ারী ২০২৫, ১৮:৫৮

ছবি সংগৃহীত

ছবি সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) বলেছে, গত বছরের জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশের বর্বর আচরণে সরাসরি রাজনৈতিক যোগসূত্র ছিল। ২৭ জানুয়ারি প্রকাশিত একটি রিপোর্টে তারা এই তথ্য জানিয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ওই আন্দোলনে পুলিশের কর্মপন্থা মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের চেয়ে রাজনৈতিক নেতাদের দ্বারা বেশি নির্ধারিত হয়েছিল। এতে আরও বলা হয়েছে যে, পুলিশ এবং নিরাপত্তা বাহিনী রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে এবং পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এইচআরডব্লিউর এশিয়া বিভাগের পরিচালক ইলেইন পিয়েরসন বলেছেন, "গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে গিয়ে প্রায় ১০০০ বাংলাদেশি প্রাণ হারিয়েছেন। এই পরিস্থিতি বাংলাদেশে অধিকারভিত্তিক ভবিষ্যত তৈরি করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ তৈরি করেছে। তবে এই অগ্রগতি যাতে হারিয়ে না যায়, সেজন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে কাঠামোগত সংস্কার করতে হবে, যা ভবিষ্যতে সরকারের দমন-পীড়ন প্রতিরোধে সহায়তা করবে।"

রিপোর্টে বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, কীভাবে অতীতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং নিরাপত্তা বাহিনী রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে ব্যবহার হয়েছে। একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার থেকে জানা গেছে, গত বছর পুলিশের অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের নির্দেশ রাজনৈতিক নেতৃত্ব থেকে এসেছিল। এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, "আমরা বিশ্বাস করি, পুলিশের ভূমিকা মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের চেয়ে রাজনৈতিক নেতারা বেশি নিয়ন্ত্রণ করতেন।" অন্য এক কর্মকর্তা জানান, তিনি সিসিটিভি ফুটেজে দেখেছেন, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অফিসারদের এমনভাবে নির্দেশ দিচ্ছিলেন, যেন তারা 'ভিডিও গেমে' কাউকে গুলি করছেন।

এছাড়া, পুলিশের কর্মকর্তারা জানান যে তাদেরকে কঠোর হওয়ার এবং 'নৈরাজ্য ছড়ানো অপরাধীদের' রেহাই না দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এমনকি একজন অফিসার বলেছেন, "আমরা আন্দোলনকারীদের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ লক্ষ্য করে গুলি করতে দেখেছি, এবং অনেক সময় তাদের জীবন বিপদে না থাকলেও তারা গোলাবারুদ ব্যবহার করছিল।"

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আরও জানায় যে, শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা গুমের ঘটনার বিষয়ে অবগত ছিলেন, এবং কিছু ক্ষেত্রে তারা গুম বা হত্যার নির্দেশও দিয়েছিলেন। নিরাপত্তা বাহিনীর এক কর্মকর্তা জানান, সাবেক সামরিক কর্মকর্তা আবদুল্লাহিল আমান আজমির গোপন আটক থেকে মুক্তি চাওয়ার পরেও হাসিনা তাকে মুক্তি দেননি এবং এমনকি তাকে হত্যা করারও পরামর্শ দিয়েছেন। এইচআরডব্লিউ জানায় যে, র‌্যাব এবং পুলিশ সহ নিরাপত্তা বাহিনীর কার্যক্রম সরকারী অনুমোদন ছাড়া অসম্ভব ছিল।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বিশেষভাবে গুমের ঘটনাগুলোর তদন্তে বাধা দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেছে। তারা জানিয়েছে, নতুন তদন্ত কমিশন গঠনের পরেও নিরাপত্তা বাহিনী তাদের কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করেছে এবং তারা বেআইনি আটক স্থানগুলো ধ্বংস করার চেষ্টা চালিয়েছে। আরও জানানো হয়েছে যে, সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ২৯৭ জনের নামসহ ৮টি এফআইআর দাখিল করা হয়েছে এবং এতে অজ্ঞাতপরিচয় ৬০০ জনের নামও রয়েছে।

এই রিপোর্টে বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রাজনৈতিক প্রতিশোধ নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে, এবং সেগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগের সদস্যদের বিরুদ্ধে এক হাজারের বেশি পুলিশ মামলা দায়ের করা হয়েছে। এদিকে, পুলিশ ও স্থানীয় রাজনীতিবিদদের মাধ্যমে অনেক ভুক্তভোগী জানায় যে, তারা জানতেন না তারা কাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করছেন। তারা বলেছিলেন, পুলিশ বা স্থানীয় নেতারা তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে মামলার কাগজপত্রে সই করতে বলেছিলেন।

এছাড়া, এইচআরডব্লিউ জানায়, বর্ষা বিপ্লবের সময় সরকার বিরোধী প্রতিবেদন করায় অন্তত ১৪০ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকজন স্বাস্থ্য কর্মীও আছেন, যারা বিক্ষোভের সময় আহত ও নিহত ছাত্রদের সাহায্য করেছিলেন।

সংস্থাটি সুপারিশ করেছে যে, অন্তর্বর্তী সরকারকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কর্মীদের রাজনৈতিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে এবং নিরাপত্তা বাহিনী ও বিচার বিভাগ যাতে নির্বাহী ক্ষমতার প্রভাব থেকে মুক্ত থাকে, সে জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)
আরো পড়ুন

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

নামাজের সময়সূচি

ওয়াক্ত সময়সূচি
ফজর ০৫:২২ ভোর
যোহর ১২:১২ দুপুর
আছর ০৪:০৭ বিকেল
মাগরিব ০৫:৪৬ সন্ধ্যা
এশা ০৭:০১ রাত

বৃহঃস্পতিবার ৩০ জানুয়ারী ২০২৫