রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ফাইল ছবি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘‘চরম অযোগ্যতার’’ কারণেই ভারত ও রাশিয়া পরস্পরের আরও কাছাকাছি চলে এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের সাবেক কর্মকর্তা মাইকেল রুবিন। তিনি বলেছেন, এই কারণে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইতোমধ্যে নয়াদিল্লিকে জ্বালানির ‘‘নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের’’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
রুবিন বলেছেন, ট্রাম্পের বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপে ওয়াশিংটন-নয়াদিল্লি সম্পর্ক বিপরীতমুখী হওয়ায় মার্কিন নাগরিকরা স্তম্ভিত। পেন্টাগনের সাবেক কর্মকর্তার প্রশ্ন, ট্রাম্প কি পাকিস্তানের ‘তোষণ কিংবা ঘুষে’ প্রভাবিত হয়েছেন?
তিনি বলেন, ‘‘ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ককে যেভাবে উল্টে দিয়েছেন, তাতে আমাদের অনেকেই এখনও হতবাক। অনেকেই প্রশ্ন করেন ট্রাম্পকে কী প্রভাবিত করে। হয়তো পাকিস্তানের তোষামোদি। এছাড়া পাকিস্তান কিংবা তাদের সমর্থক তুরস্ক ও কাতারের পক্ষ থেকে ট্রাম্পকে ঘুষের চেষ্টা... এই ভয়াবহ ঘুষই আমেরিকাকে আগামী কয়েক দশক ধরে কৌশলগত ঘাটতির বোঝা বয়ে বেড়াতে বাধ্য করবে।’’
রুবিন বলেন, রুশ তেল কেনা নিয়ে ভারতকে ‘‘শিক্ষা’’ দেওয়ার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই ‘‘কপট আচরণ’’ করছে। কারণ ওয়াশিংটনও মস্কোর সঙ্গে বাণিজ্য করছে। তিনি বলেন, নিজের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দেওয়া নিয়ে ভারতের অবস্থান যথার্থ।
ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পেন্টাগনের এই কর্মকর্তা বলেন, ভারতের জনগণ প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ভারতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্যই নির্বাচন করেছেন। ভারত বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ এবং শিগগিরই তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে। সেই উন্নতির জন্য জ্বালানি দরকার। যুক্তরাষ্ট্রই কপট আচরণ করছে। কারণ আমরাও রাশিয়া থেকে কেনাকাটা করি; সেসব পণ্য ও উপকরণ কিনছি, যেগুলোর বিকল্প বাজার আমাদের নেই। তাই ভারতকে উপদেশ দেওয়া আমাদের কপটতা।
তিনি বলেন, ভারতকে উপদেশ দেওয়ার পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্রের উচিত কম দামে জ্বালানি সরবরাহ করা। যদি সেটা আমাদের পক্ষে সম্ভব না হয়, তাহলে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হলো চুপ থাকা। ভারতের আগে ভারতীয় নিরাপত্তাকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এরই মধ্যে ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। রুশ তেল কেনা অব্যাহত রাখায় গত আগস্টে এই শুল্ক আরোপ করেন তিনি।
গত ৪ ডিসেম্বর ২৩তম ভারত-রাশিয়া বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে ভারতে পৌঁছান রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। জ্বালানি, প্রতিরক্ষা এবং বাণিজ্য-কেন্দ্রিক ওই সম্মেলনে পুতিনকে স্বাগত জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পাশাপাশি ভারতের প্রতি তার অবিচল অঙ্গীকারের জন্যও পুতিনের প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানান তিনি।
মোদির সঙ্গে বৈঠকের পর পুতিন বলেন, রাশিয়া ভারতকে তেল, গ্যাস, কয়লা—ভারতের জ্বালানি উন্নয়নের জন্য যা যা প্রয়োজন—সবই নির্ভরযোগ্যভাবে সরবরাহ করে আসছে। ভারতের দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনীতির জন্য আমরা জ্বালানি সরবরাহ অব্যাহত রাখতে প্রস্তুত।
শুক্রবার রাতে পুতিন তার দিল্লি সফর শেষ করেন। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর তাকে বিদায় জানাতে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)