বৃহঃস্পতিবার, ৩ জুলাই ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২


হরমুজ প্রণালী অবরোধ ও মাইন বসানোর প্রস্তুতি নিয়েছিল ইরান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত:২ জুলাই ২০২৫, ১২:১৭

ছবি সংগৃহীত

ছবি সংগৃহীত

গত মাসে ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের সময় বিশ্ব বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ রুট হরমুজ প্রণালী অবরোধ ও সেখানে মাইন বসানোর প্রস্তুতি নিয়েছিল ইরান। গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে এমনটাই দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

আর ইরানের হরমুজ প্রণালী অবরোধের দিকে এগোনোর এই বিষয়টি ওয়াশিংটনে উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছিল। বুধবার (২ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

বার্তাসংস্থাটি বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, গত মাসে ইরানি সেনাবাহিনী পারস্য উপসাগরে তাদের নৌযানে মাইন তোলার প্রস্তুতি নিয়েছিল— যা ওয়াশিংটনে উদ্বেগ বাড়িয়ে দেয় যে, ইসরায়েল ইরানের বিভিন্ন স্থানে হামলা চালানোর পর তেহরান হরমুজ প্রণালী অবরোধের দিকে এগোচ্ছে।

এই তথ্যটি আগে প্রকাশ হয়নি। দুই মার্কিন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জানিয়েছেন, গত ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর এই প্রস্তুতির বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের নজরে আসে।

মূলত বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রপথ হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দিলে, বৈশ্বিক বাণিজ্য মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতো এবং জ্বালানির দাম হু-হু করে বাড়তো। কারণ বিশ্বে পরিবেশিত মোট তেল ও গ্যাসের এক-পঞ্চমাংশ এই পথ দিয়েই যায়।

তবে এখন পর্যন্ত ইরান এই মাইনগুলো প্রণালীতে বসায়নি। ফলে মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, এটি হয়তো বাস্তব অবরোধের পরিকল্পনা ছিল না বরং যুক্তরাষ্ট্রকে চাপে রাখার কৌশলও হতে পারে। তবে একইসঙ্গে তারা এটাও বলছেন, এটি ভবিষ্যতের জন্য ইরানের প্রস্তুতিও হতে পারে।

রয়টার্স বলছে, গত ২২ জুন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি প্রধান পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর পর ইরানের পার্লামেন্ট হরমুজ প্রণালী বন্ধের পক্ষে একটি প্রস্তাব পাস করে। যদিও এটি বাধ্যতামূলক কিছু ছিল না এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে কেবল ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের হাতে। এছাড়া আগে হরমুজ প্রণালী বন্ধের বিষয়ে বহুবার তেহরান হুমকি দিলেও কখনো তা বাস্তবায়ন করেনি।

কীভাবে যুক্তরাষ্ট্র এই মাইন লোডিংয়ের তথ্য পেয়েছে, তা বিস্তারিত জানানো হয়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, স্যাটেলাইট ছবি, মানব গোয়েন্দা বা দুটির সমন্বয়ে এই তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা বলেন, “প্রেসিডেন্টের চমৎকার কৌশল ‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’, হুথিদের বিরুদ্ধে সফল অভিযান এবং সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের ফলে হরমুজ প্রণালী এখনো খোলা রয়েছে, নৌ চলাচল স্বাভাবিক এবং ইরান দুর্বল হয়ে পড়েছে।”

প্রসঙ্গত, হরমুজ প্রণালী ওমান ও ইরানের মাঝখানে অবস্থিত। এটি পারস্য উপসাগরকে ওমান উপসাগর ও আরব সাগরের সঙ্গে যুক্ত করে। সবচেয়ে সংকীর্ণ জায়গায় এটি মাত্র ২১ মাইল চওড়া এবং একদিকে জাহাজ চলাচলের জন্য ২ মাইল করে নির্ধারিত।

এই প্রণালী দিয়েই সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত ও ইরাক তাদের বেশিরভাগ তেল রপ্তানি করে। কাতারও এখান দিয়ে বিশ্ববাজারে গ্যাস পাঠায়। তেহরান নিজেও এই পথ দিয়ে তেল রপ্তানি করে, তাই এই প্রণালী বন্ধ করলে ইরান নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

তবুও ইরান অনেক বছর ধরে এই রুট বন্ধ করার সক্ষমতা গড়ে তুলেছে। ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা জানায়, ইরানের হাতে তখন ৫ হাজারের বেশি নৌ-মাইন ছিল, যা দ্রুত গতির ছোট নৌযানের মাধ্যমে বসানো সম্ভব।

অবশ্য এই অঞ্চলকে ঘিরে প্রতিরক্ষা প্রস্তুতিও রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। যুক্তরাষ্ট্রের ফিফথ ফ্লিট বাহরাইনে অবস্থান করছে। মূলত তারাই অঞ্চলটির বাণিজ্যিক নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্বে রয়েছে।

হামলার আগে সম্ভাব্য প্রতিশোধের আশঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্র তাদের মাইন প্রতিরোধকারী সব জাহাজ ওই এলাকা থেকে সরিয়ে নেয়। পরবর্তীতে ইরান কাতারে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ে সীমিত প্রতিশোধ নেয়।

তবে মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, ইরানের প্রতিক্রিয়া এখানেই শেষ নাও হতে পারে।

ডিএস /সীমা

সম্পর্কিত বিষয়:

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)
আরো পড়ুন

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

নামাজের সময়সূচি

ওয়াক্ত সময়সূচি
ফজর ০৩:৪৮ ভোর
যোহর ১২:০৩ দুপুর
আছর ০৪:৪৩ বিকেল
মাগরিব ০৬:৫৪ সন্ধ্যা
এশা ০৮:১৭ রাত

বৃহঃস্পতিবার ৩ জুলাই ২০২৫