বৃহঃস্পতিবার, ৩ জুলাই ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২
ছবি সংগৃহীত
চলমান উত্তেজনার মধ্যেও দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী বন্দিদের তালিকা বিনিময় করেছে ভারত ও পাকিস্তান। মঙ্গলবার কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে এ তালিকা বিনিময় করে পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশী দেশ দুটি।
২০০৮ সালে স্বাক্ষরিত কনসুলার অ্যাক্সেস চুক্তির আওতায় প্রতি বছরে দুইবার (১ জানুয়ারি ও ১ জুলাই) বন্দিদের তালিকা বিনিময় করে থাকে উভয় দেশ। চলমান রাজনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে এবারের তালিকা বিনিময়কে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সম্প্রতি পেহেলগাম হামলার পর দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধাবস্থার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছিল। এই ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান অনেক দ্বিপাক্ষিক চুক্তিই হুমকির মুখে পড়ে।
ভারত একতরফাভাবে ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করেছিল। অন্যদিকে পাকিস্তান হুমকি দিয়েছিল ১৯৭২ সালের শিমলা চুক্তি থেকে সরে আসার, যদিও এ বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
এই উত্তপ্ত প্রেক্ষাপটেও কনসুলার অ্যাক্সেস চুক্তি অনুযায়ী উভয় দেশ বন্দিদের তালিকা বিনিময় করেছে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মঙ্গলবার পাকিস্তান ও ভারত কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে একে অপরের হেফাজতে থাকা বন্দিদের তালিকা বিনিময় করেছে। ২০০৮ সালের কনসুলার অ্যাক্সেস চুক্তির আওতায় এই তালিকা বিনিময় করা হয়েছে।’
এই চুক্তির অধীনে প্রতি বছরের ১ জানুয়ারি ও ১ জুলাই উভয় দেশকেই একে অপরের হেফাজতে থাকা বন্দিদের তালিকা আদান-প্রদান করতে হয়। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও একই ধরনের বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তর জানায়, ইসলামাবাদে ভারতের হাই কমিশনের এক প্রতিনিধির কাছে ২৪৬ জন ভারতীয় বা ভারতীয় নাগরিক হিসেবে বিবেচিত বন্দির তালিকা হস্তান্তর করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৫৩ জন বেসামরিক বন্দি এবং ১৯৩ জন জেলে।
একই সময়ে ভারতের সরকার নিউ দিল্লিতে পাকিস্তান হাই কমিশনের এক কূটনীতিকের কাছে ৪৬৩ জন পাকিস্তানি বা পাকিস্তানি নাগরিক হিসেবে বিবেচিত বন্দির তালিকা হস্তান্তর করেছে। এদের মধ্যে ৩৮২ জন বেসামরিক বন্দি এবং ৮১ জন জেলে।
পাকিস্তানের পক্ষ থেকে জানানো হয়, যেসব পাকিস্তানি বন্দি ও জেলে তাদের সাজা পূর্ণ করেছেন এবং যাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত, তাদের দ্রুত মুক্তি ও প্রত্যাবর্তনের দাবি জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, যেসব বন্দিকে পাকিস্তানি বলে মনে করা হচ্ছে তাদের মধ্যে শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধীরাও রয়েছেন। তাদের নাগরিক পরিচয় নিশ্চিত করতে বিশেষ কনসুলার অ্যাক্সেস চাওয়া হয়েছে।
ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, যেসব পাকিস্তানি বন্দিকে এখনো কনসুলার অ্যাক্সেস দেওয়া হয়নি, তাদের তা দ্রুত দিতে হবে। সেইসঙ্গে ভারতীয় হেফাজতে থাকা পাকিস্তানি বন্দিদের নিরাপত্তা, সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ নিশ্চিত করারও অনুরোধ জানানো হয়েছে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও জানায়, পাকিস্তান সরকার মানবিক বিষয়গুলোকেই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে এবং ভারতীয় কারাগারে থাকা সব পাকিস্তানি বন্দির দ্রুত প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে তার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে।
সূত্র: দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)